প্রবাস
বার্লিনে বিশ্বের বৃহত্তম পর্যটন মেলায় বাংলাদেশ

জার্মানির বার্লিনে বিশ্বের বৃহত্তম পর্যটন মেলা ‘আইটিবি বার্লিন ২০২৩’ এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এবারের মেলায় ১৬৯টি দেশের পাঁচ হাজার ৫০০ প্রদর্শক তাদের পর্যটন সংক্রান্ত পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বাংলাদেশ থেকে ১০টি কোম্পানি মেলায় অংশগ্রহণ করে।
জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সমন্বয়ে এ মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল রাইজিং বাংলাদেশ, ট্যুর প্ল্যানার্স লিমিটেড, আইরুমসবিডি, দেশঘুড়ি ডটকম, সানমুন ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, বেয়ন্ড অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ট্যুরিজম ডিএমসি, এ-ওয়ান ট্যুরিজম, বগুড়া এয়ার ট্রাভেলস, পাবনা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও কসমস হলিডে।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গরিবাশভিলি। মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক এ পর্যটন মেলায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মেলার সমন্বয়কারী জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কমার্শিয়াল) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ খাত থেকে লাভবান হওয়ার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটিকে প্রচার করতে হবে। আইটিবি বার্লিন একটি নিখুঁত প্লাটফর্ম, যেখানে আমরা এ প্রচার নিশ্চিত করতে পেরেছি।
তিনি জানান, আইটিবি বার্লিনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সাংস্কৃতিক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন অবকাঠামোকে তুলে ধরে বিশ্ব পর্যটন বাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পথ প্রশস্ত করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

প্রবাস
কানাডায় ডিরেক্টরস ক্লাব অ্যাওয়ার্ড পেলেন মাহবুব ওসমানী

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় অবদানের জন্য কানাডায় ডিরেক্টরস ক্লাব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মাহবুব ওসমানী। ১০ মার্চ (শুক্রবার) টরন্টোর বে-ভিউ ও শেপারডে অবস্থিত দ্য ভিলেজ লফটে আয়োজিত রাইট এট হোম রিয়েলটি ব্রোকারেজের ডন মিলস শাখার কর্তাব্যক্তিরা আনুষ্ঠানিক ভাবে তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন।
এ সময় মাহবুব ওসমানীকে অভিনন্দন জানান ব্রোকারেজের প্রেসিডেন্ট জন লুসিঙ্ক, ব্রোকার অব রেকর্ড ও জেনারেল ম্যানেজার জুলি কি, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মার্ক সালেঙ্গা এবং এরিয়া ম্যানেজার হ্যারি নাস্তামাগোস।
ওসমানী বলেন, ‘আজকের দিনে বিশেষভাবে আমি আমার সব ক্রেতা, বিক্রেতা, শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস এবং সমর্থন ছাড়া এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করা সম্ভব ছিল না’।
খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে কানাডার বাংলাদেশিদের মধ্যে রিয়েলটর হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন মাহবুব ওসমানী। বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা সামাজিক, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অত্যন্ত সক্রিয় তিনি।
ওসমানী টরন্টো থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় রিয়েল এস্টেট নিয়ে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ লেখেন। এছাড়া টরন্টোর প্রথম ২৪ ঘণ্টার টিভি চ্যানেল এনআরবি টিভিতে ‘প্রপার্টি গাই’ নামে নিয়মিত একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এছাড়াও ফেইসবুক লাইভে সংবাদভিত্তিক পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘গণমাধ্যমে কানাডা’র উপস্থাপক।
সাত বছর আগে অভিবাসী হয়ে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ওসমানী। এক বছরের মধ্যে টরন্টো ফিল্ম স্কুল থেকে ‘গ্রাফিক ডিজাইন এন্ড ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া’ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
অভিবাসী জীবনে এই পেশায় আসা সম্পর্কে ওসমানী বলেন, নিজের প্রথম বাড়িটি কেনার পর রিয়েল এস্টেট পেশায় আগ্রহী হই। যাতে অভিবাসীদের জীবন কিছুটা স্বাচ্ছন্দ এবং সুন্দর করে তাদের বাসাবাড়ির স্বপ্নাশা পূরণ করতে পারি; সেজন্যই এই পেশায় আসা।
উল্লেখ্য, ওসমানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স ও মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন এবং গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। পরে তিনি ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম বিভাগে শিক্ষকতা করতেন। পাশাপাশি তিনি চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরে সংবাদ ও টক শো উপস্থাপনা করতেন। তিনি প্রথম আলোর সহোদর প্রতিষ্ঠান এবিসি রেডিও এবং সময় টিভিতেও সাংবাদিকতা করেছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
এখন দরকার সু এবং সঠিক শিক্ষা!

দেশে শিক্ষা পদ্ধতি আর শিক্ষানীতি নিয়ে বিতর্ক বেশ জমজমাট। যে শিক্ষা মানুষ জাতির মেরুদণ্ড, সেই মেরুদণ্ড এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে নড়বড়ে, ভঙ্গুর ও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। আমি বেশ কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার উন্নয়ন নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করে চলেছি। প্রবাসী হলেও আমি বাংলাদেশের শিক্ষার মান ও সার্বিক নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। আমার মতে সু এবং সঠিক শিক্ষা অর্জিত না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কখনোই আসতে পারে না। দেশের বিভিন্ন পেশার গ্রুপের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাকেও এখনো একমুখী সর্বজনীন রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। নানা বিভেদ, বিভাজনের বিষে জর্জরিত হয়ে গেছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা।
বলা হয়ে থাকে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশীয় শিক্ষার মান উন্নয়ন করতেই নাকি গ্রেডিং পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হোক। কিন্তু এই বিষয়ে বাস্তবে কী করা হলো? কী করা হচ্ছে! সাম্প্রতিক কয়েকটি নমুনা এবং এই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সর্বশেষ দশা বা পরিস্থিতি খেয়াল করা যাক। রাষ্ট্রপতি নিজেও দেশের এই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার বেহাল দশায় চরম উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। দেখা গেছে, গ্রেডিং পদ্ধতিতে জিপিএ’র জোয়ার বইতে শুরু করেছে। প্রতিটি বোর্ডে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এখন আন্তর্জাতিক মানেও সন্তুষ্ট হতে পারলোনা দেশ! পাসের হার বৃদ্ধি করতে হবে। শুরু হয়ে গেলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাসের হার নিশ্চিত করার প্রতিযোগিতা। অসম আর অসুস্থ এই প্রতিযোগিতার বলি হতে শুরু করলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা।
খোদ শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই এবং অনেক বেকার যুবক শিক্ষার নামে কোচিং ব্যবসা শুরু করলেন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী ধরা শুরু হলো। কোচিংয়ে কতিপয় অসাধু শিক্ষক ও কিছু অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে দিতে শুরু করেন। ক্রমান্বয়ে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়লো দেশজুড়ে প্রশ্ন ফাঁস ও তার আতঙ্ক। পরীক্ষার আগেই ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্ন বিক্রি শুরু হয়। বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরাও গণহারে জিপিএ-৫ পেতে শুরু করে। পরীক্ষার পর পাসের হার বৃদ্ধির জন্য উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী শিক্ষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, যাই লিখবে তাতেই নম্বর দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় পাশেরউচ্চ হার এবং জিপিএ’র বন্যা বইয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এই জিপিএ-৫ এর করুণ দশা লক্ষ্য করা গেল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
ফল হলো এই যে, আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে মানের শিক্ষার্থী পাওয়া যেত এখন সেই গুণগত মানের শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা ইংরেজি এমনকি বাংলাও ভালো জানেনা। অপরদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে গণহারে অকৃতকার্যও হয়। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এরপর থেকে এই জিপিএ-৫ এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন এবং বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রশ্নফাঁস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে বলেছেন; আমি বুঝিনা এ কেমন শিক্ষক যে ছাত্র-ছাত্রীদের নকল সরবরাহ করে। মা-বাবারাই বা কেমন যারা নিজেরাই নিজেদের সন্তানদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব পরীক্ষায় এই প্রশ্নফাঁস এক কঠিন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাধি ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে। এখন এই ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা শুরু হয়েছে। কিন্তু উপায় যে আর মেলেনা।
এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অনেকে এই ব্যধির প্রতিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। আমি প্রবাসী হলেও গোটা শিক্ষা পদ্ধতির গলদ খুঁজে বের করে এর স্থায়ী প্রতিকারের জন্য সরকার ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান রেখেছি। মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও নিবিড় প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশে সুশিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে। তা বাস্তবায়নের জন্য আমি দেশে একটি বা একাধিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষকদের মধ্যে বুনিয়াদী, কার্যকর ও আধুনিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার এক নতুন চিন্তা সরকার ও দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করেছি। সেখানে যেন আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক এক অগ্রণী চিন্তায় আমার পৃথিবী উদ্ভাসিত হয় আমার জ্ঞানের আলোকে! এই শিক্ষা হবে আমাদের উপার্জনের হাতিয়ার।
আমি মনে করি, শিক্ষা গ্রহনের পরেই প্রতিটি মানুষের সব ব্যস্ততা আবর্তিত হয় প্রত্যাশিত একটি চাকরিকে ঘিরে। এক্ষেত্রে দেশে এমন অবস্থা যেখানে উচ্চশিক্ষিত হতে যত বছর সময় লাগছে চাকরি পেতে সেই ছাত্রকে এর চেয়েও বেশি সময় অপচয় করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি একাধিক আধুনিক ধারণা দিয়েছি।
আমার মতে, বর্তমান বিশ্বে চলছে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং গোটা বিশ্বের শিল্পকারখানা, প্রযুক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে এখন আজীবন চাকরি বলে কিছু নেই, চাকরি আছে ততদিন যতদিন কাজ আছে এবং কাজ আছে ততদিন যতদিন চাহিদা আছে। শেয়ার মার্কেট নির্ধারণ করছে বর্তমান কর্মসংস্থান ও চাকরীর স্থায়িত্ব। শেয়ার হোল্ডার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্লাইমেট পরিস্থিতি, এসব বিশাল আকারে প্রভাব বিস্তার করছে শিল্প কারখানা এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে। শিক্ষা ও শিক্ষার মান নির্ভর করছে গ্লোবাল চাহিদার উপর এবং তাও হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট লেভেলে। সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করে বলা কঠিন কী পড়লে সারা জীবন চাকরির গ্যারান্টি মিলবে। তবে সারাজীবন টেকসই ইন্ডাস্ট্রি প্রোভাইডার এবং যোগ্য নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকতে হলে দরকার সময়োপযোগী সুশিক্ষা। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উর্ধ্বমুখী এক দেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও সময়ের স্রোতে এ দেশের সব সেক্টরেই লেগেছে আজ ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। কিন্তু আমাদের ধ্যানে-জ্ঞানে এ ছোঁয়া আজও লাগেনি! চাহিদা বলছে কী পড়তে হবে এবং কেন পড়তে হবে।
এ সময়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবং প্রত্যেকটি শিক্ষককে জানতে হবে চাহিদাগুলো কী এবং তার জন্য কী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সকল শিক্ষকদের সুশিক্ষার আওতায় আনতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই। দেশের সব শিশু শিক্ষা বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান ও গ্রহনের একটি সমন্বিত কার্যক্রমের আওতায় থাকবে। যেখানে দেশ, বিদেশের বড় বড় কোম্পানি বা সংস্থার মালিক বা সিইও, কর্মকর্তা, গবেষক, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান করা এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা হবে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য।
এমতাবস্থায় শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত নিবিড় নজরদারী চালু রাখতে হবে। কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং তা কীভাবে মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের ১-১৫ বছর বয়সের মধ্যের সময়টা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। মানবতার ফর্মে আনতে হলে তাদের মানসম্পন্ন পরিবেশের মধ্যে শিক্ষা দান করে গড়ে তুলতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষার সার্বিক অবকাঠামো। যেখানে থাকতে হবে জানার থেকে শেখা। দুর্নীতি বা অনিয়ম যেন কলুষিত করতে না পারে শিক্ষা প্রশাসনকে, শিক্ষাঙ্গণকে। একই সাথে গণতন্ত্রমনা ও সৃজনশীল নাগরিক হিসাবে নিরাপদে ও গর্বের সঙ্গে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করবে এবং মতামতের ভিন্নতা সত্ত্বেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে তারা সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
শিশু বিদ্যালয়, শিশুদের জন্য অনুকরণ এবং অনুসরণের জায়গা, সেজন্য এই সব শিক্ষাঙ্গনে থাকা চাই মনোবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী। সেখানে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদির সাহায্যে বিজ্ঞান মনস্ক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে শিক্ষা দান ও প্রশিক্ষণ প্রদান চলবে। যেখানে মননশীলতা চর্চা ও বৈশ্বিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে শিশুদের প্রারম্ভিক জীবন। এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে একে অপরের থেকে জানা।এ সব প্রস্তুতির জন্য সহায়ক মাধ্যম হচ্ছে প্রশিক্ষণ, অথচ এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দেশে খুবই সামান্য ও দায়সারা গোছের।
এই ব্যাপারে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন –
আছে কি বাংলাদেশের শিশু বিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক বা শিক্ষা পদ্ধতি, যেখানে চর্চা হচ্ছে এমন মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা? বা সেই ভাবে তৈরি হচ্ছে কি তেমন শিক্ষক যিনি পারবেন মোকাবিলা করতে ভবিষ্যতের এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে? তাহলে কি আমরা যেভাবে আছি ঠিক সেভাবেই থাকব? নাকি চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলাদেশী নয় গোটা বিশ্বের নাগরিক করে গড়ে তুলবো সুশিক্ষার মাধ্যমে! প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ধারার একমাত্র বাহক শিক্ষক সমাজই যদি মজবুত না হয়, শিক্ষার্থী অভিযাত্রীরা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণী পাড়ি দিতে পারবেন? সে প্রশ্ন সব নাগরিকের, সব অভিভাবকের।
আমরা জানি, শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। গতানুগতিক, অসম্পূর্ণ, সনদপত্রসর্বস্ব, তত্ত্বীয় বিদ্যাপ্রধান, অপর্যাপ্ত ব্যবহারিক শিক্ষা, মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারী, তাই আশানুরূপ ফল লাভ হচ্ছে না।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে সুশিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী ফলোআপ খুবই জরুরি। দেশে তার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রাইমারী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে কিছু শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও ব্যবস্থা নেই। আবার শিশু বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে দেশে দিনে দিনে শিক্ষিতের হার বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার মান। তাই দেশের জনশক্তিকে দ্রুত জনসম্পদে রুপান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
তাই আর দেরি না করে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক। বর্তমান যে সব বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা জানে না কি ধরনের শিক্ষা দেওয়া দরকার একজন শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষককে। পুরো শিক্ষাঙ্গন খুঁজলে পাওয়া যাবে খুব কম সংখ্যক এইসব গুণসম্পন্ন শিক্ষক, নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। মানুষের মত দেখতে হলেই মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায় না, তার জন্য দরকার মিশন, ভিশন এবং পলেসি। সঙ্গে ডেডিকেশন, প্যাশন, মোটিভেশন, গোলস এবং অবজেকটিভস।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রদবদল করতে হবে প্রথমে এবং জনগনের মনোনীত প্রার্থী ও স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে এ কাজ শুরু করতে হবে। দেশকে বহিঃশত্রুর থেকে মুক্ত করলেই তো দেশ মুক্ত হলো না? দেশকে খাদ্যের অভাবমুক্ত, অন্ন-বস্ত্রের অভাবমুক্ত, কুশিক্ষা মুক্ত, পরাধীন চেতনা মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে হলে যারা বর্তমানে নানা দায়িত্বে আছেন তাদের সক্রিয়ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
দেশের শিক্ষাঙ্গনের এই দুর্দিনে সামরিক বাহিনী পরিচালিত ক্যাডেট কলেজগুলো থেকে আমরা তাদের প্লানিং টুল ফর এ্যাডমিনিসট্রেশন, ডিসিপ্লিন, সোর্স ইন্টিগ্রেশন, সিনক্রোনাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। একটি বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে তা হল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো স্তরেই যেন এমন কিছু শিক্ষা দান করা না হয় যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায়ের বিভেদ জ্ঞানে কলুষিত হয়ে পড়ে। জ্ঞানদান যেন এমন হয় যে সবকিছু জানার মাধ্যমে বৈচিত্র্যের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশের সবাই শিক্ষার বিষয়টি দেখছে, জানছে, জল্পনা-কল্পনা করছে কিন্তু কীভাবে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে খুব কমই কথা হচ্ছে। এখনোও চলছে সেই সনাতন শিক্ষাদান পদ্ধতি যা বয়ে আনছে দেশে শুধু অন্ধকার ও বেকারত্ব। আজ জাতি সত্যিকারের শিক্ষা হারিয়ে ফেলেছে। সুশিক্ষা, মানসম্মত শিক্ষার অভাবে যে সামান্য সুযোগ সুবিধা দেশে রয়েছে তার দিকে চেয়ে আছে লাখ লাখ বেকার যুবক। চাকরিতে লোক নিয়োগ হবে একজন, হাজার প্রার্থী তাতে আবেদন করছে। ‘কোটা’ থাকা সত্ত্বেও হবে কি চাকরি সবার? যারা চাকরি পাবে না তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কী ভাবা হচ্ছে? দেশে লাখ লাখ বেকার তৈরির এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কি কোনো জবাবদিহীতা আছে? সরকারের কী বক্তব্য এই ব্যপারে? এসব ঘটনার পর, ভাবনা একটাই মনের মধ্যে- কীভাবে সম্ভব একটি বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেখানে জাতি তার উত্তর খুঁজে বের করবে- কী পড়াব, কতটুকু পড়াব, কতজনকে পড়াব, দেশের কতটুকু কী দরকার? চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি করতে হবে সুশিক্ষিত জাতি। সচেতন জাতি খুঁজে বের করে সমাধান, অজুহাত নয়। সাবধানতাই একমাত্র সুশিক্ষার পথ।
সুশিক্ষার কারিগর পেতে হলে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হলে দরকার এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্টের মধ্যে জানতে হবে, জানতে হলে শিখতে হবে, শিখতে হলে পড়তে হবে, আর পড়তে হলে চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে শিক্ষকদের। তবেই হবে শিক্ষার সার্থকতা আর শিক্ষক হবে সুশিক্ষার কারিগর। বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে তার সমাধান। তাই শিক্ষাঙ্গনে এক বিরাট পরিবর্তনের জন্য চাই সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদ/কেএ
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
৬৯ কোটি টাকা লটারি জিতলেন প্রবাসী হোটেলকর্মীর

দুবাইয়ে হোটেল কর্মী জ্যাকপট লটারিতে আড়াই কোটি দিরহাম জয়ী হয়েছেন। যা বাংলাদেশি প্রায় ৬৯ কোটি টাকা। আবু ধাবির বিগ টিকেট ড্রতে জয়ী এই হোটেল কর্মী ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
আবু ধাবি বিগ টিকেট ড্র জয়ীর নাম সাজেশ এনএইচ। ৪৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি দুবাইয়ের কারামা এলাকার ইকাইস রেস্তোরাঁয় ক্রয় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। পুরস্কারের অর্থ হিসেবে তিনি পেয়েছেন আড়াই কোটি দিরহাম (বাংলাদেশি ৬৮ কোটি ৯৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৪ টাকার বেশি)।
২০ জন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে অনলাইনে টিকেট কিনেছিলেন সাজেশ। এখন সবার মাঝে পুরস্কারের এই অর্থ সমানভাবে ভাগ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, আমি যে হোটেলে কাজ করি সেখানে ১৫০ জনের বেশি কর্মচারী রয়েছে। আমি তাদের সাথে আমার লটারি জয়ের একটি অংশ ভাগাভাগি করে নেব। আমি যতটা সম্ভব তাদের সাহায্য করতে চাই।
সহকর্মীরা অর্থ দিয়ে কী করতে পারেন, সেবিষয়ে তাদের সাথে বসে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন সাজেশ।
যদিও তিনি এখন কোটিপতি, তারপরও প্রত্যেক মাসে টিকেট কিনতে চান। বলেন, অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে কখনোই আমাদের স্বপ্ন দেখা বাদ দেওয়া যাবে না। আমরা টিকেট কেনা অব্যাহত রাখবো। আমাদের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করবো।
আবু ধাবির বিগ টিকেটের পরবর্তী ড্র আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। সেই সময় প্রথমবারের মতো সৌভাগ্যবান বিজয়ী ৩ কোটি দিরহাম পাবেন।
গত মাসে চীনে এক ব্যক্তি লটারিতে ৩ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি ২৫০ কোটি টাকার বেশি) জিতেন। তিনি ৮০ ইউয়ান (১১ মার্কিন ডলার) দিয়ে লটারির ৪০টি টিকেট কিনেছিলেন। এসব টিকেটের সাতটি সংখ্যা ছিল একই। পরে তিনি চীনা ওই লটারির গ্র্যান্ড পুরস্কার বিজয়ী হন। গত ২৪ অক্টোবর পুরস্কারের অর্থ বুঝে পান এবং ৫ মিলিয়ন ইউয়ান দান করেন তিনি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
বাংলাদেশিদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান রাষ্ট্রদূতের

যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে। গতকাল (সোমবার) বাংলাদেশ দূতাবাস, লিসবন দিবসটি পালন করে।
জাতীয় শোক দিবসের মর্মের সঙ্গে সংগতি রেখে দূতাবাস প্রাঙ্গণে ব্যানার ও পোস্টার লাগানো হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সাদা-কালো পোশাক পরিধান করে যোগ দেন এবং কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
সবাই শোক দিবস উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে কর্মকর্তাদের নিয়ে রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেন।
এছাড়াও, দূতাবাসের প্রদর্শনী কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী বর্ণাঢ্য জীবনের যুগান্তকারী ঘটনাবলীর ওপর ‘আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন’ শীর্ষক এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শিরোনাম সংবলিত এবং কালানুক্রমিকভাবে সাজানো আলোকচিত্র সমূহ দর্শনার্থীরা আগ্রহের সঙ্গে পরিদর্শন করেন।
দিবসটি উপলক্ষে সন্ধ্যায় এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এতে দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারী, রাজনৈতিক দল, সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা এবং ছাত্রসহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন।
এ পর্বের শুরুতে রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারী ও প্রবসী বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা দূতাবাসে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার ও শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাঠানো বাণী পাঠ করা হয়। এরপর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচকরা বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় অবদান ও তার জীবনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর বর্বর হত্যাকাণ্ড স্মরণ করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান বক্তব্যের শুরুতেই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর অভিশপ্ত রাতে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির নীল নকশায় শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যসহ সকল শহিদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু ব্যক্তি মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেনি বরং তারা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিশ্চিহ্ন করতে। কিন্তু ঘাতকেরা বাঙালির মন থেকে যেমন বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবিকে মুছে ফেলতে পারেনি; তেমনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিরন্তন শিখাকেও নিভিয়ে দিতে পারেনি।
রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সবাইকে, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপান্তর করার কাজে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
এছাড়াও রাষ্ট্রদূত কোভিড পরবর্তীতে এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান জানান।
আলোচনা পর্ব শেষে, স্বাধীনতা-পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বিষয়ের ওপর নির্মিত দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর, বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পর্ব নিবেদন করা হয়।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত কবিতা আবৃত্তি করা হয়। সবশেষে, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অন্যান্য শহিদ সদস্য ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
যে কারনে দেশে বিনিয়োগে অনাগ্রহী প্রবাসীরা

সক্ষমতা এবং ইচ্ছা থাকলেও প্রবাসীরা দেশে কেন বিনিয়োগে অনাগ্রহী ? এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছেন দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মো. মনির হোসেন। তিনি ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট’স ফোরামের (সিএমজেএফ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। এ সময় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সিনিয়র এ সাংবাদিক সফরের অভিজ্ঞতা নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
অর্থসংবাদের পাঠকদের জন্য স্ট্যটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি অংশ, বিদেশেও সামর্থবান। দেশে তাদের বিনিয়োগের সক্ষমতা ও ইচ্ছা দুটিই রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে তারা বাংলাদেশের উপর বিরক্ত। এরমধ্যে অধিকাংশ প্রবাসীর কমন একটি সমস্যা দেশে থাকা তাদের জমি-জমা সহায় সম্পত্তি দখল হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশিরাই এ কাজ করছে। এমনিতেই বিদেশ যাওয়ার সময় সহায় সম্পত্তির একটি অংশ বিক্রি করে দিতে হয়। এরপর যা বাকী থাকে, তাও দখল হয়ে যায়।
নিউইয়র্কের কাওরানবাজার শপের মালিক বুলবুল। সেখানে ৪টি বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর রয়েছে তার। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান। কিন্তু বাংলাদেশের সব সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে। তিনি জানান-আইনের আশ্রয় নিতে চাইলেও তেমন কোনো লাভ হয় না। কারণ তারা স্বল্প সময়ের জন্য দেশে আসেন। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় যে সময় লাগে, ওই পরিমাণ সময় তাদের কাছে থাকে না।
দ্বিতীয়ত কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ বলে, আপনিতো দেশে থাকেন না। পাড়া প্রতিবেশিকে সম্পত্তিটুকু দান করে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিকার চাইতে গেলেও বিদেশ থেকে এসেছে, এটি শুনলে পুলিশের রেটও কয়েকগুন বেড়ে যায়। শুধু বুলবুল নয়, এ রকম হাজারও অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাসে। প্রবাসীদের বক্তব্য হলো দেশের নীতি নির্ধারকরা তাদের নিয়ে অনেক কথা বলেন। দেশের গর্ব, রেমিট্যান্স যোদ্ধাসহ নানা উপাধী দেওয়া হয়। কিন্তু বিদেশ যাওয়া থেকে শুরু করে কোনো ক্ষেত্রে সরকারের তেমন সহযোগিতা মেলে না।
তাদের মতে, বাংলাদেশের মানুষ কাজ করতে চায় না। প্রবাসী ও বিদেশিরা এয়ার পোর্টে নামার পর টয়লেটে গেলেও পেছনে দুইজন বকশিশের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। এতে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তার সঙ্গে এসব যায় না। বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য না আসার, এটাও একটা কারণ।