অর্থনীতি
রিজার্ভ থেকে ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি

ডলারের তীব্র সংকট দীর্ঘদিন ধরেই। সংকট কাটাতে উচ্চাভিলাসী পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাংক। তবে সংকট যে সহসা কাটছে না, এ এখন অনেকটাই স্পষ্ট। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত, জরুরি আমদানির দায় মেটাতেই এ ডলার সহায়তা।
এরপরও আটকে আছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। ডলার সংকটে আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এসব সমস্যার সমাধান দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারির ২৩ তারিখ পর্যন্ত) ৮৫০ কোটি বা ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো এক পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এতো পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি।
সবশেষ গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা দেওয়ার কারণে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ার পরও রিজার্ভ কমছে। সবশেষ গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কাছে পাঁচ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। ফলে দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭৬২ কোটি বা ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে উল্টো প্রায় ৮০০ কোটি বা ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের সাত মাস না পেরোতেই ৮৫০ কোটি বা ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেমিটেন্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে পারলে অভ্যন্তরীণ ডলার সংকট অনেকাংশে কমে আসবে। চলতি মাস জানুয়ারির প্রথম ২০ দিনে দেশে এক হাজার ৩১৫ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে ব্রয়লার

মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি (লাল) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম। গত শুক্রবারেও প্রতি কেজি বয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা।
ক্রেতারা বলেন, ২৭০/২৮০ টাকায় কেজিতে ব্রয়লার মুরগি আমাদের মতো ক্রেতারা কীভাবে কিনবেন? হঠাৎ করেই ব্রয়লার দাম এতটা বেড়ে গেল, কেউ কি দেখার নেই? কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ব্যবসায়ীরা যেমন ইচ্ছে তেমন দাম বাড়াবে? আমরা সাধারণ-গরিব ক্রেতারা এত দামে কী কিনতে পারব? গত শুক্রবারেও বাড়তি দামে ২৫০ টাকায় ব্রয়লার কিনেছি, আজ আরও দাম বাড়িয়ে চাওয়া হচ্ছে ২৭০/২৮০ টাকা।
বিক্রেতারা বলেন, গতকাল থেকে ব্রয়লারের বাজার আবার বেড়েছে। পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনেছি। গত দুই দিনে বৃষ্টি ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। ব্রয়লারের বাচ্চার দাম আর ফিডের দাম বাড়তি থাকায় মুরগির দামও বেড়েছে। তবে কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তা জানা নেই। রমজানের আগে বাজার আরও বাড়তে পারে। এখন যে দামে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে তা ব্রয়লারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, গতকাল (সোমবার) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসেবে এক বছর আগে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমানে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
‘সংকটেও’ বাড়ছে ধনীদের হিসাব

গত এক বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে প্রায় আট হাজার। এর মাধ্যমে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা এখন এক লাখ ৯ হাজার ৯০০ ছাড়িয়েছে। দুই বছরে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার।
সোমবার (২০ মার্চ) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। এমন অবস্থায় ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে আগের জমানো অর্থ তুলে ব্যয় মেটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও এক শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। এরা হচ্ছে বিত্তশালী বা বড় প্রতিষ্ঠান। এটাকেই দেশে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা আছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। দুই বছরে বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬টি এবং তিন বছরে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি হিসাবে জমা ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।
তার আগের বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি।
করোনা মহামারির পর মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম থেকে হচ্ছে। এই সময়েও দেশের একটি শ্রেণির মানুষের আয় বেড়ে যাচ্ছে। এরা হচ্ছে বিত্তবান ও বড় বড় প্রতিষ্ঠান। তাদের আয় আগেও বেশি ছিল এখন আরও বেড়েছে
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। দুই বছরে বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬টি এবং তিন বছরে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব।
এ অবস্থায় দেশের উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে, যা বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, করোনা মহামারির পর মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম থেকে হচ্ছে। এই সময়েও দেশের একটি শ্রেণির মানুষের আয় বেড়ে যাচ্ছে। এরা হচ্ছে বিত্তবান ও বড় বড় প্রতিষ্ঠান। তাদের আয় আগেও বেশি ছিল এখন আরও বেড়েছে। এর মানে উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এটাই অর্থনৈতিক বৈষম্য। যে কারণে দেশের কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ক্যাটাগরিতে কোটি টাকার আমানতকারীদের হিসাব করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ১৬৭টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৯৪৫টি হিসাব। তাদের হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
এছাড়া ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির টাকার হিসাব রয়েছে তিন হাজার ৮৪৫টি, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১৮৩৩টি, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ১৪৩টি, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ৮৮৭টি, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৭২টি এবং ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩১৫ আমানতকারীর হিসাব। ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৫৭৭টি। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬২টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ দুই লাখ ২৯ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে তা একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে কোটিপতি হিসাব দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এক বছরে বাংলালিংকের আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ

বার্ষিক রাজস্ব আয়ে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংক। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। আর সব মিলিয়ে বাংলালিংকের আয় বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলালিংক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ভিওনের গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান তেরজিওগ্লু, বাংলালিংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা চেম ভেলিপাসাওগ্লু, প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা উপাঙ্গ দত্ত প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলালিংক বলছে, গত বছর পরিষেবা থেকে তাদের আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ডেটা থেকে আয় বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এ নিয়ে টানা তিন প্রান্তিকে আয়ের ক্ষেত্রে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলালিংকের।
আয়ের পাশাপাশি বেড়েছে মুঠোফোন কোম্পানিটির গ্রাহকসংখ্যাও। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে দেশে মুঠোফোন অপারেটরদের মধ্যে বাংলালিংক সর্বোচ্চসংখ্যক গ্রাহক অর্জন করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা এখন ৪ কোটি।
দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে দাবি বাংলালিংকের। এ ছাড়া গত বছর বাংলালিংক প্রায় ৪০ শতাংশ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ফলে মোট সাইটের সংখ্যা ১৪ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে।
বাংলালিংকের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ভিওনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলালিংকের ডিজিটাল বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম টফির সক্রিয় মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫২ লাখ, যা আগের বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের এক্সক্লুসিভ লাইভস্ট্রিমিংয়ের কারণে টফির জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলালিংক।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলালিংক বোর্ডের চেয়ারম্যান কান তেরজিওগ্লু বলেন, টানা তিন প্রান্তিকে বাংলালিংকের রাজস্ব আয়ে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে আমাদের সাফল্যের প্রমাণ। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল মার্কেটে ধারাবাহিকভাবে উন্নত ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে বাংলালিংক।
বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস বলেন, ‘গত বছর আমাদের প্রবৃদ্ধির হার টেলিকম খাতের মোট প্রবৃদ্ধির হারের দ্বিগুণ। দ্রুততম ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে ও দেশের প্রতিটি এলাকায় উন্নত ডিজিটাল সেবা দিয়ে আমরা দেশব্যাপী বিস্তৃত অপারেটরের মর্যাদা অর্জন করেছি।’
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আরও ৪ জেলায় ‘বাংলা কিউআর’ কোডে লেনদেন চালু

সর্বজনীন কুইক রেসপন্স কোডের (কিউআর) মাধ্যমে নগদ লেনদেনহীন ব্যবস্থা ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে সেবাটির সম্প্রসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সেবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, নাটোর ও রংপুর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সোমবার (২০ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অন বিজনেস এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বিভিন্ন ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, নাটোর ও রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে এ উদ্যোগে যেসব ব্যাংক সম্পৃক্ত রয়েছে, সেগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এ ছাড়া মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট এবং আন্তর্জাতিক পরিশোধ স্কিম মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা এই সেবা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।
প্রতি বছর কোরবানির পশু কেনার সময় শোনা যায় অনেকের পকেটে টাকা নাই। চুরি হয়ে যায়। নতুন এ নগদ লেনদেনহীন ব্যবস্থা এ সমস্যা বন্ধের পাশাপাশি কেনাকাটাকে আরও সহজ ও সময় সাশ্রয়ী করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, টাকা বহন, প্রটেকশন ইত্যাদি কাজে প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। এই টাকাটা আসলে জনগণের ট্যাক্সের টাকা। আমরা যদি এই ক্যাশলেস ব্যবস্থা চালু করতে পারি তাহলে টাকা বহন, নিরাপত্তা ইত্যাদি কাজগুলো অনেক সাশ্রয়ী হবে। এক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের মাঝে এ সেবা ছড়িয়ে দেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এ সেবাকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন গভর্নর আব্দুর রউফ।
এমন উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার মাসে এমন একটি মহান উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। এর সূচনা হয়েছিল ২০১৯ সালে কিন্তু এটির সম্প্রসারণে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এজন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ জানাই।
ভিসি আরো বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অর্জনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে সেবার গুণগত মান ও স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হলো। এটির পুরো মাত্রায় সফলতা আনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় সহযোগিতা করবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’র কার্যক্রম শুরু হয়। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের ১৮ই জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর শুভ সূচনা করে। এ সেবার আওতায় বাংলা কিউআর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত যে কোনো ব্যাংক বা মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীরা অন্য যে কোনো ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী ব্যবসায়ীদের কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড স্ক্যান করে পণ্য বা সেবামূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অনলাইন উদ্যোক্তাদের বড় সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন উদ্যোক্তাদের খুচরা কেনাকাটায় লেনদেন সম্পন্ন করতে ‘ব্যক্তিগত রিটেইল হিসাব’ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে এই হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোনও ফি না নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবগুলোর বিপরীতে কোনও প্রকার হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় করা যাবে না।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব পণ্য বিক্রি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত সেবার লেনদেন করা ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে (এমএফএস) গ্রাহকের জন্য ন্যূনতম জমার বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শ্রম নির্ভর অতিক্ষুদ্র বা ভাসমান উদ্যোক্তা, প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীরাও এ ধরনের হিসাবের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারবেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্যোক্তারা ব্যাংক বা এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে খোলা চলতি হিসাবের মাধ্যমেও লেনদেন করতে পারবেন। যাদের হিসাব নেই তাদের ক্ষেত্রে চলতি হিসাব খুলে এ ধরনের রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনও লেনদেন সীমা থাকবে না।
তবে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি (গ্রাহক তথ্য) দিয়ে খোলা হিসাবে মাসে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা লেনদেন করা যাবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পেশাজীবী সমিতির দেওয়া প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে ব্যাংক বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নিজস্ব কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে এ হিসাব খোলা যায়। তবে সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে এ হিসাব খোলা যাবে না। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে হিসাব খুলতে হয়।
এ ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট নিতে পারেন। নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করতে পারেন। তবে এই হিসাবে নগদ টাকা জমা, অন্য কারও হিসাবে টাকা পাঠানো, ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা আনা যায় না।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এ ধরনের হিসাবে ৩০ হাজার টাকা বিক্রয়মূল্য সংগ্রহ করতে পারবেন। মাসে এই সীমা ৫ লাখ টাকা। মাসে পাইকারের পাওনা পরিশোধ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। এছাড়া মোবাইল ওয়ালেট সেবার আওতায়ও এ ধরনের হিসাব খোলা যায়। সেখানেও মাসে সর্বোচ্চ লেনদেনের সীমা ১০ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে অনলাইন উদ্যোক্তাদের খুচরা কেনাকাটায় লেনদেন সম্পন্ন করতে ‘ব্যক্তিগত রিটেইল হিসাব’ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থসংবাদ/এসএম