তেলের নতুন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ভারত

তেলের নতুন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ভারত
বৈশ্বিক তেলের বাজারে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ভারত। দেশটি রাশিয়া থেকে কম দামে আরও বেশি তেল কিনে পরিশোধনের পর তা রপ্তানি করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। মস্কোর অর্থ উপার্জনের ক্ষতি করা এবং একই সঙ্গে নিজেদের জ্বালানি সরবরাহ অবিঘ্নিত রাখার জন্য ভারতে শোধিত এই তেল কিনতে আপত্তি করছে না পশ্চিমারা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের খবর অনুসারে, রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার ওপর ইউরোপের নতুন জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরে বৈশ্বিক তেল মানচিত্রের আরও কেন্দ্রে চলে আসবে ভারত।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক-ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো বেন কাহিল বলেন, মার্কিন রাজস্ব কর্মকর্তাদের প্রধান লক্ষ্য দুটি: তেলের বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখা এবং রাশিয়াকে মুনাফা বঞ্চিত করা। তারা জানেন যে, ভারতীয় এবং চীনা শোধনকারীরা মূল্য ছাড়ে অপরিশোধিত রুশ তেল কিনে এবং বাজারমূল্যে পণ্য রপ্তানি করে বড় মুনাফা অর্জন করতে পারে। এতে তাদের (পশ্চিমাদের) সমস্যা নেই।

ডেটা ইন্টেলিজেন্স ফার্ম কেপলারের তথ্যমতে, গত মাসে নিউইয়র্কে প্রতিদিন প্রায় ৮৯ হাজার ব্যারেল পেট্রল ও ডিজেল পাঠিয়েছে ভারত, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর জানুয়ারিতে ইউরোপে দৈনিক কম সালফারযুক্ত ডিজেল পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ব্যারেল, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ।

রোববার রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম রপ্তানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে তেলবাজারে দক্ষিণ এশীয় দেশটির গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজার বিপুল পরিমাণ ডিজেল হারাবে এবং ক্রেতা আরও বেড়ে যাবে, বিশেষ করে ইউরোপে। তেল সরবরাহ ব্যবস্থায় রাশিয়ার এই শূন্যতা এশীয় দেশগুলোর জন্য বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

এর কারণে কম দামি রুশ তেল ভারতের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। দেশটি তার অপরিশোধিত তেলের চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দামের ‍সুযোগ নিয়ে অধিক লাভের আশায় ভারতীয় পরিশোধনকারীরা এরই মধ্যে তেল রপ্তানি বাড়িয়েছে।

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক সংস্থা আইএনজি গ্রোয়েপ এনভির পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান ওয়ারেন প্যাটারসনের মতে, ভারত হলো পরিশোধিত পণ্যের একটি নিট রপ্তানিকারক, যার বেশিরভাগই যাবে পশ্চিমে। এটি তাদের (পশ্চিমা বিশ্ব) বর্তমান সংকট কমাতে সাহায্য করবে। এটি পরিষ্কার যে, এসব পণ্যের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামালের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ রাশিয়া থেকে উদ্ভূত।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্দেশিকা বলছে, অপরিশোধিত রুশ তেল ভারতের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্ভূত কোনো দেশে প্রক্রিয়াজাত করা হলে সেই পরিশোধিত পণ্যগুলো ইইউ দেশগুলোতে সরবরাহ করা যেতে পারে। কারণ, তখন পণ্যগুলোকে আর রাশিয়ায় উদ্ভূত বলে মনে করা হবে না। অর্থাৎ, ভারত ইইউর আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন গ্লোবাল এনার্জি পলিসির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং ওবামা প্রশাসনের সাবেক উপদেষ্টা জেসন বোরডফ বলেন, নিজেদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অর্থনৈতিক কষ্ট দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর যে পরিকল্পনা, তাতে ভারতের আরও বেশি রুশ তেল কেনার বিষয়টি কোনো ত্রুটি নয়, বরং এটি একটি বৈশিষ্ট্য।

আগামী সোমবার ব্যাঙ্গালোরে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক ফোরামে অংশ নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির নির্বাহী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তিন দিনব্যাপী এ ফোরামে ভারতের তেল-গ্যাস রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হবে বলা বাহুল্য।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেট্রোল-ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণা
ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে মুসলিম ৬ দেশ
মারা গেছেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর
২০২৩ এ আলোচিত বিশ্বের সেরা ১০ ঘটনা
ব্রিকসে যোগ দেবে না আর্জেন্টিনা
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী
১০ টাকাতেই মিলবে বই
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট
সৌদি আরবে আরো একটি স্বর্ণের খনির সন্ধান
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপলো ইন্দোনেশিয়া