ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ফের আলোচনার ঝড়

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ফের আলোচনার ঝড়

টানা দরপতন ঠেকাতে চলতি বছরের জুলাই মাসে শেয়ারবাজারে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস চালু করে বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের পর বাজারে স্বস্তি ফিরলেও এখন বেশিরভাগ শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকছে। বাজার বিশ্লেষকরা ফ্লোর প্রাইসের সমালোচনা করলেও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এতে স্বস্তি পাচ্ছেন। আর যারা শেয়ার নিয়ে ফ্লোরে আটকে আছেন তারা করছেন সমালোচনা।


ডিএসই’র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইস চালুর পরে শেয়ারবাজারে এক সপ্তাহ স্বস্তি থাকে। চালুর পর প্রথম দিনই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়। সেদিন ডিএসই’র প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ১৫৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। ওই কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজারের অপর দুই সূচকও বেড়েছিল। একই সঙ্গে সেদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৮২ কোম্পানির মধ্যে ৩৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরই বৃদ্ধি পেয়েছিল।

এছাড়াও ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। সূচকের উল্লম্ফন ও বাজার মূলধন বৃদ্ধির কারণে ফ্লোর প্রাইসকে শুরুতে মনে করা হয়েছিল শেয়ারবাজারের জন্য আর্শীবাদ। তবে দিন যতই যাচ্ছে, ততই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন ফ্লোর প্রাইসের কারণে জোর করে শেয়ারের দরপতন ঠেকানো হচ্ছে। ফলে ফ্লোর প্রাইসের বিরোধিতাও করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

>>আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে আবারও ফ্লোর প্রাইস চালু

ফ্লোর প্রাইসের কারণে এখন বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা বেশিরভাগ শেয়ারের দর অপরিবর্তিত থাকছে। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নিয়েছে মোট ৩৭৩টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১৭৭টি কোম্পানির শেয়ারদরই আজ অপরিবর্তিত ছিল। দর কমেছে ৮১টি কোম্পানির। বিপরীতে ১১৫টি শেয়ারের দর বেড়েছে।

গত সপ্তাহেও বাজারের চিত্র একই ছিল। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে মোট ১৬০টি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। পরের দিন (২৬ সেপ্টেম্বর) অপরিবর্তিত ছিল ১৭৩ কোম্পানির শেয়ারদর। ২৭ সেপ্টেম্বরও ১৭৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়নি, কিংবা কমেওনি। এর পরের দুই কার্যদিবসে ১৮৬টি করে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল অপরিবর্তিত। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত থাকার মূল কারণ ফ্লোর প্রাইস।

বাজারের এমন আচরণকে অনেকেই অস্বাভাবিক মনে করছেন। আজ যেসব কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল, তাঁর বেশিরভাগই ফ্লোর প্রাইসের কারণে কমতে পারেনি। সাধারণ আগে অপরিবর্তিত শেয়ারের সংখ্যা থাকতো একশোর নিচে। তবে ফ্লোর প্রাইসের কারণে সম্প্রতি বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর অপরিবর্তিত থাকছে।

>>আরও পড়ুন: ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলো বিএসইসি

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারবাজারের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, কোন বিনিয়োগকারীর টাকার জরুরি দরকার হলেও সে ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না। আবার কেউ হয়তো নিজের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোন শেয়ার কিনতে চাচ্ছে। কিন্তু তার শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কারণে সে বিক্রি করতে পারছে না। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ ফ্লোর প্রাইস রাখার পক্ষে।

[caption id="attachment_162410" align="alignnone" width="1024"] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ[/caption]

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান ফ্লোর প্রাইস নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি মনে করেন ফ্লোর প্রাইস শেয়ারবাজারের জন্য ভালো কোন সমাধান নয়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরীর মতে, প্রধান সূচক (ডিএসই এক্স’) ১০ হাজার পয়েন্ট না হওয়া পর্যন্ত বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস তুলবে না। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বাজার এখন স্থিতিশীল আছে। এখন যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয় তবে বিনিয়োগকারীরা আবারও লোকসানে পড়বেন।

মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কোন নেগেটিভ দিক আমরা দেখছি না। কারণ আমি শেয়ার কিনে অন্তত স্বস্তিতে থাকতে পারি যে, আমার শেয়ারটার দাম না বাড়লেও অন্তত স্থিতিশীল থাকবে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে মার্কেট এক সপ্তাহের মধ্যে ধূলিস্মাৎ হয়ে যাবে বলেও মনে করেন বিনিয়োগকারী পরিষদের এই প্রতিনিধি।

ফ্লোর প্রাইসের ইতিবাচক কিছু দিক লক্ষ্য করছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পোক্ত করতেই ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস জারি করার পর বাজারে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। আগে যেখানে গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে ছিল, সেটি এখন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

আগেরবার ফ্লোর প্রাইস চালুর পর কিছু কোম্পানির ফ্লোর তুলে দেওয়া হয়েছিল, এবার বিএসইসি এ ধরণের কিছু ভাবছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের এই কর্মকর্তা বলেন, আগে যখন ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে তখন অনেক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হচ্ছিল না। কিন্তু এবার দর অপরিবর্তিত থাকলেও শেয়ার বিক্রি হচ্ছে। তাই মার্কেটে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। প্রতিদিন লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি হচ্ছে।

প্রথমবার যখন শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয় তখনও বেশিরভাগ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত থাকতো। ফলে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় বিএসইসি। এর দুই মাস পর ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা আরও ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহার করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ২০ থেকে সব কোম্পানির শেয়ারের ওপর থেকে ফ্লোর প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন। টানা দরপতনের মুখে চলতি বছরের ৩০ জুন আবারও শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস চালু করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

শেয়ারবাজারসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে অর্থসংবাদের ফেসবুকইউটিউবেও যুক্ত থাকুন

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত