আমেরিকান সাদা চামড়ার কৃষকের ঘরবসতি

আমেরিকান সাদা চামড়ার কৃষকের ঘরবসতি
ম্যাথিউস। বাফেলো থেকে দেড় ঘন্টার পথ। ম্যাথিউস জায়গার নাম। আমেরিকান সাদা চামড়ার কৃষকের ঘরবসতি। দূরে। অনতিদূরে। দু'একটি বসতঘর। ঘেরা জঙ্গল। অনেকটা পশ্চিমাঞ্চলের (ওয়েস্ট নিউ ইয়র্কের) জঙ্গল মহল। এই ব্যারিখণ্ড অতল একদিকে মরুভূমির, সিম, ভূট্টো চাষাবাদ। ... বনজঙ্গল, পাহাড় পর্বত, চাঁড় ডংরি, পাথর, মাটিতে ঘেরা এই খামার খন্ড।
আমেন্ডার মায়ের বাড়িটি ছোটখাটো একটি পাহাড়ের সমতল ভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে। পিচঢালা রাস্তা থেকে প্রায় পনেরো-কাঠের পাটাতনের সিঁড়ি বেয়ে মূল দরজায় পৌঁছা যায়। কম করে হলেও একশ বছরের পুরানো বাড়ী এটি, অথচ এখনও কী শক্তপোক্ত দেখায়। উপরে উঠে যাওয়া সিঁড়িগুলো খুব ভারি এবং মজবুত। বাড়ির সামনে আঙ্গিনায় বড বড় পাথর বিছানা। এক পেশে পাথরের ঝর্ণা। পাথরের চেহারা দেখলেই মনে হয় যেন ওরা একেকটি কালের সাক্ষী হয়ে শুয়ে আছে। পুরো বাড়িখানা কাঠের তৈরী, কাঠের পাটাতন, মাটির খড়ম দিয়ে ঘরের রুপ, ছাদ, কাঠের বেশ মোটা মোটা থমের ভীম। এক একেটি ভীম দুই বাই ১২। (২/১২)। ঘরের বেড়া প্লাস্টিক সাইডিং। একেবারে ছবির মত। বাড়ীর পেছন দিকে চেরী ফল, পিয়ার্সের বন, রাস্তা থেকে টুক টুকে লালচে চেরী ফলের বাগান দেখা যায়।
বাড়িটির একটি বিশেষত্ব আছে, সামনের দিকটি এত উঁচুতে হলেও পেছনের দিক সমতলে মিশে আছে। কিচেনের দরজা দিয়ে পেছনে যাওয়ার রাস্তা। পেছন দিকটায় বেশ অনেকখানি চওড়া জমি। সেখানে ভুট্টোর চাষ করেছে। সবুজ বনায়ন।
করোনা মহামারীতে ম্যাথিউসে তেমন কোন এ্যাপেক্টড করেনি। তবে করোনাভাইরাস নামে একটি মরণব্যাধি ভাইরাসে আক্রমণ করেছে নিউ ইয়র্কে। এটি আমেন্ডা জানে। ম্যাথিউসে করোনায় কোন প্রাণঘাতী হয়নি। ধূ ধূ মরুভূমি। গরু ও মহিষ, ছাগল- ভেড়ার খামার। পড়ে আছে অনেক পরিত্যক্ত জমি। বাংলাদেশের একটি জেলার পুরো বাসিন্দা এনে বসতি করলেও মানুষ কি? দেখা যাবে না। আমেন্ডা ইচ্ছে করলে বাড়ীর চারদিকে এ সময়ে লাউ, কুমড়োর চারা লাগাতে পারত কিন্তু আমেন্ডার জায়গায় তো আমেনা কিংবা আমিনা নামের কেউ নেই। তাই কিছুই লাগায়নি। কারণ আমিনারা লাউ কদু চারা লাগাই। আর আমেন্ডারা লাগাই বিভিন্ন রকমের ফুল গাছ।
আমেন্ডার বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুরে ইন্ডিয়ান গ্যাস স্টেশন ও গ্রোসারী শপ আছে। সেখান থেকেও শাক-সব্জী, লাউ কদু শশা টমেটো কিনতে পাওয়া যায়। তাই এত খাটুনি করে আমেন্ডা এসবের বাগান করতে আগ্রাহী নন।
গতবছর কোরবানীর উদ্দেশ্যে ম্যাথিউস গিয়েছিলাম। এর আগেরবার যখন এসেছিলাম, একটি কমলার চারা লাগিয়ে গেছিলাম। এবার দেখলাম, ওটা বেশ বড় হয়েছে। হয়ত আর বছর দুই পর কমলা ধরবে, আমি করোনার এ যাত্রায় বেঁচে গেলে কমলা ধরার দৃশ্যপট দেখতে পাবো। আর যদি না আসতে পারি তাতে কমলার দৃশ্য দেখব না। কমলার ভেতর দিয়ে আমেন্ডা হয়ত আমাকে দেখবে।
আমেন্ডা শুদ্ধ করে আমার নামটি উচ্চারন করতে পারে না। ওর কাছে কঠিন মনে হয়। রেল রাস্তার মত দীর্ঘ আমার নাম। জাত খান্দান চৌদ্দ পুরুষ দীর্ঘনামের অধিকারী। সেহেতু আমার নামটাও। সংক্ষিপ্ত স্বরে তসলিম বলতে সে বলে তাছ্লী । হাই তাছলী। শুদ্ধ নাম উচ্চারণের সমস্যা হওয়ায় সংক্ষিপ্ত নাম এস এম (স্যাম)বলতে বলেছি। [স্যাম রাখি না কুল রাখি] কিন্তু তাও পারে না। সাদা চামড়ার এ মেয়েটি। তার পর বললাম স্যাম বলতে, তা পারে? হঠাৎ আমেন্ডা প্রশ্ন করল?


What do you mean by SM?
বললাম! What?
সে বলে Nothing, just.
Oh , so you know,
সে বলল, May be S like Sam, M like marry
No,
Ok that’s fine.


কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে আমেন্ডার বড় বোন বের হল। সাথে তাঁর তিনটে বাচ্চা। তারা নাইগ্রা থাকে। এ সামারে বন বাঁদারে ঘেরা জঙ্গল দেখতে স্ব পরিবারে বেড়াতে আসল। আমেন্ডার পাশেই খামার বাড়ি জনাপাঁচেক লোক খামারে কাজ করে। সবাই সাদা চামড়ার মানুষ, স্মার্ট ও বিনয়ী। খামার বাড়ির কয়েকটি গরু দেখেই। একটির বুকিং দিলাম। পরে দেখি এক ঝাঁক পাতি হাঁস। খামার বাড়ি তথা ভূট্টা বাগানের পাশেই পরিত্যক্ত ভূমিতে মনের আনন্দ হাঁসগুলো ঘাস খাচ্ছে। কিছু খোলা আকাশে উড়ছে। আমেন্ডার দিদির বাচ্চারা হাঁসের পেছনে দৌড়ছুট। যেতে যেতে দৌড়। আমেন্ডার দিদির নাম মায়া (Maya)।
মায়া দু'টো চোখ যেন ধবল গাভীর চোখের মত। গাভীর পাশ থেকে বাছুর যখন লেজ উঁচু করে দে দৌড়। দৌড়তে দৌড়তে বাচুর যখন সীমানা অতিক্রম করে ঠি ক তখনই মা গাভীটা হাম্বা করে চিৎকার দে। তখন গাভীর বাচুরটি সামনে এগুই না। থমকে দাঁড়ায়। মা গাভীটির মায়াবী চিৎকারে বাচুর যেমন ব্যাক হয়ে ফিরে আসে। তেমনি মায়ার বাচ্চারা যখন হাঁসের পালকের পিছনে ধূ ধূ খামারে দৌড়ঝাপ করে, যখন বিপদসীমা অতিক্রম করে মায়ার ডাকে তারা ফিরে আসে। গাভীর (চোখ) দৃষ্টির মত মায়ার দৃষ্টিও সন্তানের দিকে?
আমার ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে, নদী, পাহাড় আর সমুদ্র, প্রকৃতির এই বিশাল তিন শক্তির বলয়ে আমি শৈশব কৈশোর পেরিয়ে বড় হয়েছি, দূর্বলতা তো থাকবেই ঘন উপত্যকা নদী পাহাড় ও সমতল বিস্তৃত মাঠজুড়েই যেন সবুজের বনায়নের প্রতি।


আমেন্ডার খামার বাড়ীতে আমি বেশ ক’বার এসেছি। বাড়ীর প্রতিটি আসবাব থেকে শুরু করে ইটপাথর এমনকি বারান্দায় দড়ির ঝুলনাটাকেও খুব আপন মনে হয়। বাড়ির বাইরের দিকে ফুল-লতা-পাতা কারুকাজের লোহার রেলিং দেয়া বারান্দাটি আমার সবচেয়ে পছন্দের, এই বারান্দা থেকে দূরের পাহাড় সমান ভূট্টো বাগান খুব স্পষ্ট দেখা যায়। তাছাড়া ধূ ধূ পরিত্যক্ত ভূমিপাহাড় এসব কেমন জানি আমার অনেক স্মৃতি প্রাণশক্তি, নদী সমুদ্র পাহাড় আমার চেতনা, যখনই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকি, মায়ের কথা মনে পড়ে। চোখ বন্ধ করে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে চলে আসি পাহাড়ের কাছে। মাঠ বন জঙ্গল ও সবুজ বনায়নের কাছে।

সাইয়িদ মাহমুদ তসলিম
প্রবাসী সাংবাদিক, বাফেলো, ওয়েস্ট নিউ ইয়র্ক

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়