'রিজার্ভ একবার কমতে শুরু করলে সামাল দেওয়া কঠিন'

'রিজার্ভ একবার কমতে শুরু করলে সামাল দেওয়া কঠিন'
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একবার কমতে শুরু করলে তা সামাল দেওয়া কঠিন বলে জানিয়েছে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। দেশের রিজার্ভ কমার প্রবণতার দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বড় বিষয় নয়, দেখতে হবে, প্রবণতা কী। রিজার্ভ কমার প্রবণতা নিম্নগামী থাকলে তা ঠেকানো কঠিন।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ষষ্ঠ সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন শুরু হয়। দুই দিনের এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের দেড় শ’ অর্থনীতিবিদ অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ২৩টি অধিবেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অর্থনীতি-গবেষকরা ৮০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। সম্মেলন শেষ হচ্ছে রোববার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের রিজার্ভ একসময় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারও ছিল। তাই বলছি, পরিমাণ অনেক সময় বড় সমস্যা নয়, প্রবণতাটাই বড় কথা।

সম্মেলনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণ দিতে এবার আইএমএফ বেশি শর্ত দেয়নি।

তবে আহসান মনসুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ খেলাপি ঋণ নিয়ে বলেন, অনেক দশক ধরে দেখেছি, কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে? এটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যাপার। খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে আইএমএফের আমলাতন্ত্র খুশি, আমরাও খুশি।

রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে বলে যে সমালোচনা করা হয়, সেটি নিয়েও বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই আছে, তবে সংসদে অনেক সদস্যই ব্যবসায়ী।

অর্থনৈতিক এই সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, সেটি দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইএমএফ আমাদের আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছে সেগুলো যৌক্তিক। তাদের পরামর্শে আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। এসব প্রস্তাব সরকার ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় এখন অন্যান্য দাতা সংস্থাও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে।

গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আইএমএফ। দুই দিন পরেই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে।

এই ঋণ নিতে সংস্থাটির ২৮টি শর্ত মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর অন‌্যতম হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো। আইএমএফের অন্য শর্তের মধ্যে আছে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো। সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সরকার একমত পোষণ করেছে। বৈশ্বিক সঙ্কটে দেশের অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা ও উত্তরণের উপায় নিয়েই সানেমের এবারের সম্মেলনে আলোচনা করেন বক্তারা।

সম্মেলনের প্রথম সেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, আইএমএফের ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না, বরং টার্নিং পয়েন্ট। এই ঋণ পাওয়ার ফলে এখন অন্যান্য দাতা সংস্থা বাংলাদেশের ব্যাপারে আস্থা পাবে। তাদের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া সহজ হবে।

দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে বলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব আঘাত এসেছে সেগুলোর কোনোটিতে প্রধান্য দেওয়া উচিত, তা খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে এসব আঘাতের প্রভাব কেমন, তার উপর জোর দিতে হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশের বেশি উল্লেখ করে বেসরকারি খাতে শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে সন্তোষ প্রকাশ করেন। শামসুল আলমের এই কথা প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যয়ের বিকল্প নেই, বেসরকারি খাত থাকবে পরিপূরক হিসেবে। ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় ৫ শতাংশের বেশি। শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এখন সমান।

আইএমএফ-এর শর্ত দেওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, আইএমএফ বাংলাদেশকে কোনো শর্ত দেয়নি। তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছে। তারা আমাদের যে পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো আমাদেরও চাওয়া। সংস্কার কোনো বিপ্লব নয় বা রাতারাতি সম্ভব নয়। সংস্কার করতে সময় লাগে, এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু সংস্কার আনা হয়েছে বলেই আইএমএফ আমাদের ঋণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত নয়, সংস্থাটির পরামর্শেই আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। আইএমএফের লোনের ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো গত একটি বছর কঠিন যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্যও। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়া, ডলার সঙ্কট, রিজার্ভের ক্রমাগত পতন, প্রবাসী আয়ে ভাটা, ইত্যাদির কারণে গত এক যুগের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার কথা বলছেন তারা।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ