বাংলাদেশকে ২ হাজার ১০০ টাকা ভাতার সুপারিশ ইউএনডিপির

মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষকে নগদ ভাতা দেওয়া জরুরি বলে মনে করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। তাদের প্রতি মাসে ন্যূনতম ২৫ ডলার করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। বর্তমান বাজারদরে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২ হাজার ১০০ টাকার মতো। সংস্থাটি আরও বলছে, জরুরি ভিত্তিতে অতিদরিদ্র মানুষকে সাময়িক আর্থিক সহায়তা দিলে করোনা সংক্রমণের গতি কমতে পারে।

জাতিসংঘের এই সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের ৬ কোটির ৫৩ লাখের বেশি গরিব মানুষের নগদ সহায়তা দরকার; যা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশের কিছুটা বেশি। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মাসে ২৫ ডলার করে ভাতা দিলে সরকারের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। করোনার কারণে বিশাল জনগোষ্ঠীর উপার্জনের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ৫০ লাখ মানুষকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার একটি কর্মসূচি পরিচালিত করছে।

টেম্পরারি বেসিক ইনকাম: প্রোটেক্টিং পুওর অ্যান্ড ভালনারেবল পিপল ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়। ইউএনডিপি কয়েক মাস ধরে বিশ্বের ৬০টি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব গরিব ও ঝুঁকিতে থাকা বহু মানুষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নেই।

ইউএনডিপির এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৩২টি উন্নয়নশীল দেশের ২৭০ কোটি মানুষের নগদ সহায়তা দরকার। এসব মানুষকে তাদের মাসের মূল আয়ের বন্দোবস্ত করতে হবে। আর এতে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে।

করোনা সংক্রমণের পর দরিদ্র মানুষের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য দেশের একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ গত মে মাসে এক যৌথ গবেষণা করে বলেছিল, সংকট নিরসনে গ্রাম ও শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকার নগদ সহায়তা দেওয়া দরকার। এর মধ্যে গ্রামের মানুষকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং শহরের মানুষকে ১ হাজার ৭৪৫ টাকা করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগদ সহায়তা দেওয়ার এ ব্যবস্থা বেশ কার্যকর এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, এখন মহামারি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এখন প্রতি সপ্তাহে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সংক্রমণ হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এসব দেশের প্রতি ১০ জন শ্রমিকের সাতজনই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তাঁদের ঘরে বসে আয় করার উপায় নেই।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও ইউএনডিপির প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আমি এ প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করছি না। সংখ্যাটা নিয়ে হয়তো কথা থাকতে পারে। আমাদের এখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষ অনেক বেশি। তারা দিন আনে দিন খায়। সন্দেহ নেই তাদের সহায়তা দরকার। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সহায়তা করছি। আর এটা চলছে।’

ইউএনডিপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু নগদ অর্থ দেওয়াই মুখ্য উপায় নয়। পাশাপাশি মানুষের চাকরি বাঁচানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে সহায়তা বাড়ানো, প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।

বিভিন্ন দেশের সরকার এ ধরনের সহায়তা দিলে মানুষের জন্য তা উপকারে আসবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি গতি পাবে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ কমতে পারে বলেও মনে করেন ইউএনডিপির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আচিম স্টেনার।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি