সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের। তালিকাভুক্তির প্রথমবছর বিনিয়োগকারীদের কোন নগদ লভ্যাংশ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ওই বছর (২০১৯ সালে) ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া হয়। পরের দুই বছর (২০২০ ও ২০২১) নামমাত্র ১ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। তবে ২০২২ সালে নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটি নগদ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কারসাজি চক্রের ইন্ধনে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, হঠাৎ করে বেশি লভ্যাংশ দেওয়া শেয়ারের দর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হতে পারে। কারসাজি চক্রের সঙ্গে যোগসাজোশ থাকতে পারে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদেরও।
ডিএসইতে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র প্রতিটি শেয়ার ৪৮ টাকা ২০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। মাত্র ৬ মাস পর চলতি বছরের ৯ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২০ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ ৬ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৭১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৫৬৪ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ দেয় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসইর জবাবে কোম্পানিটি জানায় তাঁদের কাছে মূল্য সংবেদনশীল কোন তথ্য নেই। অর্থাৎ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই সি পার্লের শেয়ারদর বাড়ছে।
ডিএসইর তথ্য মতে, সর্বশেষ হিসাববছরে সি পার্লের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা। একই খাতের আরেক কোম্পানি ইউনিট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট পিএলসির সমাপ্ত বছরে ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ২৭ পয়সা। অর্থাৎ সি পার্লের থেকে ইউনিক হোটেলের শেয়ার প্রতি আয়ের পরিমাণ প্রায় আড়াই গুণ বেশি। আর সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানি দুটি সমান লভ্যাংশ দিয়েছে। যদিও সি পার্লের লভ্যাংশের পরিমাণ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। আগের বছর (২০২১) সি পার্লের শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৬৪ পয়সা। এর আগের বছর (২০২০) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ০৯ পয়সা। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৪৪ পয়সা
শেয়ারবাজারের এক সময়ের আলোচিত-সমালোচিত গেম্বলার কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ ও প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সাইফুল সি পার্লের শেয়ারদর কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সি পার্ল বিচ রিসোর্ট নিয়ে শেয়ারবাজারে বিভিন্ন ধরণের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে সাইফুলের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র। অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারটির দর বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি সি পার্ল বিচের ৪০ শতাংশ শেয়ারের (৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৯০০ শেয়ার) মালিকানা সি পার্ল সুন্দরবন ইকো রিসোর্টের কাছে হস্তান্তর করেছে শামীম এন্টারপ্রাইজ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশ করা হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে কোন কোম্পানির শেয়ারদর ৫০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক নয়। তবে কোম্পানির ভালো কোন মূল্যসংবেদনশীল তথ্য থাকলে বাড়তে পারে। তবে সাধারণত কয়েকমাসের ব্যবধানে এতবেশি শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, না দেখে কোন কিছু বলা যাবে না। অফিস সময়ের মধ্যে কল দিলে সি পার্লের বিষয়ে বলতে পারবো।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, সি পার্লের শেয়ার নিয়ে সম্প্রতি বিএসইসি থেকে কোন তদন্ত করা হয়নি। তবে কোম্পানিটির শেয়ার কারা লেনদেন করছে কমিশন সেদিকে নজর রাখছে।