অর্থনীতি
বাংলাদেশে ৯০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ প্রস্তাব ভারতীয় কোম্পানির

বাংলাদেশের বাজার ধরতে প্রায় ৯০ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনা করেছে ভারতের একটি গোষ্ঠী, যারা বিনিয়োগের বিষয়ে সরকারের সবুজসংকেত পাওয়ার আগে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক নাম প্রচার করতে চাইছে না। ওই গোষ্ঠীর ভারতীয় প্রতিনিধি রাজিবনাথ রায় হোয়াটসঅ্যাপে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, তারা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাবের ‘ব্লু প্রিন্ট’ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে চান। এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মেইল পাঠিয়ে সাক্ষাতের সুযোগ চেয়েছেন। যদি তারা সাক্ষাতের সুযোগ পান, তখন তারা তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনাটির বিস্তারিত প্রকাশ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে মেইল পাঠানো হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত প্রতিবেদনের ‘বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় কোম্পানির সম্ভাবনা’ অংশে ‘পতঞ্জলি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে।
‘পতঞ্জলি’ ভারতের হরিদ্বারে অবস্থিত একটি বহুজাতিক কোম্পানি, ২০০৬ সালে যেটি ভারতের যোগগুরু রামদেব ও বালকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশটিতে রামদেবের বহু ভক্ত রয়েছেন, যারা পতঞ্জলির পণ্য ব্যবহার করে থাকেন। হিন্দুস্তান টাইমসের গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগগুরু থেকে বিজনেস টাইকুন, মাত্র পাঁচ বছরে ৫০ হাজার কোটি রুপির বাজার মূল্য ছুঁয়ে ফেলল বাবা রামদেবের পতঞ্জলি ফুডস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতঞ্জলি ফুডস দিয়ে ভারতে খাদ্যপণ্যের মার্কেট শেয়ার বাড়ালেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পণ্যের মধ্যে আয়ুর্বেদ, ভেষজ এবং বিউটি ও স্কিন কেয়ার উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও ব্যক্তি পরিচর্যার এই বাজারটি ধরতে চাইছে ভারতীয় কোম্পানি।
বাংলাদেশে ‘পতঞ্জলি’র উৎপাদিত হেলথ কেয়ার ও স্কিন কেয়ার পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্কিন কেয়ার মার্কেটের আকার ছিল প্রায় ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৭ সালে বেড়ে ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে (স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা)।
প্রতিবেদন বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যায়, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না থাকার কারণে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল বা চিকিৎসাব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করে স্বাস্থ্যসেবার ৫ শতাংশ ধরতে পারলেও মার্কেট শেয়ারের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় ‘পতঞ্জলি’ তার উৎপাদিত আয়ুর্বেদিক ওষুধসামগ্রী, নেচারাল হেলথ কেয়ার, প্রাকৃতিক ও ভেষজ পণ্য, বিউটি ও স্কিন কেয়ার পণ্য এবং গৃহস্থালি ভোগ্যপণ্য দিয়ে এই মার্কেট শেয়ারটি ধরতে পারে বলে মেইলের সঙ্গে যুক্ত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে যিনি কথা বলেছেন, সেই রাজিবনাথ অবশ্য ‘পতঞ্জলি’র বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, আমি ‘পতঞ্জলি’র প্রতিনিধি নই বা ওই কোম্পানিটির নামও স্বীকার করছি না। আমরা যে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে কথা বলছি, সেখানে ভারতীয় কোম্পানি ছাড়াও আরও অনেক কোম্পানি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) থাকতে পারে। ভারতীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো মেইলে যে তিনজনের নাম উল্লেখ আছে তাদের মধ্যে দুজন ভারতীয় এবং অপরজন বাংলাদেশি।
দুই ভারতীয় হচ্ছেন রাজা মুখার্জি ও রাজিবনাথ রায়। বাংলাদেশি সুজন সরকার সবুজ। মেইলে তারা নিজেদের ‘বিদেশি ও আন্তসীমান্ত বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। মেইলে সংযুক্ত মোবাইল নম্বরে বাংলাদেশি প্রতিনিধি সুজন সরকার সবুজের সঙ্গে গতকাল বিকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি ১০ মিনিট পর এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান। আলোচ্য সময়ের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে যখন ফিরতি কল আসে, তখন ওপাশে যিনি কথা বলছিলেন- তিনি নিজেকে মেইলে উল্লিখিত তিনজনের একজন ‘রাজিবনাথ রায়’ বলে পরিচয় দেন।
রাজিবনাথ বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময় বাজার, যেখানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দ্রুতগতিতে মাথাপিছু আয় বাড়ছে। প্রায় ১৬ কোটি ভোক্তার বর্ধনশীল এই বাজারে তারা ভারতীয় বিনিয়োগ আনতে চান। তিনি বলেন, যদি তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনতে পারেন এবং সেখানে কারখানা স্থাপন হয়, তবে ওই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিম বাংলা এমনকি উড়িষ্যায় রপ্তানির বিষয়টিও তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমতি দিলে তারা ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে ৯০ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। এটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), যৌথ বিনিয়োগ এবং সরকারি- বেসরকারি বিনিয়োগ বা পিপিপি যে কোনোভাবেই আসতে পারে।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
অনলাইন উদ্যোক্তাদের বড় সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন উদ্যোক্তাদের খুচরা কেনাকাটায় লেনদেন সম্পন্ন করতে ‘ব্যক্তিগত রিটেইল হিসাব’ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে এই হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোনও ফি না নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবগুলোর বিপরীতে কোনও প্রকার হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় করা যাবে না।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব পণ্য বিক্রি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত সেবার লেনদেন করা ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে (এমএফএস) গ্রাহকের জন্য ন্যূনতম জমার বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শ্রম নির্ভর অতিক্ষুদ্র বা ভাসমান উদ্যোক্তা, প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীরাও এ ধরনের হিসাবের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারবেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্যোক্তারা ব্যাংক বা এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে খোলা চলতি হিসাবের মাধ্যমেও লেনদেন করতে পারবেন। যাদের হিসাব নেই তাদের ক্ষেত্রে চলতি হিসাব খুলে এ ধরনের রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনও লেনদেন সীমা থাকবে না।
তবে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি (গ্রাহক তথ্য) দিয়ে খোলা হিসাবে মাসে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা লেনদেন করা যাবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবী সমিতির দেওয়া প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে ব্যাংক বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নিজস্ব কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে এ হিসাব খোলা যায়। তবে সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে এ হিসাব খোলা যাবে না। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে হিসাব খুলতে হয়।
এ ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট নিতে পারেন। নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করতে পারেন। তবে এই হিসাবে নগদ টাকা জমা, অন্য কারও হিসাবে টাকা পাঠানো, ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা আনা যায় না।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এ ধরনের হিসাবে ৩০ হাজার টাকা বিক্রয়মূল্য সংগ্রহ করতে পারবেন। মাসে এই সীমা ৫ লাখ টাকা। মাসে পাইকারের পাওনা পরিশোধ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। এছাড়া মোবাইল ওয়ালেট সেবার আওতায়ও এ ধরনের হিসাব খোলা যায়। সেখানেও মাসে সর্বোচ্চ লেনদেনের সীমা ১০ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে অনলাইন উদ্যোক্তাদের খুচরা কেনাকাটায় লেনদেন সম্পন্ন করতে ‘ব্যক্তিগত রিটেইল হিসাব’ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রমজানে জাল নোট প্রতিরোধে বিশেষ নির্দেশনা

বিভিন্ন উৎসবে জাল নোট চক্রের অপতৎপরতা বাড়ে। তেমনি পবিত্র রমজান মাসে কেনাকাটাসহ ব্যবসায়ীক লেনদেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর সুযোগ নেয় নোট জালকারী চক্র। তাই রমজানে নোট জালকারী চক্রের অপতৎপরতা রোধে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য বিশেষ কয়েকটি নির্দেশনা পালন করতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
এর মধ্যে রাজধানীতে ৫৮ স্থানে জাল নোট প্রতিরোধে ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ভিডিও বিভিন্ন ব্যাংককে জনগণের সামনে প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ভিডিও চিত্র রমজান মাসে ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাগুলোর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বগুড়া জেলাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমস্থল, রাস্তার মোড়ে সন্ধ্যার পর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা করে প্রচার করতে হবে। দেশের ব্যাংকগুলোর শাখায় গ্রাহকদের জন্য স্থাপিত টিভি মনিটরগুলোতে ভিডিও চিত্রটি পুরো ব্যাংকিং সময়ে প্রদর্শন করতে হবে।
ব্যাংকের শাখাগুলোতে উচ্চ মূল্যমানের নোট গ্রহণ ও প্রদানকালে এবং এটিএম মেশিনে টাকা ফিডিংয়ের পূর্বে আবশ্যিকভাবে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন দ্বারা নোট পরীক্ষা করতে হবে। রমজান মাস শেষ হওয়ার পর ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে আলোচিত নির্দেশনা পরিপালনের স্বপক্ষে একটি সচিত্র প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে জমা দিতে হবে।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা

রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির আয়কর, ভ্যাট এবং শুল্ক, তিন বিভাগেই ঘাটতি চলমান রয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এলসি খুলতে না পারায় আমদানি ও রপ্তানিতে ধীরগতি ও মূল্যস্ফীতিতে রাজস্ব ঘাটতি প্রকট হয়েছে।
এনবিআরের কাঁধে চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। কম আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৯৭৮ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, আট মাসে ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের আদায় সবচেয়ে বেশি। এ খাতে আদায় হয়েছে ৭৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এই সময়ে মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।
আয়কর খাতে ৮ মাসে আদায় হয়েছে ৬০ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্যের চেয়ে ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। এই খাতে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
একই সময়ে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এই খাতে ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা

পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচের কথা মাথায় রেখে রোজার আগেই বেশি বেশি অর্থ পাঠানো শুরু করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর ধারাবাহিকতায় চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
রোববার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৫ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। মার্চ মাসের প্রথম ১৭ দিনে এসেছে ১১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। মার্চের রেমিট্যান্সের এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের অঙ্ক ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
এর আগে সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার।
হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, মার্চের ১৭ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯৮ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ৮ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪০১ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৩৪৩ কেটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ে ৫৭ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।
বিদায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
‘টাকার মান আরও ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করতে হবে’

দীর্ঘদিন ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, এত দিন টাকার মান ৪০ শতাংশ অতিমূল্যায়িত ছিল। ডলার-সংকট শুরু হওয়ার পর ২৫ শতাংশের মতো টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আরো ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করতে হবে তিনি মনে করেন।
গতকাল শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের বিশেষ ওয়েবিনার ‘আইএমএফ-এর ঋণ: ভোগ করবে কে, পরিশোধ করবে কে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন আহসান এইচ মনসুর।
তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বেঁধে রাখার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ পাচ্ছে না। বড়রা সব পেয়ে যাচ্ছে, তাও আবার কম সুদে। সব দিক থেকেই তারা লাভবান হচ্ছে। তেল, চিনি থেকে শুরু করে আমদানি পণ্যের দাম বাড়লেও তারা লাভবান হচ্ছে। এভাবে বড়রা লাভবান হওয়ার কারণে সমাজে যেমন বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আহসান এইচ মনসুর। একটি শ্রেণির হাতে অর্থ-সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়ায় তারা ফুলেফেঁপে উঠলেও সরকারের রাজস্ব বাড়ছে না; বরং প্রতি বছরই তা কমছে। সে কারণে জিডিপির অনুপাতে সরকারি ব্যয় কমে যাচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ হলে দেশের অর্থনীতির ভালো হবে, এটা একধরনের উইশফুল থিঙ্কিং বা মন বলে সত্য। অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর আগে ১২ বার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে, কিন্তু তারপরও দেশে খেলাপি ঋণ বা কর-জিডিপির অনুপাত বাড়েনি; বরং কমেছে। সেজন্য এ বিষয়ক বোঝাপড়া দরকার।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফ এসব শর্তের বিষয়ে অতটা আন্তরিক নয়। সরকার এসব পারে না, কিন্তু যেটা পারে সেটা হচ্ছে, দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করতে। এতে জনগণের বোঝা বাড়ে।
অথচ দেশের জ্বালানি খাত পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন আনু মুহাম্মদ। সরকারের ভুল নীতির কারণে তা হচ্ছে, কিন্তু আইএমএফ এ বিষয়ে একটি কথাও বলে না। সেজন্য তার অভিযোগ, আইএমএফ আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে।
অর্থসংবাদ/এসএম