শিল্প-বাণিজ্য
তিন খাতে চীন বিনিয়োগ করবে: বাণিজ্যমন্ত্রী

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অ্যাগ্রো প্রসেসিং এবং ই-কমার্স খাতে চীন বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শনিবার (১১ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ শীর্ষক সম্মেলনে চীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এ বিজনেস সামিটের আয়োজন করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের বড় রপ্তানিকারক দেশের একটি। তারা বলছে, তোমাদের দেশে আরও বিনিয়োগ করতে চাই। আমরা বলছি, তোমাদের জন্য সব কিছু ওপেন, তোমরা আসো, দেখো, আমাদের এখানে অনেকগুলো আইটেম আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে তোমাদের জন্য ভালো হবে।
তিনি বলেন, গত ৪০ বছর ধরে তোমাদের কাছ থেকে আমদানি করছি, এখন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে পারো। তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অ্যাগ্রো প্রসেসিং এবং ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ করবে, সেজন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে এসেছে, তারা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে। তারপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
এর আগে শনিবার সকালে বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে। পূর্ব-প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা যে পারি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সেটা প্রমাণ করেছি। এই সেতু শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলেই নয়, এ সেতু আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াবে। ন্যূনতম ১.২ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ডিসেম্বরে আমরা মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছি। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চায়। এটা আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের রূপকল্প ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বেসরকারি, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি কৌশলগত পথরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতি বছর যদি গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে বলে আশা করি।
সরকার প্রধান বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও আমাদের অর্থনীতি থামেনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, আমাদের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যুক্তরাজ্য বা জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমানে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করি। আমি জানি, এটা একটু বেশি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা, তারপরও উচ্চ আকাঙ্ক্ষা করতে তো কোনো আপত্তি নেই। ২০২৫ সাল বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ধনীর সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সেটি আরও সংস্কার ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সরিয়ে দেওয়া হবে। (যে বিষয়ে) সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও আমাদের অর্থনীতি থামেনি। ২০০৬ এর ৬০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিল্প-বাণিজ্য
বাংলাদেশের জন্য আলাদা সুবিধা নিয়ে আসছে আলিবাবা

চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা বাংলাদেশের আরও কোম্পানিকে তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির সুযোগ দিতে চায়। এ জন্য আলিবাবা একটি নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করেছে এবং বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা চাইলে এই ফি পরিশোধের মাধ্যমে ওই প্ল্যাটফর্মে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত নিকেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ বাংলাদেশ থেকে আলিবাবা আরও বেশি ব্যবসা চাইছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে এমন একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আলিবাবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর জোর দিচ্ছে। নিকেই আলিবাবার পেশ করা ওই প্রস্তাব দেখেছে।
বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি আলিবাবার দেওয়া এই সেবা গ্রহণ করলে তা ওয়েবসাইটটিকে জোরদার করবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া বাংলাদেশ রপ্তানি আয় বাড়াতে আরও একটি পথ খুঁজে পাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সায়েদ আলী বলেন, ‘আলিবাবা বাংলাদেশের এসএমই পণ্যের প্রসারে আমাদের সাহায্য করতে চায় এবং এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। আমরা ওই প্রস্তাবের কপি বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী সমিতির কাছে পাঠিয়েছি তাদের মতামতের জন্য।’
দুই দশক ধরে পৃথিবীর অন্যতম বড় ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে মাত্র ১৬০টির মতো কোম্পানি তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করছে। পাকিস্তান ও ভারতের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা তিন হাজারের মতো।
আলিবাবা তাদের প্রস্তাবকে ‘বিশেষ প্যাকেজ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন তালিকাভুক্ত সরবরাহকারীদের সংখ্যা যদি ৩০টির বেশি হয়, তাহলে প্রত্যেককে বার্ষিক সদস্য ফি হিসেবে পাঁচ হাজার ডলার দিতে হবে। আর সরবরাহকারীর সংখ্যা ৫০টির বেশি হলে ফি হবে ৪ হাজার ৮০০ ডলার।
তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই ফির পরিমাণকে ‘অত্যন্ত বেশি’ বর্ণনা করেছে আগ্রহী কোম্পানিগুলো। ওই বৈঠকের কাগজপত্র নিকেই এশিয়া দেখেছে, যাতে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ফি কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছে।
আলিবাবা প্রস্তাব দিয়েছে যে তাদের ওয়েবসাইটে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশে তৈরি শীর্ষক একটি আলাদা পেজ থাকবে, যাতে দেশটির পণ্য সেখানে প্রদর্শন করা যায়। আলিবাবা বলছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ‘অপ্রচলতি রপ্তানি বাজারে দ্রুত প্রবেশ করতে পারবে’।
তারা আরও বলেছে, তাদের প্রস্তাব বাংলাদেশকে ‘পোশাক উৎপাদন এবং এর উৎস হিসেবে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, খুচরা বিক্রেতা ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের জন্য বিশ্বে এক নম্বর’ অবস্থান পেতে সাহায্য করবে। আলিবাবার একজন প্রতিনিধি নিকেই এশিয়াকে ই–মেইলে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করার ‘বড় ধরনের সম্ভাবনা’ দেখছেন।
বার্ষিক ফি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া বৈঠকে অনেক এসএমই প্রতিনিধি আলিবাবার প্রস্তাবকে মোটামুটি স্বাগত জানিয়েছেন। প্রায় ২০ জনের মতো প্রতিনিধি ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মির্জা নূরুল গনি বলেন, ‘আলিবাবা একটি নামজাদা সাইট। তারা যদি বাংলাদেশের পণ্যের জন্য একটি আলাদা পেজ তৈরি করে, তাহলে আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিপুলভাবে উপকৃত হবেন।’
বাংলাদেশে এখন কতগুলো এসএমই আছে সে সম্পর্কে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১৩ সালের জাতীয় একটি জরিপে এই সংখ্যা ৭৮ লাখ বলে পাওয়া গিয়েছিল। তবে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এই সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ওই সময়ে আড়াই কোটি মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
বাংলাদেশ চীনের পর সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের এক–পঞ্চমাংশ, আর রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে। তবে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পরও দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।
বাংলাদেশে কিছু ছোট কোম্পানি বড় পোশাক উৎপাদনকারীর জন্য চুক্তিতে কাজ করে। অনেকে মনে করেন, আলিবাবার সঙ্গে যোগ দিলে এরা সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেহেতু ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদশের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তাই আমরা যত বেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারব, ততই বাজারে আমাদের প্রবেশের সুযোগ বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, এটা একটা ভালো লক্ষণ যে ‘এমন একটি বড় প্রতিষ্ঠান’ বাংলাদেশে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। এটি বাংলাদেশের ব্যবসার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলিবাবা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ঠিক কী পরিমাণ ফি নেয়, সেটি পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, ফি, সুবিধা ও শর্তাবলী নিয়ে একটি আন্তসীমান্ত সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
রোজার প্রথম সপ্তাহেই কমবে চিনির দাম: বাণিজ্যমন্ত্রী

চিনিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কারণে কেজিতে ৫ টাকার মতো ছাড় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমানোর অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আশা করি, রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমবে।
রোববার (১৯ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এর ৬ষ্ঠ সভা’ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেই সুবিধা এখনো পাওয়া যায়নি। শুল্ক ছাড়ের চিনি কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে। আমরা আশা করি, রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির যে দাম তা থেকে কেজিতে ৫ টাকা কমবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
দেশের বাজারে সোনার দাম লাখ টাকা ছুঁই ছুঁই

দেশের ইতিহাসে সোনার সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ভরি স্বর্ণের নতুন দাম দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ নতুন এ দাম নির্ধারণ করেছে।
শনিবার (১৮ মার্চ) বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রোববার (১৯ মার্চ) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, রোববার থেকে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা কিনতে লাগবে ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেট ৯৪ হাজার ৩০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৮০ হাজার ৮৩২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা বিক্রি হবে ৬৭ হাজার ৩০১ টাকা দরে।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সোনার দাম নির্ধারণ করেছিল বাজুস যা পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। ওই দাম অনুযায়ী শনিবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত ২২ ক্যারেটের ভরি বিক্রি হয়েছে ৯১ হাজার ৯৬ টাকায়। সেই হিসেবে আজ সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি টাকা বাড়ানো হলো স্বর্ণের দাম।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি ভরি সোনার (২২ ক্যারেট) দাম ছিল ৮৭ হাজার ২৪৭ টাকা। ওই দিন ১ হাজার ১৬৬ টাকা বেড়ে হয় ৮৮ হাজার ৪১৩ টাকা। এরপর ৭ জানুয়ারি ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বেড়ে হয় ৯০ হাজার ৭৪৬ টাকা এবং ১৪ জানুয়ারি ২ হাজার ৬৮৩ টাকা বেড়ে হয় রেকর্ড ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা। মাঝে ৪ ফেব্রুয়ারি সোনার দাম কিছুটা কমলেও সেটি ৯০ হাজারের ঘরে থেকে যায়।
আজ এক লাফে ৭ হাজার ৬৯৮ টাকা বাড়িয়ে প্রতি ভরি সোনার দাম করা হলো ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণের দামের ক্ষেত্রে এটিই একবারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা।
এদিকে সোনার দাম কমানো হলেও আজ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের রুপার দাম প্রতি ভরি ১ হাজার ৭১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের দাম ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১০৫০ টাকায় অপরিবর্তিত আছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
বিডা ও এলএবিসিসিআইয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

বাংলাদেশের সঙ্গে লাতিন আমেরিকাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে লাতিন আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এলএবিসিসিআই) ও বিডার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিডা সম্মেলন কক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এলএবিসিসিআইর সভাপতি মো. আনোয়ার শওকাত আফসার এবং বাংলাদেশে ব্রাজিল দূতাবাসের কমার্শিয়াল স্পেশালিস্ট নাহিদ ফেরদৌসী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে লাতিন আমেরিকাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। গত ১৫ বছরে আমাদের অর্থনীতির বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ও জীবনমান উন্নত হয়েছে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে আরও সাড়ে তিন কোটি মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে চলে আসবে।
বিডার চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ শুধু ১৭ কোটি মানুষের বিশাল ডমেস্টিক মার্কেটই নয়, বরং যথাযথ বিনিয়োগ করলে এখান থেকেই ভারত-চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০০ কোটির কনজ্যুমার মার্কেটে প্রবেশ করা যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের রয়েছে দক্ষ তরুণ জনগোষ্ঠী, যা বিনিয়োগকারীদের সহজেই আকর্ষণ করতে পারে। বাংলাদেশে রয়েছে ১০০টি ইকোনমিক জোন এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার দেশ বাংলাদেশ তাই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নিরাপদ বিনিয়োগের গন্তব্য।
এলএবিসিসিআইর সভাপতি আনোয়ার শওকাত আফসার বলেন, এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।এলএবিসিসিআই এখন বিডা থেকে অধিভুক্তি পেয়েছে। এখন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা এলএবিসিসিআইর সহযোগিতায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে আরও আত্মবিশ্বাসী হবে।
তিনি বলেন, আগামী ৬ থেকে ১৭ মে হবে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) ইভেন্ট ইন লাতিন আমেরিকা’।যৌথভাবে বিডা, ডিবিসিসিআই এবং এলএবিসিসিআই নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল এ আয়োজন করবে। এই মেগা ইভেন্টে অংশ নেবেন বাংলাদেশী ও ইউরোপীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান। প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সম্ভাব্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, টেক্সটাইল, সয়াবিন, সূর্যমুখী, লৌহ আকরিক, পেট্রোলিয়াম তেল, সার, তৈরি পোশাক, কাঠের লগ, পাট, চামড়া ও ওষুধ রপ্তানি খাতগুলোর ওপর বিটুবি নেটওয়ার্কিং ও সেমিনার আয়োজন করবে।
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
ইউরোপে অতিরিক্ত ১৮০০ কোটি ডলারের রপ্তানির সুযোগ

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশ তাদের সক্ষমতার মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহার করছে। বাকি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ইইউর বাজারে বছরে আরও ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার রপ্তানি করা যাবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ‘ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পঞ্চাশ বছর: সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া’ শীর্ষক এই গবেষণাপত্রের উপস্থাপনা ও এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
র্যাপিড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সেমিনারে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষত ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে জিএসপি–সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের এখনই উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সেমিনারে গবেষণাপত্রের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। সেখানে তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে এখন যে রপ্তানি হয়, তার থেকে বছরে আরও ৪০ শতাংশ রপ্তানি বেশি করা সম্ভব। তাতে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয় করা যাবে। উৎপাদনে বৈচিত্র্য এনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে শুধু তৈরি পোশাক খাত থেকেই ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় আসবে।
বিগত দশকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির হিস্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ইইউতে বাংলাদেশের বাজার ৯ থেকে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইইউর বাজারের আকার বৈশ্বিক আমদানির ৩০ শতাংশের সমান। তাই বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন আব্দুর রাজ্জাক।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে ইইউর অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার, রপ্তানিবৈচিত্র্য বাড়ানো ও সেবা রপ্তানির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলি উভয়ের মধ্যে বিনিয়োগ-বাণিজ্য বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ চান।
অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান করোনা সংকট–পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় ইইউ বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সুবিধা ২০২৯–এর পর আরও তিন বছর বাড়ানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘ইইউ-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ইইউর বাজারে রপ্তানিবৈচিত্র্যকরণের ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ না নিলে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার। যেখানে ইইউর দেশগুলোতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য। ইইউর ২৭টি দেশ বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৫ শতাংশ এবং পোশাক রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি দখল করে আছে।
রপ্তানির পাশাপাশি ইইউ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ইইউর বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে ২৩০ কোটি ডলার উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ, অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ প্রমুখ।