ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ

ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ
করোনার সময়েও সচল ছিল কৃষি খাতের উৎপাদন। তাই মহামারিতে ঋণ বেশি প্রয়োজন ছিল কৃষকের।কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণ সহায়তা দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো।

সদ্য সমাপ্ত (২০১৯-২০) অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু অর্থবছর শেষে এ খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গেল অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কম হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন ঘোষণার পর বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ ব্যাংকের শাখা। কিছু শাখা খোলা থোকলেও শুধু লেনদেন চলে সীমিত আকারে। এতে কৃষক ঋণের আবেদনই করতে পারেনি। আবার ব্যাংকগুলো আগ্রহ করে তেমন কোনো উদ্যোগও নেয়নি। যার কারণে কৃষিঋণ বিতরণ হয়নি।

এখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য সরকার ঋণ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কৃষিকে চাঙ্গা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

জানা গেছে, করোনার বিস্তার রোধে সাধারণ ছুটির পুরোটা সময় সচল ছিল কৃষি খাত। সরকারের পক্ষ থেকে সংকটের সময় কৃষি খাতকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তার ঘোষণা দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কৃষি খাতে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য এক বছর সুদভর্তুকি দেবে সরকার। কৃষকরা ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। আর ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে সরকার। এ ছাড়া কৃষি খাতের ঋণের অন্তত ৬০ শতাংশ শস্য খাতে দিতে হবে। কিন্তু সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষকদের সেবা দিতে এগিয়ে আসেনি ব্যাংকগুলো। সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা ছিল শুধু শহরাঞ্চলে। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের সব শাখা বন্ধ ছিল। নতুন ফসল চাষে ঋণের জন্য আবেদনই করতে পারেননি কৃষক। ফলে মহামারির সময় চাহিদা অনুযায়ী ঋণও পায়নি তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মার্চে কৃষিখাতে তিন হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো, যা আগের বছরের মার্চের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। গত বছরের একই মাসে ছয় হাজার ২২২ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। পরের মাস এপ্রিলে কৃষিঋণ বিতরণে ধস নামে। এপ্রিলে মাত্র ৪৯৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। আগের বছর একই সময় ঋণ দেয় দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এপ্রিলে ঋণ বিতরণ কমে প্রায় ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ঋণ বিতরণ বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা। তবে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বিতরণ কমেছে ৩৭ শতাংশ। আগের বছরে মে মাসে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে এক হাজার ৮১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। তবে গেল মাস জুনে আগের তিন মাসের তুলনায় কৃষিঋণ বেড়েছে। জুনে চার হাজার ১৪৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। জুনে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়লেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি ব্যাংকগুলো। গেল অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ কম হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল অর্থবছরে কৃষিঋণের আদায়ও অনেক কমে গেছে। জুন শেষে আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছেরে ছিল ২৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আদায় কমেছে দুই হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। অর্থবছরের জুন শেষে কৃষি খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের দুই দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ পল্লী অঞ্চলে বিতরণ করতে হয়। পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবারহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে অনর্জিত লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ অথবা বিকল্পভাবে অনর্জিত লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশ হারে হিসাবায়নকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
ভরা মৌসুমে সবজির চড়া দাম
বিকাশের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহফুজ মারা গেছেন
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদের ৩ কমিটি গঠন
ব্যাংকে চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শিথিল
মাসিক সঞ্চয় হিসাব খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে
বগুড়ায় রেকর্ড পরিমাণ সরিষার চাষ
এবার রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ