ব্যবসা পুনরুদ্ধারে প্রস্তুত এশিয়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলো

ব্যবসা পুনরুদ্ধারে প্রস্তুত এশিয়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলো
করোনা মহামারীর আগে চীন ছিল বিশ্বের বৃহত্তম বহির্গামী পর্যটন বাজার। তিন বছর আগে সীমান্ত বন্ধ হওয়ার পর থেকে চীনা পর্যটকদের বার্ষিক ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ব্যয় বন্ধ হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে এশিয়ার পর্যটননির্ভর অর্থনীতিগুলো। তবে প্রায় তিন বছর পর সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে চীন। এতে অঞ্চলটির পর্যটন খাতে আবারো গতি ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের দোকান মালিক, থাই ট্যুর বাস অপারেটর ও কে-পপ গ্রুপ চীনের সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার বিষয়টি উদযাপন করছে। পর্যটন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা পুনরুদ্ধারের আশা দেখছে। যদিও চীনে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

চীনা পর্যটক হারিয়ে ও কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে বিপর্যয়ে পড়ে অনেক ব্যবসা বন্ধ এবং কর্মীদের অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়। এখন তারা আবার ব্যবসা পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে নতুন শঙ্কা হলো চীনে ব্যাপক আকারে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে এশীয় দেশগুলো চীনা পর্যটক প্রবেশের ক্ষেত্রে আবারো বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এরই মধ্যে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ চীনাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।

প্রায় ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের ব্যস্ত মিয়ংডং শপিং অঞ্চলে কাপড় ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে আসছেন ৪৯ বছর বয়সী চোই ডাই-সুং। তবে মহামারীতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি মোটরবাইকে খাবার সরবরাহ শুরু করেছিলেন। এখন আবারো পুরনো ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন আর করোনা সংক্রমিত হওয়া নিয়ে ভয় পাই না। আমাদের অনেক কঠিন সময় পার হয়েছে। এজন্য আমি চাই সরকার প্রবেশ সীমাবদ্ধ করার পরিবর্তে আরো বেশি চীনা আকৃষ্ট করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এতে আমাদের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।’

জাপানের রাজধানী টোকিওর আসাকুসা জেলার একটি পোশাকের দোকান হিকেশি স্পিরিট মহামারীর আগে চীনা পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। দোকানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক মাসাকি নাগায়ামা বলেন, ‘আমরা আশা করছি চীনারা আবারো আমাদের এখানে ফিরে আসবে। এখন আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চীনা গ্রাহক বাড়লে আমরা চীনা ভাষায় কথা বলতে পারে এমন কর্মী নিয়োগ দিতে চাই।’

চীনের সীমান্ত পুনরায় খোলার একদিন পরই থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে চীনা পর্যটকদের ব্যাংককে স্বাগত জানান। দেশটি এখন আশা করছে, চলতি বছর চীনা পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে এক কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এ সংখ্যা প্রাক-কভিড ২০১৯ সালে ১ কোটি ১০ লাখের কাছাকাছি।

থাই ট্যুর বাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওয়াসুচে সোফনসাটিয়েন বলেন, এখানকার ট্যুর বাস অপারেটররা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের যানবাহনগুলো বসিয়ে রেখেছেন। তবে এখন তারা ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আশাবাদী। চীন সীমান্ত খুলে দেয়ার পর তারা আবারো পর্যটকের ভিড় সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রিপ ডটকম গ্রুপের ডাটা অনুসারে, বিধিনিষেধ শিথিলের পর চীন থেকে এশিয়াজুড়ে ভ্রমণের অনুসন্ধান ৮৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। থাইল্যান্ড, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ম্যাকাও, সিঙ্গাপুর, হংকং ও তাইওয়ান সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করা গন্তব্য ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ দলগুলোও চীন পুনরায় খোলার সুবিধাভোগীদের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে কিছু ব্যবসা আরো সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টি রাখছে। কারণ অনেক দেশ চীনা ভ্রমণকারীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করছে। চীন থেকে ও চীনে যাওয়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা এখনো ২০১৯ সালের তুলনায় ৮৯ শতাংশ পিছিয়ে। তাছাড়া ২১ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া সপ্তাহব্যাপী চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে উড়োজাহাজের ভাড়াও ঊর্ধ্বমুখী।

হংকং রিটেইল ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যানি ইয়াও সে বলেন, আমরা পুনরায় চীনা সীমান্ত খুলে দেয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। তবে সীমান্ত খোলার পরই যে এ সম্পর্কিত ব্যবসাগুলো শক্তিশালী পুনরুদ্ধার দেখতে পাবে তেমনটা নাও হতে পারে। বরং ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া চীনের মূল ভূখণ্ডে করোনা প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এজন্য ব্যবসাগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য সময়ের প্রয়োজন।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেট্রোল-ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণা
ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে মুসলিম ৬ দেশ
মারা গেছেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর
২০২৩ এ আলোচিত বিশ্বের সেরা ১০ ঘটনা
ব্রিকসে যোগ দেবে না আর্জেন্টিনা
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী
১০ টাকাতেই মিলবে বই
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট
সৌদি আরবে আরো একটি স্বর্ণের খনির সন্ধান
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপলো ইন্দোনেশিয়া