আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপির ঝুঁকি কম: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপির ঝুঁকি কম: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপির ঝুঁকি কম বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।





বুধবার (২০ নভেম্বর) ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আয়োজিত এনবিএফআই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দৈনিক বণিক বার্তার আয়োজনে বেলা ১২ টায় যশোরের ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।





এসময় তিনি বলেন, যশোর দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকা। এ জেলার শাক-সবজি, বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল, মিষ্টি, খেজুরের রস বিখ্যাত। পদ্মাসেতু হওয়ায় অর্থনৈতিক সুযোগ আরো বেড়েছে। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বণিক বার্তার এ আয়োজন মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ। ব্যবসা মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হয়ে আছে। এতে বৈচিত্র্য আনা দরকার। আর্থিক খাত হলো আমাদের শিরা-উপশিরা। আর এ আর্থিক খাতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো অব্যাংকিং আর্থিক খাত। জামানতের বাইরে ব্যবসার সম্ভাব্যতা ও ঐতিহ্য চিন্তা করে অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঋণখেলাপি।





তিনি বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো ঋণখেলাপি করে। কিন্তু ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ ঝুঁকি কম। এখানে কম সুদে ঋণ দেয়া হয়। যশোরে বিনিয়োগে অনেক সুযোগ রয়েছে। কৃষি খাতে বিনিয়োগের অপার সুযোগ রয়েছে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের ৬০ ভাগ শাক-সবজির যোগান দেয়। এসব কারণে সব ব্যাংকের শাখা এ জেলায় আছে। এসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি সেবা দেয় অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আশা করবো এ জেলায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বাড়াবে।





পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দেশ। ভারতের চেয়ে মাথাপিছু আয় ও শিক্ষার হার আমাদের বেশি। শিশুমৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম।





অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসা বাণিজ্য মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসা বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ার যে আবেদন সেটাকে লক্ষ্য করে আজকের আয়োজন। ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। আজকের এ অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যশোরে নিয়ে আসা।





অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, যশোর ব্রিটিশ বাংলার প্রথম স্বাধীন জেলা। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী যশোরকে টার্গেট করেছেন অর্থনৈতিক বিস্তৃতির ক্ষেত্রে। যশোরকে আমরা আগামীর বিজনেস হাব হিসেবে ধরে রেখেছি। যারা বিনিয়োগ করবেন যশোরকে মাথায় রাখবেন। খুলনা বিভাগের অর্থনীতি যশোরকে ঘিরেই। যশোরের সবজি ও ফল ঢাকার ৭০ ভাগ কাভার করে। ফুলের রাজধানী যশোরে। যশোরে বৈশাখ মাসে ৬-৮ কোটি টাকার ফুলের বিজনেস হয়৷ ব্যাংকের যে সমস্যা আছে নন ব্যাংকিং এ আসলে সেগুলো অনেকটা কমে যায়। জনগণের জন্য সুদহার আরও কমিয়ে আনার আহবান জানাচ্ছি। তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। যশোর ছাড়াও অন্যান্য জেলাগুলোতে এ মেলার আয়োজন করলে পুরো দেশ এগিয়ে যাবে।





যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহিন চাকলাদার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কি পর্যায়ে লোন দিবে, কাদের দিবে সেটা পরিষ্কার করতে হবে। যশোরের মানুষ খেলাপি করে না। যশোরের মানুষ ভালো। আতিথেয়তা ও কমিটমেন্ট পূরণে বদ্ধ পরিকর। ব্যাংকগুলোতে যখন লোন নিতে যাই তাহলে জামানত দিতে হয়। নতুবা লোন পাওয়া যায় না। লোনের বিষয়টা পরিষ্কার করলে আরো সুবিধা হবে। রাজধানীর পর যশোরে প্রায় সব ব্যাংকের শাখা আছে। এখানের সবজি সারা দেশে যায়। পদ্মা সেতু বা রেলই নয়, রুপসা সেতু, কালনা সেতু এসব যশোরের অহংকার। আমরা তিনঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছে যাচ্ছি৷ আগে সবজি পৌঁছাতে অনেক খরচ হতো। এখন দ্রুত পৌঁছে যায়, কম খরচে। বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে চেয়েছেন। সেটা তার কন্যা পূরণ করছেন। আজ বাংলাদেশ উন্নত বাংলাদেশ। খুলনা বিভাগীয় শহর হলেও বিজনেসে লিড দিচ্ছে যশোর।





অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রফিকুল হাসান বলেন, করোনার মাঝামাঝি সময়ে একজন নারী উদ্যোক্তা ফোন দিয়েছিলেন, তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারছে না। আইডিএলসি থেকে ৩ কিস্তিতে ৮৫ লাখ টাকা নিয়েছে। তার ব্যবসা বড় হয়েছে। সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প এখন যশোর নির্ভর হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ এখানে অনেক ভূমি কিনতে চেয়েছে। ইপিজেড হচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ। এখানে মাছ, শাক-সবজি, আরএমজি, টেক্সটাইল সব খাতই সম্ভাবনার। বেনাপোল থেকে ভাংগা পর্যন্ত ৬ লেন সড়ক হবে। যশোর থেকে মংলা পর্যন্ত ৬ লেন হওয়ার কথা রয়েছে। রেললাইন সম্প্রসারণ হবে। পদ্মার রেল প্রজেক্ট চালু হলে সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। দেশের সর্ববৃহৎ অটোমোবাইলস শিল্প যশোরে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যশোরে আসার অনুরোধ জানাবো।





বিএলএফসিএ এর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও খাজা শাহরিয়ার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. কায়সার হামিদ, লংকান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান্তি কুমার সাহা, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও নাসিমুল বাতেন, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবুল আহসান, আইডিএলসি ফাইনান্স এর ডিএমডি সৈয়দ জাভেদ নূর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।





এর আগে সকাল ১০ টা থেকে মেলার প্রদর্শনী শুরু হয়। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। মেলায় প্রধান সহযোগী ছিলো আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিলো মিডাস ফাইন্যান্স লিমিটেড, লংকান এলায়েন্স ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ও আইআইডিএফসি।


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ