খুব শীগগির শেয়ারবাজারে লেনদেন ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

খুব শীগগির শেয়ারবাজারে লেনদেন ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা করে যে আসার কথা, সেটা নিয়ে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রেখেছি। আপনারা যেনে খুশি হবেন এরইমধ্যে ১৩টি ব্যাংক এই ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য পর্ষদে পাশ করিয়ে ফেলেছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সবগুলো ব্যাংকই বিনিয়োগ নিয়ে আসবে।তবে ভালো খবর হচ্ছে আমার যোগদানের সময় যখন লেনদেন ৫০ কোটি টাকা হতো, সেটা এখন ৩০০ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই আশার খবর। তবে খুব শীগগির এটা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। তবে আমি বিশ্বাস করি আস্থা চলে আসলে তখন আর টাকার সমস্যা হবে না।

শনিবার (১৮ জুলাই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও পুণ:রুদ্ধারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন।

মানি মার্কেট বন্ধ না থাকলে ক্যাপিটাল মার্কেট কখনো বন্ধ থাকে না উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, যতদিন দায়িত্বে আছি, ততদিন শেয়ারবাজার বন্ধ হবে না, যদি না মানি মার্কেট বন্ধ থাকে। ফ্লোর প্রাইস একটি প্রতিবন্ধকতা, এটা ঠিক। এটা আমরাও বুঝি। মার্কেটকে ঠিকভাবে মুভ করতে দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে যথাশীঘ্রই ব্যবস্থা নেব।

দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে পর্যবেক্ষন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন,  যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আসেন, তারা ভালো আছেন। তবে কেউ কেউ নিয়মিত লেনদেন করতে চাচ্ছেন। সার্ভেইল্যান্স রিপোর্টে দেখা গেছে, তারা বড় ধরনের টাকা বিভিন্ন পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করেন এবং শেয়ার দর বাড়িয়ে অল্প সময়ে বিক্রি করে টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারনে আমাদের সার্ভেইল্যান্সের আগের রিপোর্টে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিদেশীদের ভূমিকা ভালো আসছে না এবং এখনো তাই দেখতে পাচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে তাদেরকে স্বাগত জানাই। এক্ষেত্রে আমরা সবধরনের সহযোগিতা করছি। কিন্তু ম্যানপুলেশনের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কঠোর। যাতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়। তাই ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে বিষয়টি বুঝানোর জন্য বলব। প্রয়োজনে আপনারা (ব্রোকারেজ হাউজ) রোড শো আয়োজন করেন, সেখানে আমি যাবো। যেদেশে বলেন সেখানেই যাবো। সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, সাংহাইসহ যেসব দেশে বিনিয়োগকারীরা আছে, সেখানে রোড শো করেন। আমি প্রেজেন্টেশন দিয়ে তাদেরকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে নিয়ে আসব। তাদেরকে বিক্রি করার জন্য যেমন বুঝান, একইভাবে এখন কেনার জন্য বুঝাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অনলাইনে অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ডিসক্লোজার ভিত্তিতে অ্যাকাউন্টসের উপর আইপিও দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের অডিটিংয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বড় সহযোগিতা লাগবে। কারন অ্যাকাউন্টসে অনেক রকম কারসাজি করা হয়। এমনও হয় যে এবছর যে অ্যাকাউন্টস দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে, পরের বছর গিয়ে আগের বছর অ্যাকাউন্টস পুরো পরিবর্তন করে ফেলছে। এই সমস্যাটা আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আগে আইপিওতে যে ভুলগুলো দেখেছি, সেখানে মেজর ছিল অ্যাকাউন্টিং সংক্রান্ত কাগজপত্রে। এখানে জালিয়াতি করা হয়। আমরা নিজেরা দেখতে পাচ্ছি একটি কোম্পানি যে ধরনের অবস্থা দেখিয়ে শেয়ারবাজারে এসেছে, প্রকৃতপক্ষে সেরকম না। এখন ওইসব কোম্পানিকে নিয়ে সবাই একটু সমস্যায় আছে। গত কমিশনে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জালিয়াতির কারনে জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের শাস্তির দরকার আছে।বাই ব্যাক নিয়ে আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে এখানে কোম্পানি আইনের একটি বিষয় আছে। আমরা নিজেরা এটা করতে পারছি না। এ কারনে এ বিষয়ে কোম্পানি আইনে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।

সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যারকে আরও উন্নত করা হয়েছে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এখন অনেক কিছুই ধরে ফেলতে পারি। কারা প্লে ও ম্যানুপুলেট করছে তা দেখতে ও বুঝতে পারি। কিছু কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ইনসাইডার ট্রেডিং করে ম্যানুপুলেট করেন। এগুলো এখন আমাদের সার্ভেইল্যান্সে ধরা পড়ে যায়। আমরা বিভিন্নভাবে এখন এগুলো ধরতে পারি, কারা এগুলো করে করে বাজারকে প্রভাবিত করছে। সেগুলোকে শাস্তি দিতেই হবে। আমরা সার্ভেইল্যান্স আরও উন্নত করছি।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে দাঁড় করানোর কাজ শুরু করেছি। ২ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারকে ভালো অবস্থানে পাবেন এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শেয়ারবাজার ছড়িয়ে যাবে। আইটিতে আন্তর্জাতিক দক্ষ একজনকে নিয়োগের অনুমতি পেয়ে গেছি। তার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আইটি প্লাটফর্ম দাড় করানো হবে। এই প্লাটফর্মে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের শেয়ারবাজারে ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। যে কারনে হয়তো তাদের দিকেই একটু বেশি খেয়াল রাখা হয়। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন কম। আমরা সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ারবাজার সম্পর্ক্যে ধারনা দেওয়ার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে ব্যাপক কাজ করছি। আপনারা ২ বছরের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তবে তার আগে সাধারন বিনিয়োগকারীরা যেনো কোনভাবে ঠকে না যায়, সেদিকে আমাদের খেয়াল করতেই হবে। মার্কেটে আসলে বিএসইসি ইন্টারফেয়ার করে না। মূলত রুলস-রেগুলেশনের কাজ করে। তিনি বলেন, স্ক্রিপ্ট নিটিংয়ের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করব।

আগামি ২-১ সপ্তাহের মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালকদের আবেদন হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ক্রাইটেরিয়া পূরণ করলেই আবেদন করা যাবে। অন্যথায় তাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে না। কোম্পানির পর্ষদের মধ্যে আমরা স্বচ্ছতা চাচ্ছি। এই মুহুর্তে আমাদের কাছে সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা শুরু থেকেই কাজ করছি।

আপনারা খেয়াল করবেন মাঝখানে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ নিয়ে একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা ডিএসইর সহযোগিতায় দ্রুত সেটাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এবং এমনভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যে, আগামিতে এ ধরনের কাজ করে কেউ পার পাবে না, সেই ম্যাসেজ বাজারে গিয়েছে।

তিনি বলেন, আইসিবি সমস্যার মধ্যে আছে, সে ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আগামি সপ্তাহে একটি টেন্ডারে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে আইসিবিকে পূণ:গঠনের প্রস্তাবনা তৈরী করা হবে। এ বিষয়ে আগামি নভেম্বরের মধ্যেই প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। শেয়ারবাজারে আইসিবির সঠিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রয়োজনে সরকার অর্থায়ন করবে।

ভালো কোম্পানিকে দ্রুত আইপিও দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। এছাড়া রাইট ও বন্ডের অনুমোদন দ্রুত দেওয়া হবে। এসএমই মার্কেটের জন্যও দ্রুত আইপিও দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ডিএসইর এমডি কাজী সানাউল হক, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও এমডি মামুন-উর-রশীদ, আইসিবির এমডি আবুল হোসেন, বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান, ডিবিএ সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরীসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহন করেন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত