ধর্ম ও জীবন
শবে মেরাজ ১৮ ফেব্রুয়ারি

দেশের আকাশে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এতে করে পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে। এই হিসাবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ উদযাপিত হবে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনিম হাসান।
প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের ফেসবুক পেজে ১৯ ফেব্রুয়ারি শবে মেরাজ উদযাপিত হবে বলে জানায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা তারিখ পরিবর্তন করে ১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে উদযাপিত হওয়ার কথা জানায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৪ হিজরি, ৯ মাঘ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি. সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
এজন্য মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী ২৬ রজব ১৪৪৪ হিজরি, ১৮ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ উদযাপিত হবে।
রজব হিজরি সনের বিশেষ ও মহিমান্বিত একটি মাস।এ মাস আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। তাই এই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ মাস আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি।
এ মাসের একটি রাত শবে মেরাজ। ইসলামে শবে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক অর্থাৎ (ফরজ) নির্ধারণ করা হয় এবং দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধান নির্দিষ্ট করা হয়।
বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে প্রকাশিত ও প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ধর্ম ও জীবন
জুমার দিন রোজা রাখতে ইসলামের বিধি-বিধান

নিঃসন্দেহে জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এদিনের সওয়াব-মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও আজহার মতো। মুসলমানদের কাছে এ দিন অপরিসীম ফজিলতের। আল্লাহ তাআলার কাছে জুমার গুরুত্ব এত বেশি যে, পবিত্র কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে।
নবী কারিম (সা.) বলেন- যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
জুমার দিন তাড়াতাড়ি এবং সবার আগে মসজিদে যাওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, জুমার দিন জুমার নামাজের জন্য যে যত তাড়াতাড়ি মসজিদে আসবে সে তত বেশি সওয়াব পাবে।
এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৮২)
জুমার দিন কেউ রোজা রাখতে চাইলে পারবে। কিন্তু যদি কেউ শুধু জুমার দিনকে রোজা রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে নেয় তাহলে তা উচিত হবে না। আলেমদের মতে, জুমার দিনে রোজা রাখা নিষেধ নয় তবে এককভাবে জুমার দিনকে রোজা রাখার জন্য নির্দিষ্ট করাও উচিত নয়।
হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন কেউ যেন রোজা পালন না করে। কিন্তু যদি কেউ জুমার দিনের আগে বা পরে একদিন রোজা পালন করে তাহলে সে জুমার দিন রোজা পালন করতে পারে। ( মেশকাতুল মাসাবিহ, ১৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫৫০)
এই হাদিসের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে শুধু শুক্রবারে বা জুমার দিনে রোজা রাখবে।
অর্থসংবাদ/কেএ
বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে প্রকাশিত ও প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
জুমার প্রথম খুতবা: ইবাদত ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি

আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ইংরেজি, ১৫ পৌষ ১৪২৯ বাংলা, ০৫ জমাদিউস সানি, ১৪৪৪ হিজরি। জমাদিউস সানি মাসের প্রথম জুমা আজ। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- ইবাদত ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি। নামাজ ফরজ ইবাদত। এ ইবাদত ছেড়ে দেওয়া এবং এর পরিণতি সম্পর্কে আজকের আলোচনা। নামাজ ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। এরপর নামাজ ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا
‘তাদের পরে এলো এমন এক অসৎ বংশধর যারা নামাজ বিনষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। সুতরাং শিগগির তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা মারইয়াম: আয়াত ৫৯-৬০)
নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এ আয়াত সম্পর্কিত এক হাদিসে এসেছে, এদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ষাট বছরের পর থেকে খারাপ উত্তরসূরিদের আবির্ভাব হবে, যারা নামাজ বিনষ্ট করবে, প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে, তারা অচিরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামে নিপতিত হবে। তারপর এমন কিছু উত্তরসূরি আসবে যারা কোরআন পড়বে অথচ তা তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নভাগে যাবে না। আর কোরআন পাঠকারীরা তিন শ্রেণির হবে: মুমিন, মুনাফিক এবং পাপিষ্ঠ। বর্ণনাকারী বশীর বলেন, আমি ওয়ালিদকে এ তিন শ্রেণি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কোরআন পাঠকারী হবে অথচ সে এর উপর কুফরকারী, পাপিষ্ঠ কোরআন পাঠ্যকারী হবে যে এর দ্বারা নিজের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা করবে। আর ঈমানদার কোরআন পাঠ্যকারী হবে যে এর ওপর ঈমান আনবে।’ [মুসনাদে আহমাদ, ইবনু হিব্বান)
হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ’নামাজ নষ্ট করলো’ এর অর্থ এই নয় যে, নামাজ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছে। বরং নির্দিষ্ট সময়ের পর আদায় করেছে।’ আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন-
فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ ۙ
‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের নামাজে অমনোযোগী।’ (সুরা মাউন : আয়াত ৪-৫) অর্থাৎ তারা নামাজের ব্যাপারে আলস্য ঔদাসিন্য প্রদর্শন করে থাকে।
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-
الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ অর্থাৎ যারা তাদের নামাজের সময় বিলম্বিত করে। এই ধরনের লোকদের কোরআন অবশ্য নামাজি বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু নামাজ আদায়ে আলস্য ও ঔদাসিন্য করার কারণে তাদেরকে ‘ওয়াইল’ বা কঠিন শাস্তির সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে। কারও কারও মতে জাহান্নামের কুপ বিশেষকে ‘ওয়াইল’ বলা হয়েছে। এতে পৃথিবীর পাহাড়-পর্বতগুলো নিক্ষেপ করা হলে এর ভীষণ উত্তাপে পাহাড়-পর্বতের পাথরগুলো পর্যন্ত গলে যাবে। এ স্থান এমন লোকের আবাসস্থল হলে যারা নামাজ সম্পর্কে উদাসীন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর বিলম্বে বা দেরিতে নামাজ আদায় করে। তবে তারা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে মুক্তির আশা করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ৯)
এখানে আল্লাহ তাআলা খাঁটি মুমিনদেরকে সম্বোধন করে সতর্ক করছেন যে, তোমরা মুনাফিকদের ন্যায় দুনিয়ার মহব্বতে মগ্ন হয়ে যেয়ো না। যেসব বিষয় মানুষকে দুনিয়াতে আল্লাহ থেকে গাফেল করে, তন্মধ্যে দুটি সর্ববৃহৎ-ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। তাই এই দুটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নতুবা দুনিয়ার যাবতীয় ভোগ-সম্ভারই উদ্দেশ্য। আয়াতের সারমর্ম এই যে, ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততির মহব্বত সর্বাবস্থায় নিন্দনীয় নয়। কিন্তু সর্বদা এই সীমানার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এসব বস্তু যেন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে দেয়। এখানে ‘আল্লাহর স্মরণের’ অর্থ কোনো কোনো তফসীরবিদের মতে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কারও মতে হজ ও জাকাত এবং কারও মতে কোরআন। হজরত হাসান বসরি রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর স্মরণের অর্থ এখানে যাবতীয় আনুগত্য ও ইবাদত।’ (কুরতুবি, ফাতহুল কাদির)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إنَّ أوَّلَ ما يُحاسَبُ به العَبْدُ يَوْمَ القِيامةِ مِن عَمَلِه صَلاتُه، فإن صَلَحَتْ فقدْ أَفلَحَ وأَنجَحَ، وإن فَسَدَتْ فقدْ خابَ وخَسِرَ
কেয়ামতের দিন বান্দার আমলগুলোর মধ্যে সবার আগে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ঠিক মতো আদায় হলে সে সাফল্য অর্জন ও মুক্তি লাভ করবে; অন্যথায় সে ব্যর্থতার নৈরাশ্যে নিমজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (তাবারানি)
জাহান্নামীদের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, বেহেশতের অধিকারীগণ অপরাধীগণকে জিজ্ঞাসা করবে-
مَا سَلَکَکُمۡ فِیۡ سَقَرَ قَالُوۡا لَمۡ نَکُ مِنَ الۡمُصَلِّیۡنَ وَ لَمۡ نَکُ نُطۡعِمُ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ کُنَّا نَخُوۡضُ مَعَ الۡخَآئِضِیۡنَ وَ کُنَّا نُکَذِّبُ بِیَوۡمِ الدِّیۡنِ حَتّٰۤی اَتٰىنَا الۡیَقِیۡنُ فَمَا تَنۡفَعُهُمۡ شَفَاعَۃُ الشّٰفِعِیۡنَ
‘কিসে তোমাদের জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করালো? তারা বলবে, ‘আমরা নামাজ আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’। ‘আর আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না’। ‘আর আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সঙ্গে (বেহুদা আলাপে) মগ্ন থাকতাম’। ‘আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম’। ‘অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে’। অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকার করবে না।’ (সুরা মুদ্দাসির : আয়াত ৪২-৪৮)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বিশুদ্ধ হাদিসে বলেছেন-
اَلْعَهْدَ الَّذِىْ بَيْنَنَا وَ بَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
‘আমাদের এবং অমুসলিমদের মধ্যে (পার্থক্য সূচিত করে) নামাজের প্রতিশ্রুতি। যে নামাজ পরিত্যাগ করেছে সে কাফের হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ)
অন্য এক হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-
بَيْنَ الْعَبْدِ وَ بَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
‘মুমিন বান্দা ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিজি)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-
مَنْ فَأتَتْهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ
‘যার আসরের নামাজ ছুটে গেছে তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে।’ (বুখারি)
নামাজ পরিত্যাগকারীর পরিণাম সম্পর্কে হাদিসের আরও কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
১. যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিলো সে আল্লাহর জিম্মাদারি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো।’ (সুনান)
২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা মুখে উচ্চারণ করবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত পরিশোধ করবে। এরূপ করলে তারা আমার পক্ষ থেকে জান-মালের নিরাপত্তা পাবে। ঐগুলোর হক নিয়মিত আদায় করতে হবে অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মতো ঐগুলো আদায় করতে হবে। এর ফলে তাদের হিসাব আল্লাহর জিম্মায় থেকে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৩. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নামাজের হেফাজত করবে, কেয়ামতের দিন এটা তার জন্য আলাকবর্তিকা, পথের দিশারী ও মুক্তির কারণ হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে না, তার জন্য উহা না হবে আলোকবর্তিকা, না হবে পথের দিশারী, না হবে মুক্তির অবলম্বন। কেয়ামতের দিন ফেরাউন, কারুন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সঙ্গে তার উত্থান হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানি)
৪. হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ নষ্ট করলো; ইসলামে তার কোনো অংশই রইলো না।’
৫. ইমাম আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করলো; তার ওপর থেকে মহান ও মহিয়ান আল্লাহর জিম্মাদারী খতম হয়ে গেলো।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৬. ইমাম বায়হাকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের কোন জিনিসটি আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। তিনি বললেন-
الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا وَ مَنْ تَرَك الصَّلَاةَ فَلَا دِيْنَ لَهُ وَالصَّلَاةُ عَمَادُ الدِّيْن
নামাজ, সেটা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা। যে নামাজ পরিত্যাগ করলো; তার কোনো ধর্ম নেই। আর নামাজ হচ্ছে ধর্মের ভিত্তি।’ (বায়হাকি)
৭. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘বালক (ও বালিকা) যখন ৭ বছরে উপনীত হয় তখন তাকে নামাজের আদেশ দাও এবং যখন সে দশ বছরে উপনীত হয় তখন নামাজ না পড়লে তাকে প্রহার করো।’ (আবু দাউদ)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘সাত বছর বয়সে নিজ নিজ সন্তান-সন্ততিকে নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের প্রহার করো এবং পৃথক পৃথক শয্যায় তাদের শয়নের ব্যবস্থা করো।’ (আবু দাউদ)
ইমাম আবু সুলায়মান খাত্তাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বাচ্চা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে নামাজ পরিত্যাগ করলে তার শাস্তির কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।
সামর্থ থাকা সত্ত্বেও জামাতে নামাজ পরিত্যাগ করার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یَوۡمَ یُکۡشَفُ عَنۡ سَاقٍ وَّ یُدۡعَوۡنَ اِلَی السُّجُوۡدِ فَلَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ خَاشِعَۃً اَبۡصَارُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّۃٌ ؕ وَ قَدۡ کَانُوۡا یُدۡعَوۡنَ اِلَی السُّجُوۡدِ وَ هُمۡ سٰلِمُوۡنَ
‘সে দিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। আর তাদেরকে সেজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টিসমূহ অবনত অবস্থায় থাকবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ তাদের তো নিরাপদ অবস্থায় সেজদা করার জন্য আহবান করা হতো (তখন তো তারা সেজদা করেনি)।’ (সুরা কলম : আয়াত ৪২-৪৩)
কেয়ামতের দিন তাদের অনুশোচনার অপমান জ্বালা ভোগ করতে হবে। অথচ দুনিয়াতে তাদেরকে নামাজের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল। হজরত কাব আল আহবার বলেন, আল্লাহর শপথ! এ আয়াতটি জামাত পরিত্যাগকারীদের প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও জামাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে কঠিন ও সুস্পষ্ট হুশিয়ারি সর্তর্কবার্তা আর কী হতে পারে?
৮. জামাত পরিত্যাগকারীদের ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘আমার ইচ্ছে হয় এই নির্দেশ জারি করতে যে, একজন ইমাম হয়ে নামাজ প্রতিষ্ঠা করুক আর আমি লাকড়ি বহনকারী একদল সহচরসহ ওইসব লোকের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেই, যারা নামাজের জামাতে উপস্থিত হয় না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৯. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনলো এবং উহার অনুসরনের পথে অর্থাৎ জামাতে হাজির হওয়ার ব্যাপারে কোনো ওজরই প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়াল; তার ঘরে পড়া কোনো নামাজই কবুল হবে না। প্রকৃত ওজর কি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভয় কিংবা রোগ।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, ইবনু হিব্বান)
১০. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিশাপ-
সেই ইমাম; যার ওপর সমাজের লোক নারাজ।
স্বামী নারাজ থাকা অবস্থায় রাত যাপনকারীনী স্ত্রী এবং
যে ব্যক্তি হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ শুনেও উহাতে সাড়া দেয় না। অর্থাৎ জামাতে হাজির হয় না।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সত্যিকারের নামাজি হওয়ার তাওফিক দান করুন। নামাজ পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। জামাতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্থসংবাদ/এসএম
বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে প্রকাশিত ও প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
জুমার দিনের বিশেষ ১০ আমল

আজ শুক্রবার। সপ্তাহের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন। এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থগুলোতে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম।
এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪) এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল : মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের অনেক আমল হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু আমল ধারাবাহিক উল্লেখ করা হচ্ছে। ১. গোসল করা। ২. উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৪. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা।
এই চারটি আমলের কথা একসঙ্গে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার কাছে থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৩৪৩)
৫. বেচাকেনা বন্ধ রাখা : জুমার দিন আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো। ’ (সুরা : জুমআ, আয়াত : ৯)
৬. দ্রুত মসজিদে যাওয়া : উত্তম আমল হচ্ছে দ্রুত মসজিদে যাওয়া। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি যে একটি গাভি কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর মতো। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)
৭. সুরা কাহফ তিলাওয়াত : মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)
৮. সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পাঠ : অপর হাদিসে সুরা কাহাফের শেষের আয়াত পাঠের সুফল হিসেবে দাজ্জালের ক্ষতি থেকে মুক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না। ’ (সহিহ তারগিব, হাদিস নম্বর : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)
৯. বেশি বেশি দরুদ পাঠ : এই দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)
১০. দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
অর্থসংবাদ/এসএম
বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে প্রকাশিত ও প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
নতুন বছর যেভাবে শুরু করবেন

সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যায়। শুরু আর নতুনের উৎসবটা চিরস্থায়ী হয় না কখনোই। শেষ, হারিয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলাটা বেদনার, কিছুটা স্মৃতি, স্মৃতি কাতরতা থেকেই যায় সব কিছুর শেষে। তবে সব শেষ মানেই বেদনা আর শোক নয়। কিছু শেষের পর শুরু হয় নতুন আয়োজন, যুক্ত হয় নতুন অধ্যায়। বছরের শেষটাও অনেকটাই এমন। স্মৃতি-ফেলে আসা দিনগুলো শুধু ফ্রেমে বাধা হয়ে থাকে। শোক-দুঃখগুলো ভুলে মানুষ শুধু আনন্দ-উৎসব মনে রাখে, নতুনের আনন্দে ভাসে।
মানুষ স্বভাবতই উৎসব উদযাপনে ভাসতে পছন্দ করে। শোক-দুঃখ থেকে দূরে সরে বাঁচতে চায়। তাই নতুন বছর বরণের আয়োজনটা ঘটে করে পালন করে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণে। অনেকটা পাগলামি যেন পেয়ে বসে সবাইকে বছরের প্রথম প্রহরে।
তবে একজন মুমিনের উচিত ফেলে আসা দিনগুলোর ভালো-মন্দ হিসাব করা। কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা…।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)
এদিকে হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)
ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর দাদা তাঁর পিতা ছাবিত (রহ.)–কে পারস্যের নওরোজের দিনে হজরত আলী (রা.)-এর নিকট নিয়ে গিয়েছিলেন এবং হজরত আলী (রা.)–কে কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে। তখন হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম।’ অর্থাৎ মুমিনের নওরোজ প্রতিদিনই। মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নতুন উদ্যমে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। (আখবারু আবি হানিফা রহ.)।
পেছনে ফেলে আসা বিষয়ের ভালো-মন্দ হিসাব করার বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দিতেন সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম মনীষীরা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলতেন, (আখিরাতে) তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগে নিজেরা নিজেদের হিসাব কর। একইভাবে আমল পরিমাপের আগে নিজেরা একটু মেপে দেখ। কেননা আগামী দিনের হিসাব-নিকাশের আগে আজ নিজের হিসাব মিলিয়ে নেওয়া সহজ। (ইগাসাতুল লাহফান, পৃষ্ঠা : ৯৪)
এছাড়া বছরের শুরুতে উৎসবের নামে অনেক অনর্থক কাজে জড়িয়ে পড়ে মানুষ। এতে যেমন গভীর রাতে শব্দ দূষণ হয় এর পাশাপাশি বৃদ্ধ-শিশুসহ অনেকেই কষ্ট পান। গভীর রাতে শব্দ করে মানুষকে কোনও ইবাদতের জন্য ডাকাও নিষেধ ইসলামে।
ওমর রা.-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি মসজিদ-ই-নববীতে এসে প্রতিদিন বিকট আওয়াজে ওয়াজ শুরু করেন। এতে পাশেই হুজরায় অবস্থানরত হজরত আয়েশা রা.-এর কাজে ব্যাঘাত হতো। তাই তিনি ওমর রা.-কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি ওই লোককে নিষেধ করে দেন। লোকটি কিছুদিন পর আবার ওয়াজ শুরু করলে তিনি তাকে শাস্তি দেন।([আখবারু মদিনা, ওমর ইবনে শাব্বাহ : ১/১৫)
এছাড়া উৎসবের নামে অনেক অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকাও ইসলামে শিক্ষা। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)
অর্থসংবাদ/কেএ
বিজনেস নিউজ পোর্টাল অর্থসংবাদে প্রকাশিত ও প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
মক্কা-মদিনাকে মুসলিম বিশ্বের বাণিজ্যকেন্দ্র করার উদ্যোগ

মুসলিম বিশ্বের আকষর্ণের কেন্দ্র পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনা নগরীকে ইসলামী বিশ্বের আর্থিক ও বাণিজ্যিকেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মক্কা চেম্বার অব কমার্স, মদিনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অংশদারিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ৫৭টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তাঁদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। মক্কা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান
আবদুল্লাহ সালেহ কামেল বলেন, এই চুক্তির লক্ষ্য হলো, পবিত্র দুই শহরে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে লজিস্টিক সহায়তা করা এবং বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোর জন্য বিনিয়োগ করা।
এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হবে, যা দুই শহরের ব্যাবসায়িক খাতকে সমৃদ্ধ করবে।
মদিনার চেম্বার অব কমার্সের প্রধান মুনির মুহাম্মদ নাসের জানান, এই চুক্তি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধের প্রচার এবং পবিত্র দুই শহরের গুরুত্ব তুলে ধরার সুযোগ হবে।
অর্থসংবাদ/এসএম