শেয়ারবাজারে কারসাজিতে জড়িত বাজার বিশ্লেষক

শেয়ারবাজারে কারসাজিতে জড়িত বাজার বিশ্লেষক

শেয়ারবাজারে অনিয়মে অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মনগড়া মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ট্রেড সাসপেন্ড হওয়া ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে অনিয়মে জড়িত হন এই শিক্ষক।





জানা গেছে, তামহা সিকিউটিজের বিশাল অংকের অর্থের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বিভিন্ন সময় নিজের স্বার্থ উদ্ধারে শেয়ারবাজারে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেন। সম্প্রতি তাঁর নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ারবাজারকে ক্যাসিনোর সঙ্গে তুলনা করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা নিয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে।





সূত্র মতে, শেয়ারবাজার নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। শুধু তামহা সিকিউরিটিজ থেকে তিনটি হিসাবের মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সই করা একটি চিঠির মাধ্যমে এ অভিযোগ করা হয়। সেখানে তিনটি বিও হিসাবের মাধ্যমে শাহি আহমেদ (বিও নং: ১২০৩১২০৪৪৯৪২২০), রুহুল আমিন (বিও নং: ১২০৩১২০০৫৮৫৯০১২৯) এবং দিল আফরোজ পারভিন (বিও নং: ১২০৩১২০০০৫২৩৮৪৪৪) এই তিন হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষক আল আমিন ১ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৩ টাকা জালিয়াতি করেছেন। বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তদন্তাধীন রয়েছে।





জানা যায়, আল আমিন তাঁর আত্মীয়দের মাধ্যমে এ জালিয়াতি করেন। তামহা সিকিউরিটিজ এ শিক্ষকের থেকে ৫০ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও উল্টো তিনি আরও অনেক টাকা প্রতিষ্ঠানটি থেকে দাবি করে ডিএসইতে অভিযোগ করেন।





জানা গেছে, শেয়ারবাজারের মন্দাভাব কাটাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে গতি ফিরতে শুরু করেছে শেয়ারবাজারে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিনের বক্তব্যে আবারও অস্থির হয়ে উঠছে দেশের শেয়ারবাজার। বাজারকে অস্থিতিশীল করে সরকার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপদে ফেলতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে ঢাবির এই শিক্ষক।





বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুদিন থেকে আল আমিন তার ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে শেয়ারবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) ঢাবির এই শিক্ষক শেয়ারবাজারকে ক্যাসিনোর সঙ্গে তুলনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। একই স্ট্যাটাসে করেন বিএসইসির সমালোচনা।





অর্থসংবাদের পাঠকদের জন্য শিক্ষক আল আমিনের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:





‘পুঁজিবাজার বন্ধ করে দেয়া উচিত। এটা কেসিনোকেও হার মানিয়েছে, কিছু কিছু দুর্বল মৌল ভিত্তির স্বল্প মূলধনী শেয়ারের বেলায়। নানা কিচ্ছা কাহিনী বলা হচ্ছে বাজারে, তার মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়, চেক নগদায়ন ইস্যু নিয়ে বিসেকের নির্দেশনা, অন্যদিকে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। যদি এসব হবে, তাহলে শুধু খারাপ শেয়ার বাড়বে কেন? নগদ টাকা দিয়ে যেসব শেয়ার কেনা লাগে, সেসব শেয়ার লাগামহীন গতিতে বাড়ছে আর যেসব ভাল শেয়ার অধিকাংশ ফ্লোরে। আর যেসব ফ্লোরের উপরে ছিল, কত দ্রুত গতিতে ফ্লোরে যাবে, সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। তাই বিনিয়োগ নিয়ে কোন কথা বলে কাজ হচ্ছে না, এমন সময় কাজ হবে তখন কারো কিছু করার থাকবে না। আবাসন খাতের একটা শেয়ার ৫৩.৬০ থেকে বেড়ে ১৫২ টাকা হলো স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। বলা হল প্রথম প্রান্তিক দিলে ৪০০-৫০০ যাবে। কেন যাবে কেউ জানে না। আজকেই ক্রেতা শূন্য করে ১২৪.২০ টাকা হয়েছে। সেটা সমস্যা না। সমস্যা হলো সেল প্রেশার ছিল ৭ লক্ষ শেয়ারের বেশি, যা বলছে আগামীকালও ক্রেতা শূন্য থাকতে পারে। তাহলে কোথায় গেল, ঐসব ফেরিওয়ালারা? আমার কি? আমি কম বুঝি, যারা বেশি বুঝে তারা বুঝলেই হলো। এটা যার যার বুঝ, কেউ রাখবে দাঁড়ি, কেউ রাখবে মুচ, তাই আমি চুপ।’





শেয়ারবাজারকে ক্যাসিনোর সঙ্গে তুলনা করায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজার বন্ধ করে দিলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর কি হবে। আর দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ শেয়ারবাজার বন্ধের আহ্বান তিনি কিভাবে জানাতে পারেন।





এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, কিছু সংখ্যক স্বল্প মূলধনী শেয়ারের দাম বাড়তে থাকায় ওই ইস্যুতে ক্যাসিনো মার্কেট বলেছি। পুরো শেয়ারবাজারকে ক্যাসিনো মার্কেট বলিনি। এটা শুধুমাত্র জনগনকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে বলেছি। চেক নগদায়ন ইস্যুতে তিনি বলেন, নগদ টাকায় যেসব শেয়ার কেনা যায় সেগুলোরই দাম বাড়ে, যেগুলো ভালো মূলধনী শেয়ার সেগুলো ফ্লোরে (ফ্লোর প্রাইস) যায়, বিষয়টি তো সাংঘর্ষিক।





তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোথাও কোন অভিযোগ করিনি। আমার নিজের কোন বিও অ্যাকাউন্টও নেই। তামহা সিকিরিটিউজের মালিক দীর্ঘদিনের অনিয়ম ঢাকতে এবং আমার প্রাপ্য টাকা না দিতেই আমার বিরুদ্ধে বিএসইসিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত