শিল্প-বাণিজ্য
বাংলাদেশের জন্য আলাদা সুবিধা নিয়ে আসছে আলিবাবা

চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা বাংলাদেশের আরও কোম্পানিকে তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির সুযোগ দিতে চায়। এ জন্য আলিবাবা একটি নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করেছে এবং বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা চাইলে এই ফি পরিশোধের মাধ্যমে ওই প্ল্যাটফর্মে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত নিকেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ বাংলাদেশ থেকে আলিবাবা আরও বেশি ব্যবসা চাইছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে এমন একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আলিবাবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর জোর দিচ্ছে। নিকেই আলিবাবার পেশ করা ওই প্রস্তাব দেখেছে।
বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি আলিবাবার দেওয়া এই সেবা গ্রহণ করলে তা ওয়েবসাইটটিকে জোরদার করবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া বাংলাদেশ রপ্তানি আয় বাড়াতে আরও একটি পথ খুঁজে পাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সায়েদ আলী বলেন, ‘আলিবাবা বাংলাদেশের এসএমই পণ্যের প্রসারে আমাদের সাহায্য করতে চায় এবং এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। আমরা ওই প্রস্তাবের কপি বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী সমিতির কাছে পাঠিয়েছি তাদের মতামতের জন্য।’
দুই দশক ধরে পৃথিবীর অন্যতম বড় ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে মাত্র ১৬০টির মতো কোম্পানি তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করছে। পাকিস্তান ও ভারতের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা তিন হাজারের মতো।

আলিবাবা তাদের প্রস্তাবকে ‘বিশেষ প্যাকেজ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন তালিকাভুক্ত সরবরাহকারীদের সংখ্যা যদি ৩০টির বেশি হয়, তাহলে প্রত্যেককে বার্ষিক সদস্য ফি হিসেবে পাঁচ হাজার ডলার দিতে হবে। আর সরবরাহকারীর সংখ্যা ৫০টির বেশি হলে ফি হবে ৪ হাজার ৮০০ ডলার।
তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই ফির পরিমাণকে ‘অত্যন্ত বেশি’ বর্ণনা করেছে আগ্রহী কোম্পানিগুলো। ওই বৈঠকের কাগজপত্র নিকেই এশিয়া দেখেছে, যাতে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ফি কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছে।
আলিবাবা প্রস্তাব দিয়েছে যে তাদের ওয়েবসাইটে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশে তৈরি শীর্ষক একটি আলাদা পেজ থাকবে, যাতে দেশটির পণ্য সেখানে প্রদর্শন করা যায়। আলিবাবা বলছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ‘অপ্রচলতি রপ্তানি বাজারে দ্রুত প্রবেশ করতে পারবে’।
তারা আরও বলেছে, তাদের প্রস্তাব বাংলাদেশকে ‘পোশাক উৎপাদন এবং এর উৎস হিসেবে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, খুচরা বিক্রেতা ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের জন্য বিশ্বে এক নম্বর’ অবস্থান পেতে সাহায্য করবে। আলিবাবার একজন প্রতিনিধি নিকেই এশিয়াকে ই–মেইলে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করার ‘বড় ধরনের সম্ভাবনা’ দেখছেন।
বার্ষিক ফি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া বৈঠকে অনেক এসএমই প্রতিনিধি আলিবাবার প্রস্তাবকে মোটামুটি স্বাগত জানিয়েছেন। প্রায় ২০ জনের মতো প্রতিনিধি ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মির্জা নূরুল গনি বলেন, ‘আলিবাবা একটি নামজাদা সাইট। তারা যদি বাংলাদেশের পণ্যের জন্য একটি আলাদা পেজ তৈরি করে, তাহলে আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিপুলভাবে উপকৃত হবেন।’
বাংলাদেশে এখন কতগুলো এসএমই আছে সে সম্পর্কে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১৩ সালের জাতীয় একটি জরিপে এই সংখ্যা ৭৮ লাখ বলে পাওয়া গিয়েছিল। তবে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এই সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ওই সময়ে আড়াই কোটি মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
বাংলাদেশ চীনের পর সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের এক–পঞ্চমাংশ, আর রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে। তবে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পরও দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।
বাংলাদেশে কিছু ছোট কোম্পানি বড় পোশাক উৎপাদনকারীর জন্য চুক্তিতে কাজ করে। অনেকে মনে করেন, আলিবাবার সঙ্গে যোগ দিলে এরা সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেহেতু ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদশের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তাই আমরা যত বেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারব, ততই বাজারে আমাদের প্রবেশের সুযোগ বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, এটা একটা ভালো লক্ষণ যে ‘এমন একটি বড় প্রতিষ্ঠান’ বাংলাদেশে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। এটি বাংলাদেশের ব্যবসার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলিবাবা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ঠিক কী পরিমাণ ফি নেয়, সেটি পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, ফি, সুবিধা ও শর্তাবলী নিয়ে একটি আন্তসীমান্ত সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিল্প-বাণিজ্য
আগামী ৬ বছর বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত চান বাণিজ্যমন্ত্রী

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার পরবর্তী ছয় বছর বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য-সুবিধার আওতায় রাখতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সমর্থন চেয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
আগামী বছরের শুরুতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৩তম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে বাংলাদেশকে দেওয়া এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে দেশগুলোর সমর্থন চান তিনি।
লন্ডনের মার্লবোরো হাউসে ৫ থেকে ৬ জুন অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ বাণিজ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। এই সংকটে সদ্য এলডিসি থেকে উত্তরণপ্রাপ্ত দেশগুলো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য-সুবিধার বাইরে গেলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই উত্তরণ পর্যায়ে থাকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অন্তত ছয় বছর অগ্রাধিকারমূলক বাজারের প্রবেশ সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ গত বছরগুলোতে কমনওয়েলথের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা কমনওয়েলথের ‘বিজনেস টু বিজনেস কানেকটিভিটি ক্লাস্টার’ লিড কান্ট্রি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। এ ছাড়া দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্ত-কমনওয়েলথ বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছি।

অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় এবং কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ও উদ্ভূত বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।
টিপু মুনশি জানান, বাংলাদেশ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেডের সুবিধার্থে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি অনুমোদনকারী প্রথম এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে একটি কাগজবিহীন বাণিজ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার জাতীয় রোডম্যাপ তৈরি করছে।
এ সময় অংশ নেওয়া কমনওয়েলথ মন্ত্রীরা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত দেশ এবং ক্ষুদ্র ও দুর্বল অর্থনীতিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অবদান রাখে, তা নিশ্চিত করার জন্য বর্ধিত সহযোগিতা ও শক্তিশালী অংশীদারত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন।
কমনওয়েলথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গভীর করার জন্য প্রতিশ্রুতি জানান কমনওয়েলথ মন্ত্রীরা। তারা ২০৩০ সালের মধ্যে আন্তকমনওয়েলথ বাণিজ্য দুই ট্রিলিয়নে উন্নীত করার জন্য আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
দুই দিনে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

দুই দিনে ৪ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এই অনুমতি দেয়া হয়।
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজ আমদানিতে বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে গতকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমদানির তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, গতকাল থেকে আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এসেছে। এদিকে আমদানির অনুমতির পর বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
গত রোববার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা থেকে আমদানির অনুমতি বা আইপি নিতে হয়। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল মন্ত্রণালয়।

অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
প্রথম দিনে ভারত থেকে এলো ১৪৫৭ টন পেঁয়াজ

আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের বাড়তি দামে কয়েকদিনের মধ্যে অস্থির হয়ে ওঠে দেশের বাজার। দিশেহারা হয়ে পড়েন ক্রেতারা। অবশেষে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি মিলেছে। এর প্রভাবে বাজারে কমতে শুরু করেছে দামও। কয়েকদিন ধরে স্থানভেদে ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। সেই পেঁয়াজের দাম এখন স্থানভেদে ১০-২৫ টাকা কমেছে।
এদিকে আমদানি অনুমতির প্রথম দিন সোমবার (৫ জুন) ভারত থেকে ১৪৫৭ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৯৭ টন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৩০০ টন ও দিনাজপুরের হিলি দিয়ে ৪০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর
আড়াইমাস পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ফের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। বিকেল থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে এ পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এরইমধ্যে পেঁয়াজ ভর্তি ৫৭টি ট্রাক সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। যেখানে ১ হাজার ৯৭ টন পেঁয়াজ এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ পেঁয়াজ এসেছিল সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। এরপরই বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

ভোমরা স্থলবন্দর
আমদানির অনুমতি প্রাপ্তির প্রথম দিনে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ১১ ট্রাক (৩০০ টন) ভারতীয় পেঁয়াজ এসেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এসব ট্রাক বাংলাদেশের ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে বলে নিশ্চিত করেন ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মন্টু বিশ্বাস।
ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন বলেন, কয়েকজন ব্যবসায়ী আইপি (আমদানির অনুমতি পত্র) পেয়েছেন। সন্ধ্যায় ১১ ট্রাক পেঁয়াজ ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেছে।
হিলি স্থলবন্দর
দীর্ঘ আড়াই মাস পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়েও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে পেঁয়াজবোঝাই দুটি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশে করে। এতে ৪০ টন পেঁয়াজ আনে এন আলম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মে মাসে রপ্তানি আয় ৫১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা

গত দুই মাসে (মার্চ ও এপ্রিল) দেশের রপ্তানি আয় নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও সদ্য সমাপ্ত মে মাসে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মে মাসে মোট ৪৮৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৫১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
রোববার (৪ জুন) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
যদিও রপ্তানির এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ কম। মে মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১২ কোটি ডলার। আর ২০২২ সালের মে মাসে রপ্তানি থেকে ৩৮৩ কোটি ডলার আয় হয়েছিল।
ডলার সংকটের কারণে গত মার্চে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, একইভাবে পরের মাস এপ্রিলে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয় ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৫ হাজার ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ডলারের পণ্য।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৪ হাজার ২৬৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রপ্তানিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। যেখানে রপ্তানি হয়েছে ১১২ কোটি ডলারের পণ্য। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০২ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ খাতের রপ্তানি কমেছে ৩০ শতাংশ।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়লো

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ল। ভ্যাটের কোনো নথি যাচাই–বাছাই করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের জন্য আর্থিক মূল্যের সীমা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে কোনো ভ্যাট কর্মকর্তা কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে চিঠি দিতে পারবেন।
বিষয়টি কীভাবে হবে, তা ব্যাখ্যা করা যাক। একজন ভ্যাটদাতার (প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি) পণ্যমূল্য বা সেবা বিক্রির পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা। ভ্যাট রিটার্নে তিনি তা–ই দেখিয়েছেন। এত দিন এই নথি যাচাই–বাছাই করতে হলে উপকমিশনারের কাছে যেতে হতো। এখন থেকে এই নথি একজন সহকারী কমিশনার নিজেই যাচাই–বাছাই করতে পারবেন। আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে কি না কিংবা মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছেন কি না, তা দেখবেন সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কর্মকর্তা। এরপর কোনো বিরোধ থাকলে তা মীমাংসা করবেন।
কর্মকর্তাদের ভ্যাট–সংক্রান্ত অভিযোগ মীমাংসা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এভাবে চলতি বাজেটে ছোট ছোট পদবির ভ্যাট কর্মকর্তাদের এ ধরনের ক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক, কার ক্ষমতা কতটা বাড়ল—
বিরোধ দেখা দিলে ভ্যাটের রাজস্ব কর্মকর্তারা আগে চার লাখ টাকা পর্যন্ত পণ্য বা সেবা বিক্রির নথি যাচাই–বাছাই করতে পারতেন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন থেকে রাজস্ব কর্মকর্তারা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনার সম্পৃক্ততা আছে, এমন নথি যাচাই–বাছাই করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনারদের ক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন থেকে তাঁরা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনার সম্পৃক্ততা আছে, এমন নথির মীমাংসা করতে পারবেন। উপকমিশনারদের ক্ষমতা ছিল ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নথি। এখন তা বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। যুগ্ম কমিশনারদের ক্ষমতা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকার নথি করা হয়েছে।

অন্যদিকে অতিরিক্ত ভ্যাট কমিশনাররা আগে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনার সম্পৃক্ততা আছে, এমন ভ্যাটের নথি যাচাই করতে পারতেন। এখন তা বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। আর এক কোটি টাকার বেশি ফাঁকির অভিযোগ থাকলে কমিশনারের কাছে যেতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে অপেক্ষাকৃত ছোট পদবির ভ্যাট কর্মকর্তারা ভ্যাট ফাঁকি–সংক্রান্ত যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবেন। একদিকে এর সুবিধা হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমবে। অন্যদিকে অসুবিধা হলো বড় বড় ভ্যাটের নথি ছোটখাটো কর্মকর্তাদের কাছে আটকে থাকার প্রবণতা বাড়তে পারে।
এর আগে ২০২১ সালে একইভাবে শুল্ক কর্মকর্তাদের এমন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল।
এদিকে এবারের বাজেটে করদাতাদের ওপর নোটিশ জারি করার প্রবণতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এত দিন কোনো ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়লে প্রথমে ওই ফাঁকির পরিমাণ উল্লেখ করে তা পরিশোধের জন্য ভ্যাটদাতাকে চিঠি দেওয়া হয়। পরে আবার আরেকটি চিঠিতে কেন জরিমানা আরোপ হবে না, তা নিয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এখন থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি ও জরিমানার অর্থ পরিশোধের বিষয়টি জানানোর জন্য বাজেটে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জব্দ হিসাব থেকে কর আদায় নয়
ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়লে কিংবা অভিযোগ থাকলে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে জব্দ হিসাব থেকে সরকারের প্রাপ্য অর্থ আদায়ের নির্দেশও দেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এখন থেকে এটি আর করা যাবে না।
বাজেটের প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন কোনো ভ্যাট কর্মকর্তা কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে চিঠি দিতে পারবেন। কিন্তু ওই হিসাব থেকে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব কেটে রেখে তা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন না।
জানা গেছে, অনেক সময় এ ধরনের ভ্যাট–সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হলে তা ভ্যাটদাতার পক্ষেও যেতে পারে। তখন অর্থ ফেরত দিতে হয়।
অর্থসংবাদ/এসএম