ডিএসইর দুঃখ প্রকাশের পরদিনই ফের ভোগান্তিতে বিনিয়োগকারীরা

ডিএসইর দুঃখ প্রকাশের পরদিনই ফের ভোগান্তিতে বিনিয়োগকারীরা
গতকাল রোববার (২৩ আগস্ট) ওয়েবসাইট ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দুঃখ প্রকাশ করা হলেও ফের একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট গত দু’দিন ধরে প্রায় অচল। গত ১৯ আগস্ট নতুন ওয়েবসাইট চালুর পর থেকেই অচলাবস্থা চলছে। ট্রেডিং প্লাটফর্মও বন্ধ ছিল লম্বা সময় ধরে।একই সঙ্গে মোবাইল অ্যাপসও কোন কাজ করছিল না। একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ নির্বাহীরা অর্থসংবাদকে জানিয়েছেন বিক্রি ও ক্রয় আদেশ নিচ্ছেনা ডিএসই ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম। একই সঙ্গে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স ৫৪ হাজার ট্রেড হলেও ডিএসইর ট্রেডিং প্লাটফর্ম দেখাচ্ছে ৭ কোটি। এত বিভ্রান্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।

ওয়েবসাইট না খোলার কারণে সংকটে পড়েছেন অসংখ্য বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডার। বিশেষ করে যেসব বিনিয়োগকারী ব্রোকারহাউজে স্বশরীরে উপস্থিত না হয়ে বাসা বা কর্মস্থলে থেকে শেয়ার কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেন, তাদের কাছে এই ওয়েবসাইটই একমাত্র ভরসা। এখান থেকে শেয়ারের মূল্য ও কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য দেখে তারা শেয়ার কেনাবেচা আদেশ দেন। কিন্তু ওয়েবসাইট না খোলার কারণে তারা লেনদেনে অংশ নিতে পারছেন না। নতুন শেয়ার তো কিনতে পারছেনই না, বর্তমানে হাতে থাকা শেয়ারের দাম বেড়েছে না কমেছে সেটিও জানতে পারছেন না।

অন্যদিকে সপ্তাহের শুরুর দিকে লেনদেন অনেক বেড়ে যাওয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জটির ট্রেডিং প্ল্যাটফরম নিয়েও নানা সমস্যা দেখা দেয়। শেয়ার কেনা বা বেচার অর্ডার বসাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়েছে ব্রোকারহাউজের কর্মীদের।

ডিএসইর ওয়েবসাইট নিয়ে এই দুর্ভোগের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, ডিএসইর ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও দুর্বলতার কারণেই এমন সমস্যা হয়েছে। তাদের মতে, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদেরও এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ তারা যোগ্য লোকককে সঠিক জায়গায় বসাতে পারেনি।

একাধিক বিনিয়োগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হককে নিয়েও। তাদের বক্তব্য, আইসিবিতে দায়িত্ব পালনকালেই অনেক অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। বিনিয়োগকারীরা মনে করেন এমন ব্যাক্তিকে স্টক এক্সচেঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নিজেরাই খাল কেটে কুমির এনেছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।কোন বিষয় নিয়ে গনমাধ্যম থেকে যোগাযোগ করা হলে প্রায় সময়ই তিনি এড়িয়ে চলেন।অথচ জেনেশুনে এমন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী কাজী ছানাউল হককে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচিলকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জামান নামের এক বিনিয়োগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে অর্থসংবাদকে বলেন, কাজী ছানাউল হককে বিডিবিএলে দুই লাখ টাকা বেতনেও নেয়নি, অথচ ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগদান করেছে ১২ লাখ টাকা বেতনে। কার স্বার্থে তাকেিএত টাকা বেতনে নিয়োগ দিয়েছে? বিএসইসির উচিৎ তদন্ত করে অসৎ লোকদেরকে বের করে দেওয়া।

বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, যে লোকের দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমশন কমিশন তদন্ত করছিল তেমন ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পেছনে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিশ্চিত নানা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। তার নিয়োগের অনুমোদন দেওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও (বিএসইসি) তৎকালীন কমিশন এর দায় এড়াতে পারে না।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ডিএসইর ভূমিকা খুবই রহস্যজনক। লেনদেন বাড়ায় কিছুদিন ধরেই লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সফটওয়্যারে ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ নিতে অনেক সময় নিচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান না করে নতুন ওয়েবসাইট চালু করে সমস্যা আরও বাড়ানো হয়েছে।

শুধু ওয়েবসাইট নয়, ভুল মূল্য সংবেদশীল তথ্য প্রকাশসহ অনিয়ম ও অযোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ডিএসইতে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একটি ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ চলছে আগের সব কর্মী দিয়ে, যারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ওইসব পদে দায়িত্ব পালনের উপযোগী নন। এজিএম হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না যেসব কর্মকর্তা তারা ডিজিএম-জিএমের দায়িত্ব পালন করছেন। আর এ কারণেই একের পর পর সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেবার মান বাড়ছে না। ওয়েবসাইটের সমস্যা এরই অংশ, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

ওয়েবসাইট দেখতে না পারার কারণে তারা কোনো ক্ষতির মুখে পড়লে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হকসহ ডিএসইর আইটি বিভাগের কাউকেই পাওয়া যায়নি।

এদিকে নতুন ভার্সন চালুর আগে প্রায় সমসংখ্যক ভিজিটর ডিএসইর ওয়েবসাইটে হিট করেছে। তখন সমস্যা হয়নি। মূলত ওয়েবসাইটটি মানসম্পন্ন না হওয়া আর প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা না করেই চালু করে দেওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারী বেড়ে কয়েকগুণ হলেও যাতে সমস্যা না হয় এমন বিবেচনা রেখে ওয়েবসাইট তৈরি ও হোস্টিং সার্ভার নেওয়া হলে এই দুর্ভোগ এড়ানো যেত।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, বিএসইসির পক্ষ থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে যোগাযোগ করা হচ্ছে।বিষয়টি শক্তভাবে দেখবে বিএসইসি।

এদিকে গতকালই ডিএসইর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী তথা শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধার্থে ডিএসইর আইসিটি বিভাগ ওয়েবসাইটে উন্নত সংস্করণ চালু করেছে। এ কাজ করতে গিয়ে ১৯ ও ২০ আগস্ট ওয়েবসাইটটিতে সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। অনাকাংখিত সাময়িক এ সমস্যার জন্য ডিএসই আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। তবে আজ ২৩ আগস্ট লেনদেনের শুরু থেকেই আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে৷

ডিএসই’র ওয়েবসাইট ব্রাউস করতে যদি কোন অসুবিধা হয় বা পেজ লোডিং এ যদি কোন সমস্যা হয় বা সময় নেয় তবে ব্রাউসারের ক্যাশ/হিস্ট্রি ক্লিয়ার করলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডিএসই৷

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত