ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি

ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
ভূমিকম্পের মৃত্যুর সারি ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে তুরস্ক ও সিরিয়ায়। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনায় আসছে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় থাকা ঢাকার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে। ঘনবসতিপূর্ণ শহরটির ঝুঁকি কমাতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা—এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে এখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা মিয়া বলেন, ‘যেকোনো সময় যেকোনো মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বাংলাদেশে—এমন সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় দেশকে তিনটা জোনে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ, রংপুর থেকে শুরু করে সিলেটের এ জোনটা উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী থেকে শুরু করে কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চল মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ। আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকটা নিম্নঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়ে থাকে।’

রাজধানীর পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা যায়, অল্প জায়গায় অনেক মানুষের বসবাস। ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে একটি আরেকটির গা ঘেঁষে। যে ভবনটি তিনতলা করার কথা সেটি করা হয়েছে চার-পাঁচতলা। দুর্বল অবকাঠামো এবং পুরনো জীর্ণশীর্ণ। একেকটি ফ্ল্যাটে থাকে ১০-১৫ জন। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় সেখানকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাই দিনরাত মানুষের ভিড় লেগে থাকে। রাজধানীতে ভূমিকম্প আঘাত হানলে ভবনগুলো থেকে তাত্ক্ষণাৎ সরে যাওয়ার ব্যবস্থাটুকুও নেই। রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় সেখানে উদ্ধারকাজ করাও কঠিন বলছে ফায়ার সার্ভিস।

অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা মিয়া বলেন, ‘ভবনের ফ্রিকোয়েন্সি এবং গ্রাউন্ডের ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে সম্পর্ক আছে। দেখা যায় একই জায়গায় দোতলা একটা ভবন ভেঙে যাচ্ছে, কিন্তু ১০ তলা ভবন ঠিকই দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা অনেক বেশি ঘনবসতির শহর। এখানে ভবন থেকে ভবনে যে দূরত্ব থাকা দরকার সেটি মানা হয় না। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক খারাপ।’

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকার ভবনের যে কোয়ালিটি, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। অনেক এলাকায়ই বিশেষ করে গত ১০ বছরে, অল্প কিছু মাটি ভরাট করে অনেক বড় বড় ইমারত হচ্ছে। রাজউকে যখন অনুমতির জন্য আবেদন জমা দিচ্ছে, তখন আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং জমা দিচ্ছে, কিন্তু আর্কিটেকচারালি ডিজাইনগুলো কীভাবে হবে, সেটি উল্লেখ করা হয় না। নীতিমালাতেই নেই। কিন্তু ভবনের নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি।’

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার ২০০৯ সালে করা এক যৌথ জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তত্পরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই।

নেপালে ২০১৫ সালে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার। সেই সিদ্ধান্তও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া ওই বৈঠকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এনডিএমআইএস) নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এটিও আলোর মুখ দেখেনি।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘অনেক বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে ঢাকায়। হতে পারে সেগুলো অনেক নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। কিন্তু যখন বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে, তখন হিসাবনিকাশ ওলটপালট হয়ে যাবে অনেক ক্ষেত্রেই। সম্প্রতি রাজউক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দৌড়টা হচ্ছে তালিকা করা পর্যন্তই। পরে এর কোনো তদারকি নেই।’ এ নগর পরিকল্পনাবিদ আরো বলেন, ‘অনেক সরকারি স্থাপনা, স্কুল, হাসপাতাল—এসব প্রতিষ্ঠানও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। কিছু কিছু জায়গায় তো ভূমিকম্প ছাড়াই ভবন ধসে যাচ্ছে। এমনিতেই অনেক ঝুঁকিতে আছে, তার মধ্যে যদি ভূকম্পন হয়েই যায়, তাহলে না আছে পর্যাপ্ত উদ্ধার ব্যবস্থা, না আছে খালি জায়গা; যেখানে মানুষ গিয়ে দাঁড়াবে। তার মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ থেকে ভূমিকম্পের সময় আরো বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। সব মিলিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটা শহর ঢাকা।’

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

রাজধানীতে সন্ধ্যার পর বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক
শনিবার রাজধানীর মার্কেট বন্ধ যেসব এলাকায়
শুক্রবার রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ
রাজধানীতে আজ যেসব মার্কেট বন্ধ
বুধবার রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ
আজ ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর
সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
গুলিস্তানে বাসে আগুন
রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ শনিবার
রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ বৃহস্পতিবার