ফারইস্টের অর্থ আত্মসাৎ: রিমান্ডে নজরুল, খালেককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

ফারইস্টের অর্থ আত্মসাৎ: রিমান্ডে নজরুল, খালেককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দায়েকৃত একটি মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক এম এ খালেক এবং তার ছেলে রুবায়াত খালেককে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুব আহমেদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

বীমা গ্রাহকদের জমাকৃত ৮শ’ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে শাহবাগ থানায় মামলা নং ১৫(৯)২২ দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আজ আদালতে হাজির করে পুলিশ।

মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য তাদের ১৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

তবে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে নজরুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড ও এম এ খালেক এবং তার ছেলে রুবায়াত খালেকের দুই দিনের জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন ফকির।

এর আগে চলতি বছরের ৮ মার্চ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেকসহ কোম্পানিটির ৯ পরিচালক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ।

প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং পিএফআই প্রোপার্টিজ লিমিটেড নামক দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ১৫৮তম পর্ষদ সভার ভুয়া সার-সংক্ষেপ তৈরি করে সেটির বরাত দিয়ে কোম্পানিটির ৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করে দুদক।

প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে। ২০২১ সালের শেষের দিকে বিএসইসি কোম্পানিটিতে বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করে। গেল এক দশকে গ্রাহকদের ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন মালিকপক্ষ বিদেশে পাচার করেছে- এমন প্রমাণ পায় বিএসইসি।

গেল এক দশকে আত্মসাতকৃত টাকা বিদেশে পাচার করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন মালিকপক্ষ। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত ছিলেন ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেময়েত উল্লাহ এবং পরিচালক এম এ খালেক। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য জাল নথি পর্যন্ত তৈরি করে।

২ হাজার ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৮৫৪ কোটি টাকায় বেআইনিভাবে জমি অধিগ্রহণ করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৬৫৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মুদারাবা মেয়াদী আমানতের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ৪২১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়। এছাড়াও দুটি ভূয়া সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ১৯২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তৎকালীন মালিকপক্ষ।

এসব অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য গত বছরের ৯ আগস্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কোম্পানিটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়া হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ হেমায়েত উল্লাহকে অপসারণ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

সম্প্রতি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান জুপিটার বিজনেস লিমিটেড ও ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। বেক্সিমকোর দুই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ জনকে ফারইস্টের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনকে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ব্র্যাক ব্যাংক ও মেটলাইফের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি
৩৪ ব্যাংক ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ ব্যবসায় অযোগ্য
কমেছে জীবন বিমার বিনিয়োগ, বেড়েছে সাধারণ বিমার
বিআইএ’র বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
ফের সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারপারসন শেখ কবির
মেটলাইফের বিমা সুবিধা পাবেন ক্যাল বাংলাদেশের কর্মীরা
বেস্ট সিইও'র স্বীকৃতি পেলেন ন্যাশনাল লাইফের কাজিম উদ্দিন
বিমা খাতের বড় সমস্যা কর্পোরেট গভর্নেন্সের অভাব
দুর্বল বিমা কোম্পানিকে মূলধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে
যাত্রা শুরু করলো শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্স