জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যয়ের খোঁজে দুদক

জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যয়ের খোঁজে দুদক
জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের তথ্য অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ জীবন বিমা কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে দুদক থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে দুদক থেকে একাধিকবার তথ্য চাওয়া হলেও আইডিআরএ থেকে জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আবারও আইডিআরএর কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।

সম্প্রতি আইডিআরএর চেয়ারম্যান বরাবর দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগেও পাঠানো হয়েছে।

জীবন বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ার বিষয়টি হলো পলিসিগত কারণ। তবে আমরা কমিয়ে (ব্যয়ে) আনার চেষ্টা করছি। আর দুদক থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা আমরা আইডিআরএর কাছে পাঠিয়েছি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি ১৭ জীবন বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে গ্রাহকদের এক হাজার ৭৮১ কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের অনুসন্ধানকাজ পরিচালনা করা হয়। দুদক থেকে এমন তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

ওই অনুসন্ধানে বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানির মতো জীবন বিমা করপোরেশনেও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের তথ্য পায় দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জীবন বিমা করপোরেশন ব্যবস্থাপনা খাতে ২৬৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। অতিরিক্ত এ ব্যয় ব্যবসা বাড়ানোর প্রয়োজনে বিমা পলিসি গ্রাহক করার কমিশন, বেতন-ভাতা, অফিস ভাড়া, যাতায়াত ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে, দুদক থেকে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে ১৭ জীবন বিমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে গ্রাহকদের এক হাজার ৭৮১ কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানকাজ পরিচালনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জীবন বিমা করপোরেশনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের তথ্য পাওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমা বিধিমালা ১৯৫৮-এর আলোকে বর্তমানে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো পরিচালিত হচ্ছে। ফলে প্রায় সবকটি জীবন বিমা কোম্পানিই তাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিদ্যমান নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারছে না। তাই বিমা আইন ২০১০-এর আলোকে নতুন বিধিমালা করার বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।

এতে আরও বলা হয়েছে, পলিসি হোল্ডারদের বৃহত্তর স্বার্থে বিমা আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিশন।

আইডিআরএর কাছে জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে একটি যৌক্তিক প্রতিবেদন চেয়ে দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ২৭ জুলাই জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে আইডিআরএর কাছে একটি যৌক্তিক প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালে জীবন বিমা করপোরেশন ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে খরচ করেছে ২৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা। তবে আইন অনুযায়ী- ওই বছর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা ছিল ২০৬ কোটি ৯৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেই হিসাবে আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। এর আগের বছর ২০২০ সালেও কোম্পানিটি ৪৩ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করে।

২০২১ সালে কোম্পানিটি আইন লঙ্ঘন করে যে অর্থ ব্যয় করেছে, তার মধ্যে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে রয়েছে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এছাড়া এপ্রিল-জুন সময়ে পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার টাকা, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আর অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ২৩ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে অবৈধভাবে ব্যয় করা হয় ৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। তার আগের বছর ২০১৫ সালে অবৈধভাবে ব্যয় করা হয় ৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে এ অবৈধ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৩ সালে ৪৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ, ২০১১ সালে ৪৭ কোটি ৬৯ লাখ, ২০১০ সালে ২৭ কোটি ৫৮ লাখ এবং ২০০৯ সালে ১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়।

ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা ও দুদক থেকে চাওয়া তথ্যের বিষয়ে জীবন বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জীবন বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ার বিষয়টি হলো পলিসিগত কারণ। তবে আমরা কমিয়ে (ব্যয়) আনার চেষ্টা করছি। আর দুদক থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা আমরা আইডিআরএর কাছে পাঠিয়েছি।’

আইডিআরএ যদি তথ্য না দেয়, আবারও চাওয়া হবে। প্রয়োজনে তথ্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো

এ বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে প্রতিবারই তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলতে চাননি।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আইডিআরএ যদি তথ্য না দেয়, আবারও চাওয়া হবে। প্রয়োজনে তথ্য আইনে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। আর জীবন বিমা করপোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’


অর্থসংবাদ/কেএ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ