কল মানি রেট বেড়ে সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

কল মানি রেট বেড়ে সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
কলমানিতে টাকা ধার নেয়ার সুদের হার বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ওভারনাইটে কলমানিতে সুদের হার ৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে ধার নেয় ব্যাংকগুলো। বুধবার ওভারনাইটে কলমানির সুদের হার ছিল ৫ টাকা ৭৭ পয়সা। এতদিন এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে এ দরে টাকা ধার নিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনায় ওভারনাইট কলমানিতে সুদের হার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে ব্যাংকগুলো।

এ নির্দেশনার আগে ব্যাংকগুলো ওভারনাইট কলমানিতে ধার দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত হার ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই হার রেপো কিংবা নীতি সুদ হারের সমান ছিল। এই হারেই ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংক থেকে ধার করতো।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ টাকা পাচার হওয়ার কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকে নগদ টাকা নেই। তারল্য সংকটের জন্য এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়া বাড়িয়ে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৮৫ টাকা দরে ডলার কিনে আন্ডার ইন ভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে। এই টাকা পাচারের প্রভাব কয়েক মাস পরে বুঝা যাবে। ডলার পাচার হলে বাজারে টাকা কমে যায়।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো কলমানিতে কেমন সুদে টাকা ধার দেবে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিখিত কোনো নির্দেশনা নেই।’

তবে ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কলমানিতে সুদের হার নির্ধারণ করে মৌখিকভাবে। এখানে রেপো রেটটিকে রেফারেন্স হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই রেটটিকেই কলমানিতে টাকা ধারের সর্বোচ্চ দর হিসেবে রাখার জন্য বলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২ মে থেকে থেকে কলমানিতে টাকা ধার নেয়ার সুদের হারের তথ্য দেয়া আছে। সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ বছরের মধ্যে ওভারনাইটে সুদের হার সবচেয়ে বেশি। বেশির ভাগ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো রেটের চেয়ে কম দরে ওভারনাইটে টাকা ধার দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তবে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ কমে যাওয়ায় ওভারনাইটে সুদের হার বেড়ে গেছে।

এক ব্যাংক অন্য ব্যাংককে এক দিনের জন্য যে সুদহারে টাকা ধার দেয়, সেটিকে কলমানি রেট বলে। একদিনের বেশি সময়ের জন্য ধার দেয়া হলে ব্যাংকগুলো সেসব ধারকে শর্ট নোটিশে ধার বলে গণ্য করে। কলমানিতে সুদের হারে বাধ্যবাধকতা থাকলেও শর্ট নোটিশে ধার দেয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার নির্ধারণে ব্যাংকগুলোকে কোনো নির্দেশনা দেয় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো গড়ে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ সুদে ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা ওভারনাইট লোন দিয়েছে। তবে শর্ট নোটিশে লোন দেয়ার ক্ষেত্রে সুদের গড় হার ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সুদের হার বাড়লেও ঋণ নেয়া কমায়নি ব্যাংকগুলো। সাধারণত সুদের হার বাড়লে ঋণ নেয়ার প্রবণতা কমে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এই রেট বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাবে। যেটি ব্যাংভকগুলোর ব্যালেন্স শিটকে ছোট করবে। ঋণে ৯ শতাংশ ক্যাপ থাকার কারণে আমরা সেটিও বাড়াতে পারছি না। ফলে আমাদের ইন্টারেস্ট ইনকাম কমবে। ফরেন ট্রান্সেকশন কমে আসায় সেখান থেকে কমিশনের প্রফিটও কমছে।’

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ