ফেডারেশনের অফিশিয়াল তদন্তে ইকুয়েডরের এক খেলোয়াড় ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন, এই প্রমাণ হাতে পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। পরে ইকুয়েডর ফুটবল ফেডারেশন (এফইএফ) তা ধামাচাপাও দিয়েছে। ইকুয়েডরের এখন কাতার বিশ্বকাপে খেলা শঙ্কার মুখে বলে মনে করছে সংবাদমাধ্যমটি। ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতরে কাতার বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশ। ‘এ’ গ্রুপে ইকুয়েডরের প্রতিপক্ষ কাতার, সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডস। ২০ নভেম্বর কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হবে।
দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব অভিযান সাতে থেকে শেষ করেছে চিলি। মূল পর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি আরতুরো ভিদালের দেশ। চিলি এর আগে ফিফায় অভিযোগ করেছিল, ইকুয়েডরের রাইটব্যাক বায়রন দাভিদ কাস্তিয়ো জন্মসনদ নিয়ে জালিয়াতি করেছেন এবং তাঁর জন্ম কলম্বিয়ায়। গত মে মাসে চিলির অভিযোগ প্রমাণ হলে, ইকুয়েডরের হয়ে কাস্তিয়ো বাছাইপর্বে যে আট ম্যাচ খেলেছেন, তার সব কটিতেই পয়েন্ট কাটত ফিফা।
অর্থাৎ কাস্তিয়ো যেসব ম্যাচে ইকুয়েডরের হয়ে খেলেছেন, সেসব ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট পেত প্রতিপক্ষ দলগুলো। এতে সাত থেকে চারে উঠে এসে কাতার বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেত চিলি। এ কারণেই তখন ফিফায় নালিশ করেছিল চিলি। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে টেবিলের শীর্ষ চার দল সরাসরি খেলার সুযোগ পায় বিশ্বকাপে।
বৃহস্পতিবার বায়রন কাস্তিয়োর বিষয়ে রায় দেবে ফিফার আপিল কমিশন। তার আগে ফিফার তদন্তে উঠে আসা কাস্তিয়োর জন্মসনদ জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস করেছে মেইল অনলাইন। কাস্তিয়োর জন্ম ইকুয়েডর না কলম্বিয়ায়—এটাই ছিল তদন্তের মূল বিষয়। চার বছর আগে তদন্তকারীদের নেওয়া সাক্ষাৎকারে জন্মসনদ জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন কাস্তিয়ো। সেই সাক্ষাৎকারের অডিও প্রকাশ করেছে মেইল অনলাইন। তাতে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল তো বটেই, ফিফায়ও ঝড় বয়ে যাওয়ার কথা। সাক্ষাৎকারে কাস্তিয়ো যেসব বিষয় স্বীকার করেছেন, তা নিচে দেওয়া হলো—
* কাস্তিয়ো জানিয়েছেন, তাঁর জন্ম ১৯৯৫ সালে। কিন্তু ইকুয়েডরিয়ান জন্মসনদে তাঁর জন্ম ১৯৯৮ সালে।
* কাস্তিয়োর কলম্বিয়ান জন্মসনদে নাম—বায়রন হাভিয়ের কাস্তিয়ো সেগুরা। ইকুয়েডরিয়ান জন্মসনদে অবশ্য অন্য নাম—বায়রন ডেভিড কাস্তিয়ো সেগুরা।
* ফুটবল ক্যারিয়ার গড়তে কলম্বিয়ার টুমাকো ছেড়ে ইকুয়েডরের সান লরেঞ্জোয় যাওয়ার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে অনেক কথা বলেছেন কাস্তিয়ো।
* ইকুয়েডরে যে ব্যবসায়ী তাঁকে নতুন নাম দিয়েছিলেন, তাঁকে চেনার কথা সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন কাস্তিয়ো।
মেইল অনলাইন জানিয়েছে, কাস্তিয়োর সবকিছু স্বীকার করার অডিও ফাইল আছে তাদের কাছে। তিনি কলম্বিয়ার টুমাকো হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং কলম্বিয়ার নাগরিক। কিন্তু এরপরও ২০১৯ সালে ইকুয়েডর ফুটবল ফেডারেশন (এফইএফ) তাঁকে ইকুয়েডরিয়ান নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে।
কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে শেষ মুহূর্তে ইকুয়েডরকে নিষিদ্ধ করা হলে, তা ফিফার ভাবমূর্তির জন্যই খারাপ হবে। কারণ, চিলির অভিযোগ গত জুনে নাকচ করে দিয়ে কাস্তিয়োকে ইকুয়েডরের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছিল ফিফা।
কলম্বিয়ান জন্মসনদে কাস্তিয়োর জন্মসাল ২৫ জুলাই, ১৯৯৫। কিন্তু ইকুয়েডরিয়ান জন্মসনদে তাঁর জন্মসাল ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। তাঁর জাতীয়তা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন ওঠে ২০১৫ সালে, যখন দলবদলের সময় তাঁর কাগজপত্রে ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনাটি ইকুয়েডরের ঘরোয়া ফুটবলে। জাল কাগজ ব্যবহার করে কাস্তিয়োকে খেলানোয় তখন তাঁর ক্লাব নর্তামেরিকাকে নিষিদ্ধ করে এফইএফ এবং একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিশনের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাস্তিয়ো জানান, তাঁর জাল কাগজপত্র ২০১৮ সালে ইকুয়েডরেই বানানো হয়েছে। সাক্ষাৎকারে তদন্তকারী প্রশ্নকর্তা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কোন বছর জন্মেছ?’ কাস্তিয়ো জবাব দেন, ‘১৯৯৫ সালে।’ পাল্টা প্রশ্ন আসে, ‘পরিচয়পত্রে কোন সাল লেখা?’ কাস্তিয়ো উত্তর দেন, ‘১৯৯৮।’ প্রশ্নকর্তা আবারও জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার আসল নাম কি?’ কাস্তিয়ো জবাব দেন, ‘বায়রন হাভিয়ের কাস্তিয়ো সেগুরা।’