ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি

ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম থাকে। গ্রাহকরা নির্দিষ্ট নামেই প্রতিষ্ঠানকে চিনতে পারেন। সুন্দর নাম, সুন্দর ব্র্যান্ডিং এবং উত্তম সেবা গ্রাহকের আস্থা ও ভালবাসা ধরে রাখার অন্যতম উপকরণ। প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে নাম ও ব্র্যান্ডিং সংশোধন এবং পরিবর্তন পরিমার্জন করতে পারে। আইনগত এবং অন্যান্য কারণে ব্যাংকসহ যেকোন প্রতিষ্ঠানেরই এসব পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীকে সংক্ষেপে পিএলসি এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীকে এলটিডি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এই দুই ধরণের প্রতিষ্ঠানের মৌলিক পার্থক্য হলো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার সহজে হস্তান্তরযোগ্য নয়, ব্যক্তিগতভাবে তা ক্রয় বিক্রয় হতে পারে সাধারণ মানুষ এর শেয়ার ধারণ করতে পারেনা। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার সহজে ক্রয় বিক্রয় করা যায় এবং সাধারণ মানুষ এর শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে পারে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের নামের শেষে লিমিটেড শব্দটি ব্যবহার করে। লিমিটেডকে অনেক সময় এলটিডি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ এটি প্রাইভেট কোম্পানী। বিশেষজ্ঞগণ তাই মনে করেন আমাদের দেশের ব্যাংকের নামের সাথে লিমিটেড শব্দ ব্যবহার বহুল প্রচলিত একটি ভুল।

এ ধরণের ভ্রান্তি দূর করতে ২০২০ সালে কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শনাক্ত করতে একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে যে ‘পাবলিক সীমিত দায় কোম্পানি’ শনাক্ত করতে তাদের নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ বা পিএলসি লিখতে হবে।

বাংলাদেশে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ার স্টক একচেঞ্জে কেনাবেচা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে এসব ব্যাংক কোম্পানিকে তাদের নাম পরিবর্তন করে নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোর নামের শেষে লিমিটেডের পরিবর্তে এখন থেকে পিএলসি লিখতে হবে।

পরিপত্রে জানানো হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংক-কোম্পানির নাম ও সংঘস্মারক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে আলাদা করে কোনো আবেদন করতে হবে না। তবে নাম পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে এবং পরিবর্তিত নামের গেজেট প্রকাশের জন্য ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে আবেদন দাখিল করতে হবে।

নামের সাথে পিএলসি যোগ করলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে হবে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ইত্যাদি। ইতোমধ্যেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নামের সাথে পিএলসি যোগ করেছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোরও এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ব্যাংক কোম্পানী আইন অনুসারে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। এ আইনের ধারা অনুসারে কোন ব্যাংক তার নামের পরিবর্তন আনতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সেটা করতে পারে। অতীতে আমাদের দেশের অনেকগুলো ব্যাংক তাদের নাম পরিবর্তন করেছে যেমন: আল-বারাকা থেকে ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে ওরিয়েন্টাল এবং পরে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয়েছে এবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের নাম হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। আরো অনেক ব্যাংক নাম পরিবর্তন করেছে। এসব ব্যাংক বিভিন্ন কারণে নাম পরিবর্তন করেছে। এবারে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে ‘লিমিটেড’ শব্দের পরিবর্তে ‘পিএলসি’ লিখতে হবে।

অনেক সময় কোম্পানী তার ব্র্যান্ড প্রোমোট করার জন্য নাম, লোগো এবং কোম্পানীর টোটাল ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে গ্রাহকদের রুচিরও পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে কোম্পানীর আধুনিকায়নে নেতিবাচক কিছু নেই। তবে গ্রাহকদের রুচি এবং তাদের চাহিদার বিষয় খেয়াল রেখে এসব পরিবর্তন পরিমার্জন করা কোম্পানীর জন্য কল্যাণকর। নামের পরিমার্জন বা ব্র্যান্ডিংয়ের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোম্পানীর সকল ক্ষেত্রে অভিন্নতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় হ য ব র ল অবস্থা হবে। সকল সাইনেজ ও প্রকাশনায় একই ধরনের ব্র্যান্ডিং থাকতে হবে। প্রতিটি পরিবর্তনের সাথে অর্থ ব্যয়ের বিষয় জড়িত রয়েছে। বারবার পরিবর্তন বড় কোম্পানীর জন্য ব্যয়বহুল। প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা বৃদ্ধির জন্য ব্যয় সংকোচনের বিষয়টিও খেয়াল রেখে টেকসই পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা জরুরি। ব্যাংকের নাম পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুরুতে ব্যাংকগুলোকে ইজিএম বা এজিএমের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের অবগত করা প্রয়োজন। নাম পরিবর্তনের সাথে সাথে বিলবোর্ড, চেক বই, জমা বই ও ওয়েবসাইটসহ সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করতে হবে, প্রতিস্থাপন করতে হবে পুরোনোকে। সবমিলিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ রয়েছে ছোট্ট এই পরিবর্তনের জন্য।

গ্রাহকদের মধ্যে যেন প্রতিষ্ঠানের কোন পরিবর্তনের প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রেখে আগে থেকেই বিষয়গুলো তাদের অবহিত করা যেতে পারে। গণমাধ্যমে সংবাদের পাশাপাশি সহজে চোখে পড়ার মতো বিজ্ঞাপন প্রচার ও মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করে গ্রাহকদের অবহিত করা যায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব প্রচারণা চালালে তা বেশি সংখ্যক মানুষের দৃষ্টিগোচর হবে। ব্যাংকের নাম, লোগো ও ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন বা লিমিটেড থেকে পিএলসিতে রূপান্তরে গ্রাহকের কিছুই যায় আসে না। গ্রাহকের চাহিদা উত্তম ব্যাংকিং সেবা। তারা চান জমানো অর্থের নিরাপত্তা। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

রিয়াজ উদ্দিন: লেখক ও ব্যাংকার
ইমেইল : riyazenglish@gmail.com


অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

খেলাপির ফাঁদে ব্যাংক খাত: সমাধান কোন পথে
বাণিজ্যিক বিবেচনায়  ‘সৌরবিদ্যুৎ’ টেকসই এবং অনেক বেশি লাভজনক
কক্সবাজার: বাংলাদেশে অফুরন্ত পর্যটন সুযোগ উন্মোচন
বাংলাদেশে ঈদ উৎসব ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে বন্ধ করতে হবে মানিলন্ডারিং
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে
নেট দুনিয়ার ব্যাংকিং
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক: আন্তরিক সেবার ৪০ বছর
সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ
ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি