উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে নেই কারখানা, ইমাম বাটনের শেয়ারদর বাড়ছেই

উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে নেই কারখানা, ইমাম বাটনের শেয়ারদর বাড়ছেই
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা নতুন পরিচালনা পর্ষদকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঋণখেলাপি হয়ে পলাতক থাকায় কারখানা বুঝে নিতে পারছে না নতুন পর্ষদ। ফলে তারা কারখানার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন। তবে কারখানা নিয়ন্ত্রণে না থাকায় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ইমাম বাটনের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ সগির হোসেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এএসএম হাসিব হাসান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান।

এছাড়াও কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে নমিনি পরিচালক হিসেবে রয়েছেন রাবেয়া হক। আ মাহামুদ হোসেন ও মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালক।

জানা গেছে, নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো ইমাম বাটনের কারখানার দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেননি। ইমাম বাটনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রামভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ৮০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা বেশকিছু মামলায় ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর বিদেশে পালিয়ে যান মোহাম্মদ আলী।

ইমাম বাটনের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এএসএম হাসিব হাসান অর্থসংবাদকে বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিন পর আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) কোম্পানির কারখানার দায়িত্ব বুঝে নিতে চিঠি দিয়েছি। বিএসইসি থেকে কারখানা বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তবে আমরা এখনো কারখানা বুঝে নিতে পারিনি।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ আলী পলাতক থাকায় আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ছেলে আলী ইমাম ও ইমাম গ্রুপের কর্মকর্তা জসিম শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা প্রথমে কারখানা বুঝিয়ে দিবে বললেও পরবর্তীতে আর আমার কল ধরছে না।

ইমাম বাটনের নতুন পর্ষদ এবং বিনিয়োগকারীরা পুরো অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে জানিয়ে এএসএম হাসিব হাসান বলেন, ইমাম বাটনের ঢাকায় অফিস নেই। চট্টগ্রামে গিয়েও অফিস পাইনি। পুরাতন পর্ষদ নতুন পর্ষদকে কোম্পানির কাগজপত্র-কারখানা কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছে না। এখন যদি কাগজপত্র না পাই, তাহলে বুঝবো কি করে কোম্পানির কোন ঋণ আছে কি না? কোম্পানির কি অবস্থা সেটি কিভাবে দেখবো?

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ইমাম গ্রুপের কর্মকর্তা জসিম শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ইমাম বাটনের কোম্পানি সচিব অরবিন্দ নাগ অর্থসংবাদকে বলেন, আমি সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছেলে এবং ইমাম গ্রুপের কর্মকর্তা জসিম শিকদারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নতুন পর্ষদকে কারখানা বুঝিয়ে দেবেন।

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, নতুন পর্ষদ কারখানা বুঝে নিবে। আইনগত বিষয় কেউ জোর করে ধরে রাখতে পারবে না। যথাসময়ে ব্যবস্থা হবে। আইনানুগভাবে যাদের অধিকার দিয়েছি, তারা প্রতিষ্ঠান চালাবে। এক্ষেত্রে কেউ বাঁধা দিলে আইন নিজের গতিতে চলবে।

বিএসইসির কমিশনার বলেন, এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই। অনেকেই পরিণতি কি হবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না। তারা যেন বুঝে উঠতে পারে সেজন্য আমরা সময় দিয়ে থাকি।

এদিকে, দীর্ঘ সময় বিনিয়োগকারীদের কোন কিছু না দেওয়া ইমাম বাটনের শেয়ার সর্বশেষ ৯০ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। আজও (মঙ্গলবার) শেয়ারটির দর ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে। আর গত ৮ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে দেশের শেয়ারবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত হয় ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর শুধুমাত্র ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৯ সাল থেকে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হচ্ছে না। ফলে ওই বছর থেকে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার কোনও তথ্যও নেই।

ইমাম বাটন সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা জানিয়েছিল চার বছর আগে। ডিএসইর তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা লোকসান দেয় ইমাম বাটন। পরের বছর (২০১৫) লোকসান করে ১ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এছাড়াও ২০১৬ সালে ৭৭ লাখ, ২০১৭ সালে ২৯ লাখ ২৬ হাজার এবং ২০১৮ সালে ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা লোকসান দেয় ইমাম বাটন।

লোকসানি কোম্পানি ইমাম বাটনের পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ধারণ করছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি ৯ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দেওয়ায় লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত