জুমার দিনের সুন্নতগুলো

জুমার দিনের সুন্নতগুলো

আজ শুক্রবার। মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন আজ। এ দিন জুমার নামাজ আদায় করা হয়। মুসলমানরা এ নামাজ আদায়ে মহান আল্লাহর ঘর মসজিদে সমবেত হন।





জুমার আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব।





ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ এই দিনের ফরজের সঙ্গে কিছু সুন্নত রয়েছে। যেগুলো সব মুসলমানকে পালনের চেষ্টা করাটা উচিত।





চলুন তাহলে এখনই জেনে নেই, পবিত্র জুমাবারের সুন্নতগুলোর বিবরণ-





(১) জুমার দিন গোসল করা। যাদের ওপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসূল (সা.) ওয়াজিব করেছেন। (বুখারী: ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভালো কাজ।





(২) জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)।





(৩) মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ ৮৮৭, ইঃফাঃ ৮৪৩)।





(৪) গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮৩)।





(৫) উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৭)।





(৬) মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৬)।





(৭) মনোযোগসহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ ৮৫৭, আবু দাউদঃ ১১১৩, আহমাদঃ ১/২৩০)।





(৮) আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ ৮৮১, মুসলিমঃ ৮৫০)।





(৯) পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)।





(১০) জুমার দিন ফজরের নামাজে ১ম রাকতে সূরা সাজদা (সূরা নম্বর-৩২) আর ২য় রাকাতে সূরা ইনসান (দাহর) (সূরা নম্বর-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)





(১১) সূরা জুমা ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিমঃ ৮৭৭, ৮৭৮)।





(১২) জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)।





(১৩) এ দিন বেশি বেশি দোয়া করা। (বুখারীঃ ৯৩৫)।





(১৪) মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ ৯১০, ৮৮৩)।





(১৫) মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)।





(১৬) কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ ৯১১, মুসলিমঃ ২১৭৭, ২১৭৮)।





(১৭) খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনো দু’রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)।





(১৮) জুমার দিন জুমার পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)।





(১৯) কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)।





(২০) মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)।





(২১) ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)।





(২২) ইমামের খুতবা দেয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)। অর্থাৎ আদবের সঙ্গে বসা।





(২৩) খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)।





(২৪) জুমার দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)।





২৫। জুমার আজান দেয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আজান দেয়া হয় তা। (বুখারীঃ ৯১২)।





২৬। জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকাত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)।





(২৭) ওজর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমা চালু না করা। আর ওজর হলো এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোনো ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)।





(২৮) ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)।





(২৯) একান্ত ওজর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)।





(৩০) সালাতের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।





(৩১) কোনো নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ ৫১০)।





(৩২) এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)।





(৩৩) পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত অন্তরে জাগরূক রাখা।





(৩৪) হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।





(৩৫) খুতবার সময় খতিবের কোনো কথার সাড়া দেয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরিক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)।





(৩৬) হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের ওপর সিজদা দেয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের ওপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)।





(৩৭) যেখানে জুমার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হলো ওই একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোনো কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)।





(৩৮) ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে রত থাকা।





মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সব মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র জুমাবারের ফরজসহ প্রত্যেকটি সুন্নত পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা কোর্স সম্পন্ন
আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.
মিশরে বায়তুল মোকাররমের ইমামকে সম্মাননা প্রদান
জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় কোনটি?
জান্নাতিদের যে বিশেষ দানে সন্তুষ্ট করবেন আল্লাহ
নেক আমলের কারণে দুনিয়ায় যে উপকার পাবেন
রমজান শুরুর তারিখ ঘোষণা করলো আরব আমিরাত
একসঙ্গে অনেককে সালাম দিলে উত্তর দেবেন কে?
নবীজীর রওজায় বছরে একবারের বেশি যাওয়া যাবে না