ডিএসইতে অতিরিক্ত জনবল, ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিএসইর পর্ষদ

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রয়োজনের তুলনায় ৭০-৮০ জন বেশি কর্মী রয়েছে– এমন তথ্য তুলে ধরে ডিএসইর ম্যানেজমেন্টের (ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) কাছে অতিরিক্ত জনবলের ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ।

রোববার (১২ জুলাই) অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য ম্যানেজমেন্টকে ৩ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে। পর্ষদের একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মানবসম্পদ পর্যালোচনা করার অংশ হিসেবে গত মাসে স্বতন্ত্র পরিচালক সালমা নাসরিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ডিএসই। কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়- স্বতন্ত্র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান, মুনতাকিম আশরাফ, অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ ও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ছানাউল হককে। এ কমিটিকে কর্মীদের কাজের পরিমাণ ও দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে বিভাগভিত্তিক কী পরিমাণ মানবসম্পদ প্রয়োজন এবং কী পরিমাণ অতিরিক্ত বা ঘাটতি আছে তাও মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।

তার ভিত্তিতেই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে ডিএসইতে অতিরিক্ত জনবল থাকার তথ্য উঠে এসেছে, যা ডিএসইর পর্ষদ সভায় তুলে ধরা হয়। অতিরিক্ত এসব জনবল না থাকলে ডিএসইর কাজে কোনো সমস্যা হবে না বলেও পর্ষদ সভায় আলোচনা হয়।

ডিএসই সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্টক এক্সচেঞ্জটিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারির সংখ্যা ৩৬০ জন। তবে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) পদে বর্তমানে কেউ নেই। এই কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পেছনে প্রতিমাসে ডিএসইকে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ৩৮ কোটি টাকা।

এই অর্থের ১১ শতাংশই নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ৬ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও), প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) ও দুই মহাব্যবস্থাপক (জিএম)। এদের মধ্যে সিএফও এবং সিটিও পদ দুটিতে দায়িত্ব পালনকারীরা প্রথমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ডিএসইতে ঢোকেন। তবে পরবর্তীতে তারা তাদের পদ স্থায়ী করে নেন। পদ স্থায়ী করা হলেও তাদের বেতন কাঠামো নতুন করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়নি। উল্টো চুক্তিভিত্তিক উচ্চ বেতনের সঙ্গে তারা নিয়মিত কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা নেয়া শুরু করেছেন।

ডিএসইর এমডির পেছনে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকা মূল বেতনে নিয়োগ পাওয়া সিএফও এখন মোট বেতন নিচ্ছেন ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে গ্র্যাচুইটি, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, কার রক্ষাবেক্ষণ, ড্রাইভার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা প্রিমিয়াম, মোবাইল বিল মিলিয়ে প্রতি মাসে আরও প্রায় ২ লাখ টাকা পান তিনি। সব মিলিয়ে সিএফও’র পিছনে প্রতি মাসে ডিএসইর ব্যয় হচ্ছে ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

একই অবস্থা সিওও এবং সিটিও পদ দুটির ক্ষেত্রেও। ২ লাখ টাকা মূল বেতনে ডিএসইতে যোগদান করা সিটিও বর্তমানে মোট বেতন পান ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আর ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা মূল বেতনে যোগ দেয়া সিওও মোট বেতন পান ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে গ্র্যাচুইটি, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, কার রক্ষাবেক্ষণ, ড্রাইভার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা প্রিমিয়াম, মোবাইল বিল মিলিয়ে প্রতি মাসে তারা আরও প্রায় ২ লাখ টাকা পান। ফলে এই দুই কর্মকর্তার পেছনেও প্রতি মাসে ডিএসইর ৭ লাখ টাকার ওপরে খরচ করতে হয়।

ডিএসইতে জিএম পদে রয়েছেন দুজন। তাদের মধ্যে একজন ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা মূল বেতনসহ মোট পান ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আর একজনের মূল বেতন ১ লাখ টাকা। তিনি মাসে মোট বেতন পান ২ লাখ টাকা। এর বাইরে গ্র্যাচুইটি, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, কার রক্ষাবেক্ষণ, ড্রাইভার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা প্রিমিয়াম, মোবাইল বিল সুবিধাও আছে।

শীর্ষ পদের কর্মকর্তাদের পেছনে এমন মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হলেও ডিএসইর ব্যবসায় কোনো উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো আয় কমছে। স্টক এক্সচেঞ্জের আয়ের প্রধান উৎস লেনদেন হলেও সুদজনিত আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলছে ডিএসই। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিএসইর মোট আয় হয়েছে ২১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালন বা ব্যবসা থেকে আয় হয়েছে ১০৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর এফডিআর ও বন্ড থেকে সুদজনিত আয় হয়েছে ৯৩ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং সিডিবিএল থেকে ২৫ শতাংশ হারে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা লভ্যাংশ আয় হয়েছে। এছাড়া নানাবিধ আয় আছে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ডিএসইর এফডিআর রয়েছে ৬৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া বন্ডে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছে ৯৪ কোটি টাকা, সিডিবিএলে বিনিয়োগ ৮১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও বন্ডে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ ৮ কোটি টাকা। এছাড়া ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্টের জন্য নবনিবন্ধিত সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিসিবিএল) ৪৫ শতাংশ মালিকানায় ১৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। তবে ২০১৩ সালে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয় ডিএসই। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জটিকে লভ্যাংশ বিতরণ করতে হচ্ছে। তবে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সঙ্গতি না থাকায় নামমাত্র লভ্যাংশ পাচ্ছেন শেয়ারহোল্ডারা। প্রথম তিন বছর রিজার্ভ ভেঙে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দেয় ডিএসই। তবে শেষ দুই বছরে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যবসায় আরও খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ। কারণ এই অর্থবছরের পুরোটা সময়ই লেনদেনে ছিল মন্দা। এ পরিস্থিতিতে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ ছিল। ফলে এ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডররা কোনো লভ্যাংশ পাবেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে খরচ কমানোর তোড়জোড় শুরু করেছে ডিএসই।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত