সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ

সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ
সুইডেনের বাজারে গেলে বোঝার উপায় নেই জিনিসপত্রের অভাব। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, সবকিছু সেখানে পাওয়ার কথা। শীতে যদি আম, কাঁঠাল, জাম খেতে ইচ্ছে হয় সারা দেশ খুঁজলেও নিশ্চয়ই পাবেন না। তবে সুইডেনে এমন কিছু নেই যে পাওয়া যায় না।

যদি প্রশ্ন করি বলুন তো হিন্দু ধর্মে কথিত আছে বারো মাসে তেরো পুজা কোন মাসে নেই পুজা? সুইডেনের ক্ষেত্রে বারো মাসেই সব কিছু পাওয়া যায়। ছোট্ট একটি দেশ যার লোক সংখ্যা মাত্র এক কোটি এবং তার মধ্যে ২০ শতাংশের বেশির ভাগই বিদেশী এবং বিশ্বের সব দেশের মানুষের বাস এখানে। বুজতেই পারছেন কেন সারা জাহানে যা আছে তার সব কিছুই এখানে পাওয়া যায়।

আজ একটি বেগুন কিনলাম, বেগুনটি এসেছে জাপান থেকে। বেগুনটির ওজন ২০০ গ্রাম, দাম ৩০ সুইডিশ ক্রোনার ( ১ ক্রোনা=১০টাকা )। নরমালি বেগুনটির দাম এসময় বড়জোর ২০ ক্রোনার, ইনফ্লেশনের কারণে দাম এখন চড়া। আমি নিজেই সামারে বেগুন উৎপাদন করি, তখন এই ধরনের বেগুনের দাম হবে ১০ ক্রোনার। এখন দেশটি বরফে ঢাকা অতএব কিছুই উৎপাদন করা সম্ভব নয় তারপরও সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে তবে দাম চড়া।

ছোট বেলায় বাংলাদেশে থাকতে কখনও ভাবিনি শীতে কাঁঠাল খেতে হবে, কারণ শীতে যেসব খাবার উৎপাদন হয়েছে সেগুলো খেয়েছি কিন্তু সুইডেনে বিষয়টি অন্যরকম যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করে সেটা তখনই খেতে হবে, এভাবেই দেশটি গড়ে উঠেছে। বিশ্ব ইনফ্লেশনের কারণে সঠিক সময় সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে না পাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে দোকানে লেখা হচ্ছে ১টি পাপড়িকা, ৩টি টমেটো, ২টি শসার বেশি যেন আমরা না কিনি, তাহলে অন্যেরা হয়ত কিছুই পাবে না।

এদিকে জিনিসপত্রের দাম আগুন, ফলে দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও কেউ কিনছে না। কিছুদিন পরে ফ্রেস খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট খাবার যাছাই বাছাই করতে যে খরচ সেটা তোলা সম্ভব নয় বিধায় প্রচুর খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। খাবারের মেয়াদ গায়ে লেখা রয়েছে, মেয়াদ শেষ হলে সেটা বিক্রি করা নিষেধ। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সবাই প্রতিনিয়ত বলছে কেনাকাটা যেন সবাই কম করে, অপচয় যেন না হয়, বেশি অপচয় হলে ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। জনগণ যাতে বিলাসবহুল না হয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ইচ্ছে খুশি মত অর্থলোন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুদের হার প্রতি মাসে বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, বাড়ছে না ইনকাম, বাড়ছে না বেতন। বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থা।

আমার মনে হয় না বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভিন্ন! এত কিছুর পরও চলছে বিশ্বযুদ্ধ, চলছে ব্যাংক ডাকাতি, চলছে অরাজকতা, চলছে বর্বরতা। মনে হচ্ছে পৃথিবী বদলে গেছে কিন্তু না বদলেছি আমরা। করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকে যখন জীবন নাশ করতে শুরু করে তখন আমরা শরীরে এন্টি ভাইরাস ঢুকিয়ে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনি, করোনা ভাইরাস এবং ভ্যাকসিন মিলে আমাদের শরীরে যে সাইড ইফেক্ট দেখা দিয়েছি সেটা হলো মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, এটাকে এখন কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব সেটাই এখন ভাবনা!

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

খেলাপির ফাঁদে ব্যাংক খাত: সমাধান কোন পথে
বাণিজ্যিক বিবেচনায়  ‘সৌরবিদ্যুৎ’ টেকসই এবং অনেক বেশি লাভজনক
কক্সবাজার: বাংলাদেশে অফুরন্ত পর্যটন সুযোগ উন্মোচন
বাংলাদেশে ঈদ উৎসব ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে বন্ধ করতে হবে মানিলন্ডারিং
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে
নেট দুনিয়ার ব্যাংকিং
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক: আন্তরিক সেবার ৪০ বছর
সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ
ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি