প্রবাস
এখন দরকার সু এবং সঠিক শিক্ষা!

দেশে শিক্ষা পদ্ধতি আর শিক্ষানীতি নিয়ে বিতর্ক বেশ জমজমাট। যে শিক্ষা মানুষ জাতির মেরুদণ্ড, সেই মেরুদণ্ড এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে নড়বড়ে, ভঙ্গুর ও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। আমি বেশ কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার উন্নয়ন নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করে চলেছি। প্রবাসী হলেও আমি বাংলাদেশের শিক্ষার মান ও সার্বিক নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। আমার মতে সু এবং সঠিক শিক্ষা অর্জিত না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কখনোই আসতে পারে না। দেশের বিভিন্ন পেশার গ্রুপের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাকেও এখনো একমুখী সর্বজনীন রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। নানা বিভেদ, বিভাজনের বিষে জর্জরিত হয়ে গেছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা।
বলা হয়ে থাকে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশীয় শিক্ষার মান উন্নয়ন করতেই নাকি গ্রেডিং পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হোক। কিন্তু এই বিষয়ে বাস্তবে কী করা হলো? কী করা হচ্ছে! সাম্প্রতিক কয়েকটি নমুনা এবং এই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সর্বশেষ দশা বা পরিস্থিতি খেয়াল করা যাক। রাষ্ট্রপতি নিজেও দেশের এই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার বেহাল দশায় চরম উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। দেখা গেছে, গ্রেডিং পদ্ধতিতে জিপিএ’র জোয়ার বইতে শুরু করেছে। প্রতিটি বোর্ডে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এখন আন্তর্জাতিক মানেও সন্তুষ্ট হতে পারলোনা দেশ! পাসের হার বৃদ্ধি করতে হবে। শুরু হয়ে গেলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাসের হার নিশ্চিত করার প্রতিযোগিতা। অসম আর অসুস্থ এই প্রতিযোগিতার বলি হতে শুরু করলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা।
খোদ শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই এবং অনেক বেকার যুবক শিক্ষার নামে কোচিং ব্যবসা শুরু করলেন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী ধরা শুরু হলো। কোচিংয়ে কতিপয় অসাধু শিক্ষক ও কিছু অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে দিতে শুরু করেন। ক্রমান্বয়ে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়লো দেশজুড়ে প্রশ্ন ফাঁস ও তার আতঙ্ক। পরীক্ষার আগেই ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্ন বিক্রি শুরু হয়। বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরাও গণহারে জিপিএ-৫ পেতে শুরু করে। পরীক্ষার পর পাসের হার বৃদ্ধির জন্য উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী শিক্ষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, যাই লিখবে তাতেই নম্বর দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় পাশেরউচ্চ হার এবং জিপিএ’র বন্যা বইয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এই জিপিএ-৫ এর করুণ দশা লক্ষ্য করা গেল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
ফল হলো এই যে, আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে মানের শিক্ষার্থী পাওয়া যেত এখন সেই গুণগত মানের শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা ইংরেজি এমনকি বাংলাও ভালো জানেনা। অপরদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে গণহারে অকৃতকার্যও হয়। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এরপর থেকে এই জিপিএ-৫ এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন এবং বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রশ্নফাঁস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে বলেছেন; আমি বুঝিনা এ কেমন শিক্ষক যে ছাত্র-ছাত্রীদের নকল সরবরাহ করে। মা-বাবারাই বা কেমন যারা নিজেরাই নিজেদের সন্তানদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব পরীক্ষায় এই প্রশ্নফাঁস এক কঠিন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাধি ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে। এখন এই ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা শুরু হয়েছে। কিন্তু উপায় যে আর মেলেনা।

এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অনেকে এই ব্যধির প্রতিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। আমি প্রবাসী হলেও গোটা শিক্ষা পদ্ধতির গলদ খুঁজে বের করে এর স্থায়ী প্রতিকারের জন্য সরকার ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান রেখেছি। মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও নিবিড় প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশে সুশিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে। তা বাস্তবায়নের জন্য আমি দেশে একটি বা একাধিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষকদের মধ্যে বুনিয়াদী, কার্যকর ও আধুনিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার এক নতুন চিন্তা সরকার ও দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করেছি। সেখানে যেন আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক এক অগ্রণী চিন্তায় আমার পৃথিবী উদ্ভাসিত হয় আমার জ্ঞানের আলোকে! এই শিক্ষা হবে আমাদের উপার্জনের হাতিয়ার।
আমি মনে করি, শিক্ষা গ্রহনের পরেই প্রতিটি মানুষের সব ব্যস্ততা আবর্তিত হয় প্রত্যাশিত একটি চাকরিকে ঘিরে। এক্ষেত্রে দেশে এমন অবস্থা যেখানে উচ্চশিক্ষিত হতে যত বছর সময় লাগছে চাকরি পেতে সেই ছাত্রকে এর চেয়েও বেশি সময় অপচয় করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি একাধিক আধুনিক ধারণা দিয়েছি।
আমার মতে, বর্তমান বিশ্বে চলছে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং গোটা বিশ্বের শিল্পকারখানা, প্রযুক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে এখন আজীবন চাকরি বলে কিছু নেই, চাকরি আছে ততদিন যতদিন কাজ আছে এবং কাজ আছে ততদিন যতদিন চাহিদা আছে। শেয়ার মার্কেট নির্ধারণ করছে বর্তমান কর্মসংস্থান ও চাকরীর স্থায়িত্ব। শেয়ার হোল্ডার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্লাইমেট পরিস্থিতি, এসব বিশাল আকারে প্রভাব বিস্তার করছে শিল্প কারখানা এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে। শিক্ষা ও শিক্ষার মান নির্ভর করছে গ্লোবাল চাহিদার উপর এবং তাও হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট লেভেলে। সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করে বলা কঠিন কী পড়লে সারা জীবন চাকরির গ্যারান্টি মিলবে। তবে সারাজীবন টেকসই ইন্ডাস্ট্রি প্রোভাইডার এবং যোগ্য নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকতে হলে দরকার সময়োপযোগী সুশিক্ষা। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উর্ধ্বমুখী এক দেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও সময়ের স্রোতে এ দেশের সব সেক্টরেই লেগেছে আজ ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। কিন্তু আমাদের ধ্যানে-জ্ঞানে এ ছোঁয়া আজও লাগেনি! চাহিদা বলছে কী পড়তে হবে এবং কেন পড়তে হবে।
এ সময়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবং প্রত্যেকটি শিক্ষককে জানতে হবে চাহিদাগুলো কী এবং তার জন্য কী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সকল শিক্ষকদের সুশিক্ষার আওতায় আনতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই। দেশের সব শিশু শিক্ষা বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান ও গ্রহনের একটি সমন্বিত কার্যক্রমের আওতায় থাকবে। যেখানে দেশ, বিদেশের বড় বড় কোম্পানি বা সংস্থার মালিক বা সিইও, কর্মকর্তা, গবেষক, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগীকরণে সহায়তা দান করা এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা হবে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য।
এমতাবস্থায় শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত নিবিড় নজরদারী চালু রাখতে হবে। কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং তা কীভাবে মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের ১-১৫ বছর বয়সের মধ্যের সময়টা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। মানবতার ফর্মে আনতে হলে তাদের মানসম্পন্ন পরিবেশের মধ্যে শিক্ষা দান করে গড়ে তুলতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষার সার্বিক অবকাঠামো। যেখানে থাকতে হবে জানার থেকে শেখা। দুর্নীতি বা অনিয়ম যেন কলুষিত করতে না পারে শিক্ষা প্রশাসনকে, শিক্ষাঙ্গণকে। একই সাথে গণতন্ত্রমনা ও সৃজনশীল নাগরিক হিসাবে নিরাপদে ও গর্বের সঙ্গে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করবে এবং মতামতের ভিন্নতা সত্ত্বেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে তারা সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
শিশু বিদ্যালয়, শিশুদের জন্য অনুকরণ এবং অনুসরণের জায়গা, সেজন্য এই সব শিক্ষাঙ্গনে থাকা চাই মনোবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী। সেখানে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদির সাহায্যে বিজ্ঞান মনস্ক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে শিক্ষা দান ও প্রশিক্ষণ প্রদান চলবে। যেখানে মননশীলতা চর্চা ও বৈশ্বিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে শিশুদের প্রারম্ভিক জীবন। এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে একে অপরের থেকে জানা।এ সব প্রস্তুতির জন্য সহায়ক মাধ্যম হচ্ছে প্রশিক্ষণ, অথচ এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দেশে খুবই সামান্য ও দায়সারা গোছের।
এই ব্যাপারে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন –
আছে কি বাংলাদেশের শিশু বিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক বা শিক্ষা পদ্ধতি, যেখানে চর্চা হচ্ছে এমন মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা? বা সেই ভাবে তৈরি হচ্ছে কি তেমন শিক্ষক যিনি পারবেন মোকাবিলা করতে ভবিষ্যতের এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে? তাহলে কি আমরা যেভাবে আছি ঠিক সেভাবেই থাকব? নাকি চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলাদেশী নয় গোটা বিশ্বের নাগরিক করে গড়ে তুলবো সুশিক্ষার মাধ্যমে! প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ধারার একমাত্র বাহক শিক্ষক সমাজই যদি মজবুত না হয়, শিক্ষার্থী অভিযাত্রীরা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণী পাড়ি দিতে পারবেন? সে প্রশ্ন সব নাগরিকের, সব অভিভাবকের।
আমরা জানি, শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। গতানুগতিক, অসম্পূর্ণ, সনদপত্রসর্বস্ব, তত্ত্বীয় বিদ্যাপ্রধান, অপর্যাপ্ত ব্যবহারিক শিক্ষা, মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারী, তাই আশানুরূপ ফল লাভ হচ্ছে না।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয় বেশ পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে সুশিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী ফলোআপ খুবই জরুরি। দেশে তার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রাইমারী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে কিছু শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও ব্যবস্থা নেই। আবার শিশু বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে দেশে দিনে দিনে শিক্ষিতের হার বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার মান। তাই দেশের জনশক্তিকে দ্রুত জনসম্পদে রুপান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
তাই আর দেরি না করে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক। বর্তমান যে সব বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা জানে না কি ধরনের শিক্ষা দেওয়া দরকার একজন শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষককে। পুরো শিক্ষাঙ্গন খুঁজলে পাওয়া যাবে খুব কম সংখ্যক এইসব গুণসম্পন্ন শিক্ষক, নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। মানুষের মত দেখতে হলেই মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায় না, তার জন্য দরকার মিশন, ভিশন এবং পলেসি। সঙ্গে ডেডিকেশন, প্যাশন, মোটিভেশন, গোলস এবং অবজেকটিভস।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রদবদল করতে হবে প্রথমে এবং জনগনের মনোনীত প্রার্থী ও স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে এ কাজ শুরু করতে হবে। দেশকে বহিঃশত্রুর থেকে মুক্ত করলেই তো দেশ মুক্ত হলো না? দেশকে খাদ্যের অভাবমুক্ত, অন্ন-বস্ত্রের অভাবমুক্ত, কুশিক্ষা মুক্ত, পরাধীন চেতনা মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে হলে যারা বর্তমানে নানা দায়িত্বে আছেন তাদের সক্রিয়ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
দেশের শিক্ষাঙ্গনের এই দুর্দিনে সামরিক বাহিনী পরিচালিত ক্যাডেট কলেজগুলো থেকে আমরা তাদের প্লানিং টুল ফর এ্যাডমিনিসট্রেশন, ডিসিপ্লিন, সোর্স ইন্টিগ্রেশন, সিনক্রোনাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। একটি বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে তা হল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো স্তরেই যেন এমন কিছু শিক্ষা দান করা না হয় যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায়ের বিভেদ জ্ঞানে কলুষিত হয়ে পড়ে। জ্ঞানদান যেন এমন হয় যে সবকিছু জানার মাধ্যমে বৈচিত্র্যের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশের সবাই শিক্ষার বিষয়টি দেখছে, জানছে, জল্পনা-কল্পনা করছে কিন্তু কীভাবে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে খুব কমই কথা হচ্ছে। এখনোও চলছে সেই সনাতন শিক্ষাদান পদ্ধতি যা বয়ে আনছে দেশে শুধু অন্ধকার ও বেকারত্ব। আজ জাতি সত্যিকারের শিক্ষা হারিয়ে ফেলেছে। সুশিক্ষা, মানসম্মত শিক্ষার অভাবে যে সামান্য সুযোগ সুবিধা দেশে রয়েছে তার দিকে চেয়ে আছে লাখ লাখ বেকার যুবক। চাকরিতে লোক নিয়োগ হবে একজন, হাজার প্রার্থী তাতে আবেদন করছে। ‘কোটা’ থাকা সত্ত্বেও হবে কি চাকরি সবার? যারা চাকরি পাবে না তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কী ভাবা হচ্ছে? দেশে লাখ লাখ বেকার তৈরির এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কি কোনো জবাবদিহীতা আছে? সরকারের কী বক্তব্য এই ব্যপারে? এসব ঘটনার পর, ভাবনা একটাই মনের মধ্যে- কীভাবে সম্ভব একটি বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেখানে জাতি তার উত্তর খুঁজে বের করবে- কী পড়াব, কতটুকু পড়াব, কতজনকে পড়াব, দেশের কতটুকু কী দরকার? চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি করতে হবে সুশিক্ষিত জাতি। সচেতন জাতি খুঁজে বের করে সমাধান, অজুহাত নয়। সাবধানতাই একমাত্র সুশিক্ষার পথ।
সুশিক্ষার কারিগর পেতে হলে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হলে দরকার এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্টের মধ্যে জানতে হবে, জানতে হলে শিখতে হবে, শিখতে হলে পড়তে হবে, আর পড়তে হলে চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে শিক্ষকদের। তবেই হবে শিক্ষার সার্থকতা আর শিক্ষক হবে সুশিক্ষার কারিগর। বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে তার সমাধান। তাই শিক্ষাঙ্গনে এক বিরাট পরিবর্তনের জন্য চাই সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদ/কেএ
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

প্রবাস
মালদ্বীপে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের তালিকায় বাংলাদেশি আহমেদ মোত্তাকি

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও মালদ্বীপের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ মো. আহমেদ মোত্তাকি মালদ্বীপের শীর্ষ ১০০ ব্যবসায়ীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ মে) মালদ্বীপের ক্রসরোড রিসোর্টে প্রতি বছরের ন্যায় আয়োজিত দেশটির শীর্ষস্থানীয় ১০০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড ১০০ গালা (GOLD 100 Gala) বিজনেস অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল এস.এম. আবুল কালাম আজাদ।
মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের প্রশংসা করে বলেন, আগামীতে আরও ভালো করবেন সেই প্রত্যাশা কামনা করি। পরে তিনি গোল্ড ১০০ গালা অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিয়াঞ্জ গ্রুপ পরপর তিনবার গোল্ড ১০০ পুরস্কার পেয়েছে। শিক্ষা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং কৃষি খামারে অবদানসহ সেরা অনুশীলন, অর্থনীতিতে অবদান, নিয়মিত করদাতা, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদির জন্য মিয়াঞ্জ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. আহমেদ মোত্তাকি এই পুরস্কারটি পান।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে

যারা নীতি নির্ধারক হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকেছেন তাদের কাজ মূলত নীতিমালা তৈরি করা। তারা নিজ থেকে দেশের এত বড় একটা গুরুদায়িত্ব পালন করতে সংসদ ভবন দখল করেছেন। বর্তমানে সেই সংসদে বিরোধী দল নেই আছে শুধু একাকীত্ব। বিরোধী দলের নেত্রী কখন জেলে গেলেন, কখন বের হলেন, কবে মামলার শুনানি হবে আর কবে হাসপাতালে চেকআপ করবেন এই খবর ছাড়া অন্য কিছু আমি শুনিনা বা জানিনা। অথচ ৩৫০ জন নীতি নির্ধারকসহ তাদের সহযোগী আমলারা রয়েছেন যারা শপথের বাণী পড়ে নীতিমালা তৈরি এবং তার প্রতিফলন ঘটাবেন বলে ওয়াদা করেছেন কিন্তু হচ্ছে কি সেই কাজগুলো সঠিকভাবে? সংসদ ভবন আছে নেই শুধু সৃজনশীল নীতিমালা!
মাত্র দুটি বিষয় তুলে ধরি তাহলে বুঝতে সহজ হবে কেন আমি হঠাৎ এমন একটি মন্তব্য করলাম।
আচ্ছা ভাবুন তো দেশের এই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের কথা! প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকতে হবে, আছে কি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ বাধ্যতামূলক থাকতে হবে, আছে কি? আবাসিক এলাকাতে পার্ক থাকলেও সেখানে মানুষ কি করে? হাঁটাহাটি করে, সেটাও প্রয়োজন। তা নাহলে আপনি হাঁটবেন কোথায়? বাচ্চারা কি সেখানে খেলতে পারে? না। তারা দেখা যায় রাস্তার মধ্যে ক্রিকেট খেলে।
দেশের শহরগুলোকে শুধু ইট, কাঠ, পাথরের বস্তি না বানিয়ে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা দরকার নয় কি?দেশের সবার মাথায় একটিই ভাবনা ছেলে মেয়েকে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে। ছেলে বা মেয়ে বিজ্ঞান পড়তে চায় না কিন্তু অভিভাবক তাকে বাধ্য করেছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। ফলাফল রেজাল্ট খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট কিন্তু ডাক্তারি পড়তে চায় না। বাবা মা পড়াবেনই। এরকম ঘটনা ঘরে ঘরে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। যে পড়বে তার ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মানেই সফল জীবন নয়। এটা মাথায় নিতে হবে। আপনার বাচ্চা আপনি তাকে পৃথিবীতে এনেছেন ঠিকই কিন্তু তাকে যা খুশি তাই করতে চেষ্টা করার আগে অগত্যা ভাবুন সে নিজেই একটা আলাদা মানুষ। যা জোড়ালো হতে থাকে বয়:সন্ধিতে। এটা জেনে বুঝেও নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে তার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েন না। কিশোরীদের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের এই সময়টা সত্যিই এই শহরগুলোতে কষ্টদায়ক। নিরাপত্তার অভাবে একা কোথাও যেতে পারে না। ফলে মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা চিন্তার বিষয়, বিভিন্নভাবে প্রলোভিত হচ্ছে ওইটুকুন একটা যন্ত্রের মাধ্যমে। তাদেরও প্রয়োজন মুক্ত বাতাস যেখানে সে নির্ভয়ে বেড়ে উঠবে। না হলে শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে।
যাইহোক, এসব চিন্তাগুলো শুধু বাবা-মার না এসব চিন্তাগুলো সংসদ সদস্যদের এবং আমলাদেরও হওয়া উচিত। শুধু শহর নয় সারা দেশের আনাচে কানাচে রয়েছে লাখো লাখো নতুন প্রজন্ম তাদের কথা ভাবুন! কে জানে দেখবেন, হঠাৎ পৃথিবী সেরা অলরাউন্ডার আমরাই পেয়েছি। এমনটি কিন্তু হতে পারে। আমরা আশা নিয়েই বাঁচি এবং বেঁচে আছি।

এটা গেল একটি বিষয়। এবার আসি আরেকটি বিষয় নিয়ে।
চল্লিশ বছর কাজ করতে এবং কাজ করাতে নিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে চাকুরিরত কোন কর্মচারিকে ওএসডি করে রাখা হয় শুনিনি। এমনকি চাকুরির ক্ষেত্রে এ যুগে ওএসডি শব্দটি যে ব্যবহৃত হয় তা কেবল বাংলাদেশেই চলমান। তবে ওএসডি শব্দটি মূলত একটি অন-স্ক্রিন ডিসপ্লে (OSD) বা একটি কন্ট্রোল প্যানেল যা একটি কম্পিউটার মনিটর, মোবাইল ডিভাইস, টেলিভিশন স্ক্রীন বা অন্য একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ডিসপ্লেতে তৈরি করা হয় এবং যা ব্যবহারকারীদের দেখার বিকল্পগুলো নির্বাচন করতে এবং/অথবা ডিসপ্লের উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্য করতে সক্ষম করে। যেমন উজ্জ্বলতা, বৈসাদৃশ্য, এবং অনুভূমিক ও উল্লম্ব অবস্থান ইত্যাদি। তবে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) অনুশীলনটি ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কালের একটি প্রথা যা ১৯৩১ সালের দিকে চালু ছিল যেমন যখন একজন কর্মকর্তা তার নিয়োগের মাধ্যমে সরকারকে তার নিয়োগে ব্যয় করার চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা দিত আর যখন বৃহত্তর কল্যাণের জন্য সরকারের উপর একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করত।
এটি কখনো কখনো ভবিষ্যতে উচ্চস্তরের নিয়োগের জন্য একটি প্রশিক্ষণ পর্যায় হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তবে দায়িত্ব অদৃশ্য হয়ে গেলে নিয়োগকর্তা কি একজন কর্মচারীকে পুনঃনিয়োগ করতে পারতেন বা শর্তগুলি কি আগের মতোই থাকত এবং পেশ করার মতো কোনো কাজ না থাকলে কী করত? এমতবস্থায় কর্মিকে একজন স্পেশাল ডিউটির অফিসার হিসাবে নিয়োগ দিতেন।তৎকালীন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে এ ধরনের নিয়ম ছিল।
আর আমাদের দেশে ওএসডি বলতে বোঝায় একজন কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে। এটি জানা মতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। তবে হতে পারে সীমিত সময়ের জন্য কেউ পোস্টিং অর্ডারের অপেক্ষায় আছে সেক্ষেত্রে এই কর্মকর্তারা সচিবালয়ে রিপোর্ট করেন এবং সেখানে তারা তাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করা ছাড়া কিছুই করেন না।
অন্যান্য দেশে ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি শব্দটির যে অর্থ, বাংলাদেশে সে অর্থ বহন করে না। সেসব দেশের জনপ্রশাসনে কিছু কর্মকর্তার ওপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়; যাঁরা অন্য কর্মকর্তাদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। সরকারের প্রয়োজনে তাঁদের ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। আবার দায়িত্ব শেষে আগের পদে ফিরিয়ে আনা হয় যাকে বলা হয় ডেপুটেশন।
বাংলাদেশে ওএসডি কর্মকর্তা অর্থটি অত্যন্ত নিন্দাবাচক হয়ে পড়েছে। একজন অফিসারকে ওএসডি হিসেবে মনোনীত করা হলে এটি একটি কলঙ্ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এতে বোঝায় যে কর্মকর্তার জন্য সরকারের কোনো উপযুক্ত পদ নেই বা তাদের পরিষেবার আর প্রয়োজন নেই। তারপরও তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ঠিকই তবে সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে শুয়ে বসে। এতে জনকল্যাণ বা আদৌ কোনো কল্যাণ হয় কি?
আমাদের সুইডেনে অনেক সময় আমরা যদি কর্মচারীর কাজে খুশি না হই বা যদি তার অন্যান্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন তাকে পুনঃনিয়োগ (omplacering) করি। যদি বা যখন কোনো উপায় না থাকে তখন কর্মস্থল থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু বাসায় বসিয়ে জামাই আদরে ওএসডি করে রাখা হয়, কখনও শুনিনি। বৃটিশ বা পাকিস্তানী নিয়ম কানুনই যদি দেশে চলবে তাহলে কী দরকার ছিল তাদের তাড়ানোর? বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে শুধু চোরগুলো রেখে গেছে।
এখন দেখছি তাদের আইনকানুনও রেখে গেছে। আমি যতটুকু জানি যুগ যুগ ধরে এই ধরনের ওএসডিধারীরা সকল সুবিধা ভোগ করছে শুধু কাজ করছে না এ ধরনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশে হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। সরকার বা রাষ্ট্র কীভাবে এত বছরেও এর রহস্য উদ্ধার করতে পারছে না? তবে আমার জানা মতে সরকার নিজেই এর জন্য দায়ী যেমন প্রতিবারই সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে একদল কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে যান আর পূর্ববর্তী সরকারের আমলের ওএসডিরা উচ্চতর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। জনপ্রশাসনের এ দুরারোগ্য রোগটি দূর করা না গেলে জনপ্রশাসন নির্ভয়েকাজ করতে পারবে না। এ ধরনের দলীয়করণের ফলে অনেক সময় নিরীহ ও মেধাবী কর্মকর্তারা পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হন। তারপর অনেকে দলকে কাজে লাগিয়ে আবার অনেকে সাতে-পাঁচে না থাকলেও স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের গায়ে বিশেষ দলের রং জুড়ে দিয়ে কোণঠাসা করে রাখে। ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে এ রকম দক্ষ ও নিরীহ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়।
বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী কর্মকর্তারাই নিয়োগ পান। যাচাই-বাছাইও কম হয় না। সেখানে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নয়। কিন্তু এ পরীক্ষা-প্রক্রিয়ায়ও গলদ রয়ে গেছে। অনেক সময় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় থেকেই দলীয় লোকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা দেখা যায়। এটা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আর বাস্তবতা হলো নিয়োগ-প্রক্রিয়া থেকেই দলীয়করণের শুরু। যদিও খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তাই এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ পান, কিন্তু এর পরিণাম ভোগ করতে হয় অন্যদেরও। নতুন সরকার এসে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং আবার জোরেশোরে তাদের দলীয় সমর্থকদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে তৎপর হয়।জনপ্রশাসনের এ অসুস্থ ধারা ভাঙতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা সরকারেরই কর্তব্য। তা না হলে প্রজাতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে না।
যে দেশে একজন মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে, রোগীকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে দিতে পারছে না হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকার কারণে, শেষে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু বরণ করছে সে দেশে কীভাবে ওএসডি প্রথা চলমান? খুব জানতে ইচ্ছা করে!জাগো বাংলাদেশ জাগো, নতুন করে ভাবো।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
আমিরাতের শ্রম বাজারে যুক্ত হবে আরো ১০ হাজার কর্মী

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে আগামী কয়েক বছরে ১০ হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
আমিরাতের রাস আল খাইমাহতে দ্রুত গতিতে হোটেল ও পর্যটন খাত বিকশিত হচ্ছে। ফলে অঞ্চলে এ নতুন কর্ম সংস্থানের এ সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়েন রিসোর্ট রাস আল খাইমাহতে তাদের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া আরও কিছু নতুন হোটেলও এখানে আসতে যাচ্ছে।
রাস আল খাইমাহ পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী রাকি ফিলিপস বলেছেন, রাস আল খাইমাহতে ৮ হাজার কক্ষ রয়েছে। আমরা এ বছর আরও ৪৫০টি এবং আগামী বছর আরো ১ হাজার কক্ষ যুক্ত করতে যাচ্ছি। যতগুলো কক্ষ আছে সেটি আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
২০২৩ সালে আমিরাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হ্যাম্পটন এবং মোভেনপিক তাদের সেবার দরজা খুলেছে । এছাড়া এ বছরই মিনাতে অনন্তরা হোটেল এবং আল হামরায় সোফেটিল হোটেলের কার্যক্রম শুরু হবে।
আলদার, আবুধাবি ন্যাশনাল হোটেলস এবং ইমারও রাস আল খাইমাহতে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েন রিসোর্টও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৩৯০ কোটি ডলার খরচ করে ১ হাজারেরও বেশি কক্ষবিশিষ্ট হোটেল চালু করবে। যেখানে গেমিং এরিয়াসহ নানা সুযোগ সুবিধা থাকবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
হুন্ডিতে ঝুঁকছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা, রেমিট্যান্সে ভাটা

মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের বিপরীতে তুলনামূলক কম টাকা পাওয়ায় বৈধ চ্যানেলে দেশে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করছে রেমিট্যান্স হাউজগুলো। একটু বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান অনেক প্রবাসী। সরকারি প্রণোদনা আর নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেও সব প্রবাসীকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর ফলে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় একসময় মালয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ৫ম, যা এখন সপ্তমে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানোর পাশাপাশি ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার দাবি প্রবাসীদের।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানো তুলনামূলক সহজ ও লাভজনক মনে করে অনেক প্রবাসী এই অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। এই সুযোগ লুফে নিচ্ছেন হুন্ডি কারবারি ও টাকা পাচারকারীরা। রিঙ্গিত প্রতি ব্যাংক রেট থেকে এক টাকা বেশি মিলছে হুন্ডিতে। এছাড়াও দেশে টাকা পাঠাতে কর্মস্থল থেকে দূরের ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো লাগছে না। ফলে অবৈধ হুন্ডিতে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা।
চলতি মাস এপ্রিলে রিঙ্গিত প্রতি বিনিময় ২৪ টাকা ৫ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে। গত মাসে যা ছিল ২৬ টাকা। ফলে গত মাসে রেট বেশি পাওয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশ আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। তাতে আগের তুলনায় মার্চে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স বাড়ে ৪০ শতাংশ।
মার্চ মাসে মালয়েশিয়া থেকে বৈধপথে ৯৮ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমমানের রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। তবে এপ্রিলে বাংলাদেশে রিঙ্গিতের দাম কমায় প্রবাসীরা আবারও হুন্ডিতে ঝুঁকেছেন বলে ধারণা করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে ২০ শতাংশ রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে ডলার বা রিঙ্গিতের বিনিময় মূল্য যা-ই হোক না কেন, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠাতে সচেতনতা ও দেশপ্রেমের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে প্রবাসী আয় কমার অন্যান্য কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বৈধপথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এনবিএল, সিবিএল ও অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার বরাবর ১০ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে বিদেশে অবৈধ উপায়ে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডিসহ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। হুন্ডি প্রতিরোধ ও প্রবাসীদের সচেতন করতে কাজ করছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এ সময় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার আহ্বান জানান হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
চীনে ব্যবসায়িক বিনিময় সম্মেলন

চীনের হাইনান প্রদেশের মুক্ত বাণিজ্য বন্দরে বিনিয়োগের সুযোগ এবং অনুকূল নীতি, যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ কৌশল বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন পথের পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার প্রচারের জন্য ব্যবসায়িক বিনিময় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে হাইনান প্রদেশের হাইকউ শহরে সানইয়া মিউনিসিপ্যাল পিপলস গভর্নমেন্টের সহায়তায় সানইয়া ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ব্যুরো আয়োজিত এই ব্যবসায়িক বিনিময় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন, সানইয়া পৌর সরকারের নির্বাহী ডেপুটি মেয়র ও পৌর পার্টি কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য শাং ইয়ংচুন, চীন ইতালি চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি পাওলো বাজোনি, ফেরারি চায়নার ভাইস জেনারেল ম্যানেজার হান মিয়াও, মাসেরাতি চায়নার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরকো পিয়েত্রো বোর্দিগাসহ আরও অনেকে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা এবং চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা হাইনান প্রদেশের মুক্ত বাণিজ্য বন্দর নীতি, সানইয়া শহরের সম্পদ এবং শিল্প নীতির উপর দৃষ্টি নিবন্ধন করে এবং নিজ নিজ উদ্যোগের প্রকৃত উন্নয়ন এবং উন্নয়ন সুবিধার দৃষ্টিকোণ থেকে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশসহ ইউরোপ ও এশিয়া দেশগুলোর চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং সানইয়া পৌর সরকারের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।