Connect with us

মত দ্বিমত

ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি

Published

on

বাজার মূলধন

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম থাকে। গ্রাহকরা নির্দিষ্ট নামেই প্রতিষ্ঠানকে চিনতে পারেন। সুন্দর নাম, সুন্দর ব্র্যান্ডিং এবং উত্তম সেবা গ্রাহকের আস্থা ও ভালবাসা ধরে রাখার অন্যতম উপকরণ। প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে নাম ও ব্র্যান্ডিং সংশোধন এবং পরিবর্তন পরিমার্জন করতে পারে। আইনগত এবং অন্যান্য কারণে ব্যাংকসহ যেকোন প্রতিষ্ঠানেরই এসব পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

অর্থসংবাদের মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীকে সংক্ষেপে পিএলসি এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীকে এলটিডি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এই দুই ধরণের প্রতিষ্ঠানের মৌলিক পার্থক্য হলো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার সহজে হস্তান্তরযোগ্য নয়, ব্যক্তিগতভাবে তা ক্রয় বিক্রয় হতে পারে সাধারণ মানুষ এর শেয়ার ধারণ করতে পারেনা। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার সহজে ক্রয় বিক্রয় করা যায় এবং সাধারণ মানুষ এর শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে পারে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের নামের শেষে লিমিটেড শব্দটি ব্যবহার করে। লিমিটেডকে অনেক সময় এলটিডি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ এটি প্রাইভেট কোম্পানী। বিশেষজ্ঞগণ তাই মনে করেন আমাদের দেশের ব্যাংকের নামের সাথে লিমিটেড শব্দ ব্যবহার বহুল প্রচলিত একটি ভুল।

এ ধরণের ভ্রান্তি দূর করতে ২০২০ সালে কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শনাক্ত করতে একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে যে ‘পাবলিক সীমিত দায় কোম্পানি’ শনাক্ত করতে তাদের নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ বা পিএলসি লিখতে হবে।

বাংলাদেশে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ার স্টক একচেঞ্জে কেনাবেচা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে এসব ব্যাংক কোম্পানিকে তাদের নাম পরিবর্তন করে নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোর নামের শেষে লিমিটেডের পরিবর্তে এখন থেকে পিএলসি লিখতে হবে।

পরিপত্রে জানানো হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংক-কোম্পানির নাম ও সংঘস্মারক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে আলাদা করে কোনো আবেদন করতে হবে না। তবে নাম পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে এবং পরিবর্তিত নামের গেজেট প্রকাশের জন্য ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে আবেদন দাখিল করতে হবে।

নামের সাথে পিএলসি যোগ করলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে হবে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ইত্যাদি। ইতোমধ্যেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নামের সাথে পিএলসি যোগ করেছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোরও এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ব্যাংক কোম্পানী আইন অনুসারে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। এ আইনের ধারা অনুসারে কোন ব্যাংক তার নামের পরিবর্তন আনতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সেটা করতে পারে। অতীতে আমাদের দেশের অনেকগুলো ব্যাংক তাদের নাম পরিবর্তন করেছে যেমন: আল-বারাকা থেকে ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে ওরিয়েন্টাল এবং পরে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয়েছে এবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের নাম হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। আরো অনেক ব্যাংক নাম পরিবর্তন করেছে। এসব ব্যাংক বিভিন্ন কারণে নাম পরিবর্তন করেছে। এবারে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে ‘লিমিটেড’ শব্দের পরিবর্তে ‘পিএলসি’ লিখতে হবে।

অনেক সময় কোম্পানী তার ব্র্যান্ড প্রোমোট করার জন্য নাম, লোগো এবং কোম্পানীর টোটাল ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে গ্রাহকদের রুচিরও পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে কোম্পানীর আধুনিকায়নে নেতিবাচক কিছু নেই। তবে গ্রাহকদের রুচি এবং তাদের চাহিদার বিষয় খেয়াল রেখে এসব পরিবর্তন পরিমার্জন করা কোম্পানীর জন্য কল্যাণকর। নামের পরিমার্জন বা ব্র্যান্ডিংয়ের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোম্পানীর সকল ক্ষেত্রে অভিন্নতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় হ য ব র ল অবস্থা হবে। সকল সাইনেজ ও প্রকাশনায় একই ধরনের ব্র্যান্ডিং থাকতে হবে। প্রতিটি পরিবর্তনের সাথে অর্থ ব্যয়ের বিষয় জড়িত রয়েছে। বারবার পরিবর্তন বড় কোম্পানীর জন্য ব্যয়বহুল। প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা বৃদ্ধির জন্য ব্যয় সংকোচনের বিষয়টিও খেয়াল রেখে টেকসই পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা জরুরি। ব্যাংকের নাম পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুরুতে ব্যাংকগুলোকে ইজিএম বা এজিএমের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের অবগত করা প্রয়োজন। নাম পরিবর্তনের সাথে সাথে বিলবোর্ড, চেক বই, জমা বই ও ওয়েবসাইটসহ সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করতে হবে, প্রতিস্থাপন করতে হবে পুরোনোকে। সবমিলিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ রয়েছে ছোট্ট এই পরিবর্তনের জন্য।

গ্রাহকদের মধ্যে যেন প্রতিষ্ঠানের কোন পরিবর্তনের প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রেখে আগে থেকেই বিষয়গুলো তাদের অবহিত করা যেতে পারে। গণমাধ্যমে সংবাদের পাশাপাশি সহজে চোখে পড়ার মতো বিজ্ঞাপন প্রচার ও মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করে গ্রাহকদের অবহিত করা যায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব প্রচারণা চালালে তা বেশি সংখ্যক মানুষের দৃষ্টিগোচর হবে। ব্যাংকের নাম, লোগো ও ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন বা লিমিটেড থেকে পিএলসিতে রূপান্তরে গ্রাহকের কিছুই যায় আসে না। গ্রাহকের চাহিদা উত্তম ব্যাংকিং সেবা। তারা চান জমানো অর্থের নিরাপত্তা। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

রিয়াজ উদ্দিন: লেখক ও ব্যাংকার
ইমেইল : riyazenglish@gmail.com

অর্থসংবাদ/এসএম

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত

অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে বন্ধ করতে হবে মানিলন্ডারিং

Published

on

বাজার মূলধন

শিকাগোর শীর্ষ মাফিয়া ডন আলফোনসে গ্যাব্রিয়েল কেপন বা আল-কেপনের কথা অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন। ১৯২০ এর দশকে আমেরিকায় মাদক বেচাকেনা নিষিদ্ধকালীন সময়ে তার ছিল মাদকের রমরমা ব্যবসা। পাশাপাশি পতিতালয়সহ অনেকগুলো অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করত সে। এভাবে সে গড়ে তোলে সম্পদের পাহাড়। অবৈধ উৎস থেকে আহরিত এসব কালো টাকা সাদা করার জন্য লন্ড্রী ব্যবসা শুরু করে আল-কেপন। শহরজুড়ে স্থাপন করে বেশ কয়েকটি লন্ড্রী যেন বাস্তবে মনে হয় এখান থেকেই তার সকল আয় আসে। পরবর্তীতে সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধীরে ধীরে তার সকল অপরাধ সামনে চলে আসে। লন্ড্রী ব্যবসার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার এই অভিনব পদ্ধতিকে মানি লন্ডারিং নামে আখ্যায়িত করা হয়।

অর্থসংবাদের মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

কেপনের মতই সারা বিশ্বে অপরাধীরা তাদের অপরাধ থেকে আসা আয় বৈধ দেখাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকে। এ ধরণের অপরাধ প্রতিরোধে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই আইন রয়েছে। বাংলাদেশেও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে ২০০২ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। ২০১২ সালে পূর্বের আইনটি বাতিল করে নতুন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয় যা ২০১৫ সালে আংশিক সংশোধন করা হয়েছে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২৭ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অপরাধের মধ্য রয়েছে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, মুদ্র জাল করা, দলিল পত্র জাল করা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, অবৈধ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা, অপহরণ, অবৈধভাবে আটক রাখা, খুন ও মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি, নারী ও শিশু পাচার, চোরাকারবারি, দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার, চুরি–ডাকাতি দস্যুতা-জলদস্যুতা বা বিমানে দস্যুতা।

এ সংক্রান্ত অপরাধের মধ্যে আরও রয়েছে মানব পাচারের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, যৌতুকের অর্থ, চোরাচালান ও শুল্কসংক্রান্ত অপরাধ, করসংক্রান্ত অপরাধ, মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন, ভেজাল বা স্বত্ব লঙ্ঘন করে পণ্য উৎপাদন, পরিবেশগত অপরাধ, যৌন নিপীড়ন, পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের আগে তথ্য কাজে লাগিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় এবং সংঘবদ্ধ কোনো অপরাধী দলে অংশ নেওয়া।

এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৪ থেকে ১২ বছরের কারাদন্ড ও এর পাশাপাশি মানিলন্ডারিংকৃত অর্থের দ্বিগুণ অথবা ১০ লক্ষ টাকা যেটা বেশি এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল এবং মানিলন্ডারিংকৃত অর্থের দ্বিগুণ অথবা ২০ লক্ষ টাকা যেটা বেশি সে পরিমাণ জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া আদালত অপরাধে জড়িত সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট না করলে আইন অনুযায়ী অনূন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে অনুর্ধ ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। অধিকন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হতে পারে।

এ আইন অনুযায়ী, বৈধ অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে অর্থ-সম্পত্তি প্রেরণ বা পাচার কিংবা দেশের বাইরে উপার্জিত সম্পত্তি, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে, তা ফেরত না আনা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশে অর্জিত অর্থ বা প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অর্থ পাচারের নানামুখী উৎসের মধ্যে রয়েছে বিদেশে বিনিয়োগের আড়ালে অর্থ পাচার, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার, মানব পাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কায় রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকেন। এছাড়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর ট্রান্সফার মিসপ্রাইসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সম্ভাবনা থাকে।

অপরাধীরা তাদের টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পাদন করার চেষ্টা করে থাকে। ব্যাংকিং চ্যানেলে যেন মানিলন্ডারিং সংঘটিত হতে না পারে সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেয়া নিয়ম কানুন অনুসরণ করে নিয়মিত রিপোর্ট করে থাকে।

সন্দেহজনক লেনদেন হলে সাথে সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করার নিয়ম রয়েছে। আইন অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ সংক্রান্ত অপরাধের তদন্ত করতে পারবে।

অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় প্রবেশ করাতে প্রথম পর্যায়ে তা ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়। এরপর ছোটছোট বিভিন্ন লেনদেনের মাধ্যমে ঐ টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। তৃতীয় ধাপে আপাত দৃষ্টিতে বৈধ মনে হওয়া ঐ অর্থ বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করা হয়। এভাবে কালো টাকা সাদা করে মানিলন্ডারিং করে থাকে অপরাধীরা।

সরকারের কর ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার লক্ষ্যে মানিলন্ডারিং করে থাকে অনেকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট ব্যবসায় ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়। দেশে কি পরিমাণ মানিলন্ডারিং হয় তার কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে দেশে এমন অনেক অফিস রয়েছে যেখানে ঘুষ ছাড়া ফাইল সই করা হয় না। অন্যান্য সম্পৃক্ত অপরাধের তালিকা ধরে হিসাব কষলে মানিলন্ডারিংয়ের অংক মিলানো কঠিন হয়ে পড়বে। তবে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এছাড়া অন্যান্য উপায়ে দেশ থেকে প্রতি বছর এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে থাকে।

মানিলন্ডারিংয়ের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতির মাধ্যমে সামিগ্রকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে বিনিয়োগ করা সম্ভব হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রকৃত উৎপাদন অনেক বেড়ে যেত, সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখা যেত দ্রব্যমূল্য, নিশ্চত হতো টেকসই উন্নয়ন, তরান্বিত হতো প্রকৃত উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন।

মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশ থেকে বিপুল অর্থ বাইরে চলে গেলেও অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। স্বল্প সংখ্যক ঘটনায় মামলা হলেও মামলার বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তা এক সময় সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা ও অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে তা জনসম্মুখে আনার ব্যবস্থা করলে দেশে মানিলন্ডারিংয়ের সাথে সাথে অনেক বড় বড় অপরাধ কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

মানিলন্ডারিংয়ের মত অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ধরণের অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা দেখা গেলে তা আগে থেকেই প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে সবাইকে। বাড়াতে হবে সততার চর্চা ও সৎভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা।

লেখক: ব্যাংকার

ই-মেইল: riyazenglish@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

প্রবাস

ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে

Published

on

বাজার মূলধন

যারা নীতি নির্ধারক হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকেছেন তাদের কাজ মূলত নীতিমালা তৈরি করা। তারা নিজ থেকে দেশের এত বড় একটা গুরুদায়িত্ব পালন করতে সংসদ ভবন দখল করেছেন। বর্তমানে সেই সংসদে বিরোধী দল নেই আছে শুধু একাকীত্ব। বিরোধী দলের নেত্রী কখন জেলে গেলেন, কখন বের হলেন, কবে মামলার শুনানি হবে আর কবে হাসপাতালে চেকআপ করবেন এই খবর ছাড়া অন্য কিছু আমি শুনিনা বা জানিনা। অথচ ৩৫০ জন নীতি নির্ধারকসহ তাদের সহযোগী আমলারা রয়েছেন যারা শপথের বাণী পড়ে নীতিমালা তৈরি এবং তার প্রতিফলন ঘটাবেন বলে ওয়াদা করেছেন কিন্তু হচ্ছে কি সেই কাজগুলো সঠিকভাবে? সংসদ ভবন আছে নেই শুধু সৃজনশীল নীতিমালা!

অর্থসংবাদের মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

মাত্র দুটি বিষয় তুলে ধরি তাহলে বুঝতে সহজ হবে কেন আমি হঠাৎ এমন একটি মন্তব্য করলাম।

আচ্ছা ভাবুন তো দেশের এই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের কথা! প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকতে হবে, আছে কি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ বাধ্যতামূলক থাকতে হবে, আছে কি? আবাসিক এলাকাতে পার্ক থাকলেও সেখানে মানুষ কি করে? হাঁটাহাটি করে, সেটাও প্রয়োজন। তা নাহলে আপনি হাঁটবেন কোথায়? বাচ্চারা কি সেখানে খেলতে পারে? না। তারা দেখা যায় রাস্তার মধ্যে ক্রিকেট খেলে।

দেশের শহরগুলোকে শুধু ইট, কাঠ, পাথরের বস্তি না বানিয়ে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা দরকার নয় কি?দেশের সবার মাথায় একটিই ভাবনা ছেলে মেয়েকে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে। ছেলে বা মেয়ে বিজ্ঞান পড়তে চায় না কিন্তু অভিভাবক তাকে বাধ্য করেছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। ফলাফল রেজাল্ট খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট কিন্তু ডাক্তারি পড়তে চায় না। বাবা মা পড়াবেনই। এরকম ঘটনা ঘরে ঘরে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। যে পড়বে তার ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মানেই সফল জীবন নয়। এটা মাথায় নিতে হবে। আপনার বাচ্চা আপনি তাকে পৃথিবীতে এনেছেন ঠিকই কিন্তু তাকে যা খুশি তাই করতে চেষ্টা করার আগে অগত্যা ভাবুন সে নিজেই একটা আলাদা মানুষ। যা জোড়ালো হতে থাকে বয়:সন্ধিতে। এটা জেনে বুঝেও নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে তার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েন না। কিশোরীদের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের এই সময়টা সত্যিই এই শহরগুলোতে কষ্টদায়ক। নিরাপত্তার অভাবে একা কোথাও যেতে পারে না। ফলে মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা চিন্তার বিষয়, বিভিন্নভাবে প্রলোভিত হচ্ছে ওইটুকুন একটা যন্ত্রের মাধ্যমে। তাদেরও প্রয়োজন মুক্ত বাতাস যেখানে সে নির্ভয়ে বেড়ে উঠবে। না হলে শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে।

যাইহোক, এসব চিন্তাগুলো শুধু বাবা-মার না এসব চিন্তাগুলো সংসদ সদস্যদের এবং আমলাদেরও হওয়া উচিত। শুধু শহর নয় সারা দেশের আনাচে কানাচে রয়েছে লাখো লাখো নতুন প্রজন্ম তাদের কথা ভাবুন! কে জানে দেখবেন, হঠাৎ পৃথিবী সেরা অলরাউন্ডার আমরাই পেয়েছি। এমনটি কিন্তু হতে পারে। আমরা আশা নিয়েই বাঁচি এবং বেঁচে আছি।

এটা গেল একটি বিষয়। এবার আসি আরেকটি বিষয় নিয়ে।

চল্লিশ বছর কাজ করতে এবং কাজ করাতে নিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে চাকুরিরত কোন কর্মচারিকে ওএসডি করে রাখা হয় শুনিনি। এমনকি চাকুরির ক্ষেত্রে এ যুগে ওএসডি শব্দটি যে ব্যবহৃত হয় তা কেবল বাংলাদেশেই চলমান। তবে ওএসডি শব্দটি মূলত একটি অন-স্ক্রিন ডিসপ্লে (OSD) বা একটি কন্ট্রোল প্যানেল যা একটি কম্পিউটার মনিটর, মোবাইল ডিভাইস, টেলিভিশন স্ক্রীন বা অন্য একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ডিসপ্লেতে তৈরি করা হয় এবং যা ব্যবহারকারীদের দেখার বিকল্পগুলো নির্বাচন করতে এবং/অথবা ডিসপ্লের উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্য করতে সক্ষম করে। যেমন উজ্জ্বলতা, বৈসাদৃশ্য, এবং অনুভূমিক ও উল্লম্ব অবস্থান ইত্যাদি। তবে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) অনুশীলনটি ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কালের একটি প্রথা যা ১৯৩১ সালের দিকে চালু ছিল যেমন যখন একজন কর্মকর্তা তার নিয়োগের মাধ্যমে সরকারকে তার নিয়োগে ব্যয় করার চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা দিত আর যখন বৃহত্তর কল্যাণের জন্য সরকারের উপর একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করত।

এটি কখনো কখনো ভবিষ্যতে উচ্চস্তরের নিয়োগের জন্য একটি প্রশিক্ষণ পর্যায় হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তবে দায়িত্ব অদৃশ্য হয়ে গেলে নিয়োগকর্তা কি একজন কর্মচারীকে পুনঃনিয়োগ করতে পারতেন বা শর্তগুলি কি আগের মতোই থাকত এবং পেশ করার মতো কোনো কাজ না থাকলে কী করত? এমতবস্থায় কর্মিকে একজন স্পেশাল ডিউটির অফিসার হিসাবে নিয়োগ দিতেন।তৎকালীন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে এ ধরনের নিয়ম ছিল।

আর আমাদের দেশে ওএসডি বলতে বোঝায় একজন কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে। এটি জানা মতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। তবে হতে পারে সীমিত সময়ের জন্য কেউ পোস্টিং অর্ডারের অপেক্ষায় আছে সেক্ষেত্রে এই কর্মকর্তারা সচিবালয়ে রিপোর্ট করেন এবং সেখানে তারা তাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করা ছাড়া কিছুই করেন না।

অন্যান্য দেশে ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি শব্দটির যে অর্থ, বাংলাদেশে সে অর্থ বহন করে না। সেসব দেশের জনপ্রশাসনে কিছু কর্মকর্তার ওপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়; যাঁরা অন্য কর্মকর্তাদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। সরকারের প্রয়োজনে তাঁদের ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। আবার দায়িত্ব শেষে আগের পদে ফিরিয়ে আনা হয় যাকে বলা হয় ডেপুটেশন।

বাংলাদেশে ওএসডি কর্মকর্তা অর্থটি অত্যন্ত নিন্দাবাচক হয়ে পড়েছে। একজন অফিসারকে ওএসডি হিসেবে মনোনীত করা হলে এটি একটি কলঙ্ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এতে বোঝায় যে কর্মকর্তার জন্য সরকারের কোনো উপযুক্ত পদ নেই বা তাদের পরিষেবার আর প্রয়োজন নেই। তারপরও তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ঠিকই তবে সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে শুয়ে বসে। এতে জনকল্যাণ বা আদৌ কোনো কল্যাণ হয় কি?

আমাদের সুইডেনে অনেক সময় আমরা যদি কর্মচারীর কাজে খুশি না হই বা যদি তার অন্যান্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন তাকে পুনঃনিয়োগ (omplacering) করি। যদি বা যখন কোনো উপায় না থাকে তখন কর্মস্থল থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু বাসায় বসিয়ে জামাই আদরে ওএসডি করে রাখা হয়, কখনও শুনিনি। বৃটিশ বা পাকিস্তানী নিয়ম কানুনই যদি দেশে চলবে তাহলে কী দরকার ছিল তাদের তাড়ানোর? বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে শুধু চোরগুলো রেখে গেছে।

এখন দেখছি তাদের আইনকানুনও রেখে গেছে। আমি যতটুকু জানি যুগ যুগ ধরে এই ধরনের ওএসডিধারীরা সকল সুবিধা ভোগ করছে শুধু কাজ করছে না এ ধরনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশে হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। সরকার বা রাষ্ট্র কীভাবে এত বছরেও এর রহস্য উদ্ধার করতে পারছে না? তবে আমার জানা মতে সরকার নিজেই এর জন্য দায়ী যেমন প্রতিবারই সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে একদল কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে যান আর পূর্ববর্তী সরকারের আমলের ওএসডিরা উচ্চতর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। জনপ্রশাসনের এ দুরারোগ্য রোগটি দূর করা না গেলে জনপ্রশাসন নির্ভয়েকাজ করতে পারবে না। এ ধরনের দলীয়করণের ফলে অনেক সময় নিরীহ ও মেধাবী কর্মকর্তারা পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হন। তারপর অনেকে দলকে কাজে লাগিয়ে আবার অনেকে সাতে-পাঁচে না থাকলেও স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের গায়ে বিশেষ দলের রং জুড়ে দিয়ে কোণঠাসা করে রাখে। ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে এ রকম দক্ষ ও নিরীহ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়।

বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী কর্মকর্তারাই নিয়োগ পান। যাচাই-বাছাইও কম হয় না। সেখানে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নয়। কিন্তু এ পরীক্ষা-প্রক্রিয়ায়ও গলদ রয়ে গেছে। অনেক সময় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় থেকেই দলীয় লোকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা দেখা যায়। এটা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আর বাস্তবতা হলো নিয়োগ-প্রক্রিয়া থেকেই দলীয়করণের শুরু। যদিও খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তাই এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ পান, কিন্তু এর পরিণাম ভোগ করতে হয় অন্যদেরও। নতুন সরকার এসে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং আবার জোরেশোরে তাদের দলীয় সমর্থকদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে তৎপর হয়।জনপ্রশাসনের এ অসুস্থ ধারা ভাঙতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা সরকারেরই কর্তব্য। তা না হলে প্রজাতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে না।

যে দেশে একজন মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে, রোগীকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে দিতে পারছে না হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকার কারণে, শেষে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু বরণ করছে সে দেশে কীভাবে ওএসডি প্রথা চলমান? খুব জানতে ইচ্ছা করে!জাগো বাংলাদেশ জাগো, নতুন করে ভাবো।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নেট দুনিয়ার ব্যাংকিং

Published

on

বাজার মূলধন

বর্তমান সময় হলো তথ্য প্রযুক্তির যুগ। পৃথিবীর এক প্রান্থে বসে অপর প্রান্থের খোজঁ-খবর নেওয়া এখন সহজ ব্যাপার। এমনও এক সময় ছিল যখন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির এই অগ্রগামিতা আমাদের জীবনযাত্রায় গতি এনে দিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এ সময়ে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। আধুনিক প্রযুক্তির ধারা পাল্টে দিয়েছে মানুষের গতানুগতিক ধারণা। ব্যাংক খাতে এসেছে বাস্তবমুখী অভূতপূর্ব পরিবর্তন। ফলে এখন দেশ-বিদেশের সব ব্যাংকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও চোখে পড়বে না সেই মান্দাতা আমলের জমানো কাগজের স্তূপ। নেই টাকা জমা কিংবা উত্তোলনের সেই দীর্ঘ সারি। এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও ভিসা কার্ডসহ ঘরে বসে মোবাইলে লেনদেন ব্যাংকিং শিল্পে এক অনন্য মাত্রা যুক্ত করেছে।

অর্থসংবাদের মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

কার্ডবিহীন লেনদেনের অবারিত সুযোগ ব্যাংকিং খাতকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। এসব সুবিধার ফলে ব্যাংকিং সেবা গ্রাহকের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। সুতরাং এখন বলাই যায় ব্যাংকের গ্রাহক নয়, সেবাই গ্রাহকমুখী। এমনকি সত্যিই গ্রাহকের হাতের ডগায় ব্যাংকিং সেবা চলে যাওয়ার ফলে বর্তমানে ব্যাংকের আঙিনায় আনাগোনা কমেছে।

মধ্যযুগে রেনেসাঁর একদম শুরুর দিকে ইতালির বিভিন্ন ধনী শহরগুলোতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সূচনা ঘটে। ইংরেজি “ব্যাংক” শব্দটি নেওয়া হয়েছে ফরাসি শব্দ “ব্যাংকু” থেকে, যেটি এসেছে মূলত রোমান শব্দ “ব্যাংকা” থেকে, যার অর্থ টেবিল। এই ব্যাংকা শব্দটির উদ্ভূত আবার প্রাচীন জার্মান ব্যাংক থেকে, যার মানে বেঞ্চ বা কাউন্টার। রেনেসাঁর সময়ে ফ্লোরেনটাইন ব্যাংকারদের বেঞ্চগুলো অস্থায়ী ডেস্ক বা বিনিময় কাউন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

বর্তমান তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্বে এই প্রেক্ষাপট পরিপূর্ণরুপে পরিবর্তন হয়ে গেছে। নেটিজেনদের কাছে এখন ব্যাংকিং মানে কলমের খোঁচা নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরে বসেই ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করা। ১৪ শতকের দিকে ফ্লোরেন্স জুড়ে ব্যাঙ্কিংয়ের আধিপত্য বিস্তার করে বার্দি এবং পেরুজি নামক রাজকীয় পরিবার দুটি। পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য জায়গাগুলোতেও তাদের একাধিক শাখা স্থাপিত হতে থাকে। এ সময় ব্যাপক হারে জনসাধারণকে ঋণ দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের কার্যক্রমগুলো ঘটতে থাকে। অবশ্য রোমান সাম্রাজ্য পতনের মধ্যে দিয়ে পুরো ব্যবস্থাটিই ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় ১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে চীনের ঝাউ রাজবংশের শাসনামলে ব্রোঞ্জের তৈরি মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। এর আগে কাউরি বা ঝিনুকের খোল দিয়ে মুদ্রা বানানো হতো। এগুলো প্রকৃতিতে খুব সহজলভ্য ছিল বিধায় বিকল্প হিসেবে ব্রোঞ্জে খোদাই করা মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়।

খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার লিডিয়া রাজ্যে উদ্ভাবিত হয়েছিল ডিস্ক-আকৃতির, স্বর্ণ, রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ নির্মিত মুদ্রা। নকল থেকে আসল মুদ্রা আলাদা করতে এগুলোর উভয় পাশে খোদাই করা হতো দেবতাদের বা সে সময়কার রাজাদের প্রতিকৃতি। পরবর্তী শতাব্দীতে এগুলো গ্রিস অব্দি ছড়িয়ে পড়েছে। এই মুদ্রা থেকেই বর্তমান সময়ের সমস্ত আধুনিক মুদ্রা এসেছে। স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ব্যাপকতা লাভ করে ৬৫০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে। এ সময় খোদাইকৃত মুদ্রা দিয়ে সেনাবাহিনীর পারিশ্রমিক দেয়া হতো। মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণ প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আধুনিক তুরস্কের প্রাচীন রাজ্য লিডিয়ায়। ইলেক্ট্রাম নামে পরিচিত রূপা ও সোনার একটি সংকর ধাতু ব্যবহার করা হতো মুদ্রাটি তৈরি করতে। সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে প্রতিটি গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে এবং গ্রাহকদের আকর্ষণ ধরে রাখার মূলমন্ত্র হিসেবে উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ব্যাংকিং সেবা পৃথিবীকে উন্নত করেছে। আর গ্রাহকের চাহিদার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আদান-প্রদান বা ই-ব্যাংকিংয়ের দ্রুত বিকাশ ঘটিয়েছে।

উন্নত দেশের মতো আমাদের ব্যাংকগুলোও শাখা-সংক্রান্ত বাধা তুলে দিয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে গ্রাহকদের অভ্যস্ত করা হচ্ছে। আর ব্যাংকিং খাতকে আরও নিরাপদ, সহজ ও গ্রাহকবান্ধব করতে ডিজিটাল ব্যাংকিং গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যে প্রযুক্তির নতুন বন্ধনের সংযোগ সৃষ্টি করেছে। আর এ ডিজিটাল বন্ধনেই হবে আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার অন্যতম শক্তি।

লেখক: ব্যাংকার

অর্থসংবাদ/এসএম

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক: আন্তরিক সেবার ৪০ বছর

Published

on

বাজার মূলধন

আজ ৩০ মার্চ। ১৯৮৩ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত শরীআহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ৪০ বছর অতিক্রম করছে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যাংক । সুদের অভিশাপ থেকে মুক্তি, আর্থিক বন্টনমূলক সুবিচার ও সামাজিক কল্যাণমূখী অর্থনীতি গড়া ছিল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য। দেশীয় উদ্যোক্তা ও বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংক ইসলামী শরীআহর ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

অর্থসংবাদের মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

ইসলামী ব্যাংক একের পর এক নতুন সাফল্য নিয়ে আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, শিল্পায়ন, এসএমই বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য সাফল্যের মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অন্যতম বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান।

দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও বিনিয়োগের প্রায় ১০ শতাংশ, বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশ এককভাবে এ ব্যাংক পরিচালনা করছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রায় ২২ শতাংশ এ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসে। এ ব্যাংকের হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, গড়ে উঠেছে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। দেশের ৬ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে, কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষের। বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম দুই স্তম্ভ তৈরি পোশাক শিল্প ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ইসলামী ব্যাংকের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে।

বিগত ৪০ বছরে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণের জন্য ইসলামী ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও সিঙ্গাপুরে ৩১ জন প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্বের ৫৯৪ টি ব্যাংকের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ১৫৫ প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে।

প্রবাসীদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আগে টাকা পাঠানোর সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত উপায় না পেয়ে প্রবাসীগণ অবৈধ উপায় গ্রহণ করতো। ইসলামী ব্যাংক নিয়মিত বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করে। যার সুফল ভোগ করছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে আসছে নিরাপদে। বিনিয়োগ হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতে।

ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনী-পেশা নির্বিশেষে সব মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অনন্য প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষে। গ্রাহকদের অবিচল আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার ফলেই ইসলামী ব্যাংক আজকের এই অবস্থানে।

ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে অধিক সংখ্যক মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োয় কার্যক্রমকে এ ব্যাংক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। মানুষের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন পণ্যে ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ প্রদান করে না। বিলাসদ্রব্যের চেয়ে এ ব্যাংক মৌলিক প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনিয়োগ পরিচালনা করে। সর্বসাধারণের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করেই ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ করে থাকে।

ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সালে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় গঠন, বিভিন্ন আয়-উৎসারী কর্মকান্ডে বিনিয়োগ কার্যক্রম রয়েছে। শহর এলাকার বস্তিবাসীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০১২ সাল থেকে “নগর দরিদ্র উন্নয়ন প্রকল্প” কাজ করছে। ৩১ হাজার গ্রামে বিস্তৃত এ প্রকল্পের সদস্য ১৬ লক্ষ। যার ৯৪ শতাংশই নারী।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেশের মোট স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের ২১% এখন ইসলামী ব্যাংকের। হজ সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, ক্যাশ ওয়াক্ফ অ্যাকাউন্ট, কারখানা শ্রমিক হিসাবসহ নানা সঞ্চয় হিসাবের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনেছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে ৩৯৪টি শাখা, ২২৯টি উপশাখা, ২৭০০টি এজেন্ট আউটলেট, ২৫০০টি এটিএম/সিআরএম বুথের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে।

ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম নিজস্ব সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত। ব্যাংকের কোর ই-আইবিএস সফটওয়্যার এই ব্যাংকের তরুণ প্রকৌশলীদের দ্বারা নির্মিত। ইসলামী ব্যাংক তার গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বিকল্প ব্যাংকিং চ্যানেল, ই-কমার্স ইত্যাদি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বাড়াচ্ছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকগণ সকল লেনদেন করতে পারেন সহজেই।

ইসলামী ব্যাংকিং মূলত একটি সামাজিক দায়বদ্ধ উদ্যোগ। গরিব, দুস্থ, অসহায় মানুষের কল্যাণে ১৯৮৪ সালে ‘‘সাদাকাহ ফান্ড’’ গঠিত হয়। পরে ব্যাপকভিত্তিক কাজের জন্য ‘‘ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন’’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার অধীনে ১৯ টি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং ইনস্টিটিউট সহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন অগনিত মানুষ। সকল মানুষের কাছেই পৌছে যাচ্ছে ইসলাম ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা।

ইসলামী ব্যাংকের সফলতার অন্যতম নিয়ামক হলো এ ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা। ইসলামী ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনা পরিষদ ও নিবেদিত জনশক্তির পাশাপাশি গ্রাহকদের অকুন্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন, সকল রেগুলেটরি অথরিটির পরামর্শ ও সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছে।

এ ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে অনেক অনিশ্চয়তা, অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালে একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ইসলামী ব্যাংক তাত্ত্বিক যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে, এখন পরিচালনগত যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।’ বিগত ৪০ বছরের পথচলায় নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ ব্যাংক সামনে এগিয়ে চলেছে। ইসলামী ব্যাংকিং এখন সফল বাস্তবতা। ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা এ ব্যাংককে নিজেদের সন্তানের মতই ভালবাসেন। তারা ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। অনেক গ্রাহকের কাছে ইসলামী ব্যাংকিং অক্সিজেনের প্রবাহের মতই অনুভূত হয়।

ইসলামী ব্যাংকের অনুসরণে মোট ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরীআহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৪ টি ব্যাংক ২ হাজারের অধিক ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি ইসলামী ব্যাংকের সফলতারই অংশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে এখনো কিছু ভুল ধারণা ও বিরূপ প্রচার প্রচারণা রয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক নিয়ে যেসব বিরূপ প্রচারণা চোখে পড়েছে তার উত্তরে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় বলা হয়েছে ব্যাংকের সকল কার্যক্রম সঠিক নিয়মে চলছে।

ইসলামী ব্যাংকের আমানত-বিনিয়োগ-বৈদেশিক বাণিজ্য-রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স কার্যক্রম সহ সকল কার্যক্রমে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। সূর্যেরআলো, চাদের কিরণ, বাতাস ও পানি যেমন সকল মানুষের জন্য ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমূখী সেবাও ঠিক তেমনি সকল মানুষের জন্য। তাই ইসলামী ব্যাংক তার অনবদ্য সেবার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। সকল মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এ ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণধর্মী কার্যক্রমের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরো মজবুত করতে ইসলামী ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রাকে বেগবান করার দায়িত্ব এখন সরকারসহ দেশের প্রতিটি নাগরিকের। ২ কোটি গ্রাহকের আস্থার এই ব্যাংক তার গতিতে এগিয়ে যাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ

Published

on

বাজার মূলধন

সুইডেনের বাজারে গেলে বোঝার উপায় নেই জিনিসপত্রের অভাব। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, সবকিছু সেখানে পাওয়ার কথা। শীতে যদি আম, কাঁঠাল, জাম খেতে ইচ্ছে হয় সারা দেশ খুঁজলেও নিশ্চয়ই পাবেন না। তবে সুইডেনে এমন কিছু নেই যে পাওয়া যায় না।

অর্থসংবাদের মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

যদি প্রশ্ন করি বলুন তো হিন্দু ধর্মে কথিত আছে বারো মাসে তেরো পুজা কোন মাসে নেই পুজা? সুইডেনের ক্ষেত্রে বারো মাসেই সব কিছু পাওয়া যায়। ছোট্ট একটি দেশ যার লোক সংখ্যা মাত্র এক কোটি এবং তার মধ্যে ২০ শতাংশের বেশির ভাগই বিদেশী এবং বিশ্বের সব দেশের মানুষের বাস এখানে। বুজতেই পারছেন কেন সারা জাহানে যা আছে তার সব কিছুই এখানে পাওয়া যায়।

আজ একটি বেগুন কিনলাম, বেগুনটি এসেছে জাপান থেকে। বেগুনটির ওজন ২০০ গ্রাম, দাম ৩০ সুইডিশ ক্রোনার ( ১ ক্রোনা=১০টাকা )। নরমালি বেগুনটির দাম এসময় বড়জোর ২০ ক্রোনার, ইনফ্লেশনের কারণে দাম এখন চড়া। আমি নিজেই সামারে বেগুন উৎপাদন করি, তখন এই ধরনের বেগুনের দাম হবে ১০ ক্রোনার। এখন দেশটি বরফে ঢাকা অতএব কিছুই উৎপাদন করা সম্ভব নয় তারপরও সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে তবে দাম চড়া।

ছোট বেলায় বাংলাদেশে থাকতে কখনও ভাবিনি শীতে কাঁঠাল খেতে হবে, কারণ শীতে যেসব খাবার উৎপাদন হয়েছে সেগুলো খেয়েছি কিন্তু সুইডেনে বিষয়টি অন্যরকম যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করে সেটা তখনই খেতে হবে, এভাবেই দেশটি গড়ে উঠেছে। বিশ্ব ইনফ্লেশনের কারণে সঠিক সময় সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে না পাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে দোকানে লেখা হচ্ছে ১টি পাপড়িকা, ৩টি টমেটো, ২টি শসার বেশি যেন আমরা না কিনি, তাহলে অন্যেরা হয়ত কিছুই পাবে না।

এদিকে জিনিসপত্রের দাম আগুন, ফলে দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও কেউ কিনছে না। কিছুদিন পরে ফ্রেস খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট খাবার যাছাই বাছাই করতে যে খরচ সেটা তোলা সম্ভব নয় বিধায় প্রচুর খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। খাবারের মেয়াদ গায়ে লেখা রয়েছে, মেয়াদ শেষ হলে সেটা বিক্রি করা নিষেধ। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সবাই প্রতিনিয়ত বলছে কেনাকাটা যেন সবাই কম করে, অপচয় যেন না হয়, বেশি অপচয় হলে ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। জনগণ যাতে বিলাসবহুল না হয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ইচ্ছে খুশি মত অর্থলোন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুদের হার প্রতি মাসে বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, বাড়ছে না ইনকাম, বাড়ছে না বেতন। বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থা।

আমার মনে হয় না বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভিন্ন! এত কিছুর পরও চলছে বিশ্বযুদ্ধ, চলছে ব্যাংক ডাকাতি, চলছে অরাজকতা, চলছে বর্বরতা। মনে হচ্ছে পৃথিবী বদলে গেছে কিন্তু না বদলেছি আমরা। করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকে যখন জীবন নাশ করতে শুরু করে তখন আমরা শরীরে এন্টি ভাইরাস ঢুকিয়ে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনি, করোনা ভাইরাস এবং ভ্যাকসিন মিলে আমাদের শরীরে যে সাইড ইফেক্ট দেখা দিয়েছি সেটা হলো মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, এটাকে এখন কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব সেটাই এখন ভাবনা!

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

অর্থসংবাদ/এসএম

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন
Advertisement
Advertisement
June 2023
SMTWTFS
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930