প্রাণিখেকো হ্রদ: নামলেই পাথর হয়ে যায় প্রাণী

প্রাণিখেকো হ্রদ: নামলেই পাথর হয়ে যায় প্রাণী
রহস্যে ঘেরা পৃথিবী। বিশ্বের নানান অঞ্চলে লুকিয়ে আছে অজানা রহস্য। সৃষ্টিকর্তা যেন তার রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন প্রকৃতিতে। অজানা সেই রহস্য জানতে মানুষের চেষ্টা বা কৌতূহলের শেষ নেই। এমনই এক রহস্য নিয়ে টিকে আছে একটি হ্রদ যেখানে নামলে যে কোনো প্রাণী পরিণত হয় পাথরে।

দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার নেট্রন হ্রদ রহস্যময় হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। এই হ্রদ এতটাই ভয়ঙ্কর যে এখানে নামলে পাথর হয়ে যায় প্রাণী। যদিও এই রহস্যের ব্যাখ্যা রয়েছে। নেট্রন হ্রদে পানির ক্ষারতা (পিএইচ) ১০.৫। বছরের বেশির ভাগ সময় হ্রদের পানির তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। যে কারণে হ্রদের তলদেশে পড়ে থাকে তরল লাভা। সোডিয়াম ও কার্বোনেটের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়োনোব্যাকটেরিয়া নামে অণুজীব। এই অণুজীবের শরীরে লাল রঞ্জক থাকে। ফলে হ্রদের পানি লাল রঙের হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রঙেই আকৃষ্ট হয়ে পশুপাখি হ্রদে নামে। কিন্তু পানি অতিরিক্ত ক্ষারধর্মী হওয়ায় সেগুলো মারা যায়।

প্রায় এক যুগ আগে ২০১৩ সালে লেক নেট্রনের ধারে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার নিক ব্র্যান্ড। হ্রদের আশেপাশে ঘুরে তিনি দেখতে পান কয়েকটি পাথরের মূর্তি যেগুলো দেখতে ঠিক পাখির মতো। সেগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করে তিনি দেখতে পান মূর্তি নয়, সবগুলোই মৃত পাখির দেহ। তিনি সেগুলোর ছবি তোলেন। পরে সেসব ছবি দেখতে গোটা ইউরোপজুড়ে মানুষের ভিড় জমে যায় তার প্রদর্শনীতে। নিক ছবিগুলোর নাম রেখেছিলেন ‘অ্যালাইভ এগেইন ইন ডেথ’।

১৯৫৪ সালে প্রথম নেট্রন হ্রদের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বছরের সব সময় এই হ্রদে ফ্লেমিংগো পাখি দেখা যায়। এই পাখির গায়ের সঙ্গে মিল রয়েছে হ্রদের পানির। ধারণা করা হয় প্রায় ২৫ লাখ ফ্লেমিংগো পাখির আবাসস্থল এই হ্রদে। হ্রদের শ্যাওলা খেয়েই পাখিগুলো বেঁচে থাকে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো তাদের কোনো ক্ষতি হয় না।

সবচেয়ে বিপজ্জনক কথা হলো, নেট্রন হ্রদে পাখিগুলোকে নামতে হয় না, এর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় হ্রদের পানিতে পড়ে যায় পাখিগুলো। কারণ হ্রদে পানির বদলে রয়েছে লাভা। লাভা থাকায়, সূর্যের রশ্মি হ্রদ থেকে বেশি পরিমাণে প্রতিফলিত হয়। উড়ে যাওয়ার সময় পাখিগুলোর চোখে ধাঁধা লেগে যায়। যে কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হ্রদে পড়ে যায় পাখিগুলো। নিক সেই পাখিদেরই সন্ধান পেয়েছিলেন। এর মধ্যে ফ্লেমিংগো কীভাবে অবাধে ঘুরে বেড়ায়, সেও এক রহস্য। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হ্রদের এই ক্ষারধর্মীর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে ফ্লেমিঙ্গো।

নেট্রন হ্রদ ৫৭ কিলোমিটার লম্বা, চওড়ায় ২২ ফুট এবং গভীরতা ১০ ফুট। এই হ্রদের আশেপাশে আবাসস্থল নেই। হ্রদের পানি পরীক্ষা করে গবেষকদল জানিয়েছেন, প্লিস্টোসিন যুগে তৈরি হওয়া এই হ্রদের তলদেশ লাভাগঠিত। আর তার মধ্যে রয়েছে ট্রনা ও নেট্রন নামে দুটি যৌগ। এই দুই যৌগের কারণেই পানির রঙ লাল। শুধু তাই নয়, পানিতে সোডিয়ামের পরিমাণও অত্যন্ত বেশি। ১৯৯৮ সালে স্টুয়ার্ট অ্যান্ড স্টুয়ার্ট নামে একটি কোম্পানি এই হ্রদের পাশে সোডিয়াম নিষ্কাশনের জন্য কারখানা তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। কারণ, কারখানা তৈরি হলে হারিয়ে যাবে ফ্লেমিঙ্গোর দল।

গবেষকদের মতে, এই হ্রদের পানিতে সোডিয়ামের ক্ষার এত বেশি যে যে কোনো জীবিত প্রাণীর চামড়া পুড়ে যাবে নিমিষেই। আর দীর্ঘক্ষণ সেই হ্রদের পানিতে থাকলে মারা যাবে শরীরের কোষ। সেসব মৃত কোষকে তখন পাথরের মূর্তি ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না।

এই রহস্যময় হ্রদ দেখতে ঘুরতে আসেন অনেক পর্যটক। তবে হ্রদে নামা বারণ।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়