হুন্ডি রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৪ লাখ এজেন্টের তথ্য বিএফআইইউতে

হুন্ডি রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৪ লাখ এজেন্টের তথ্য বিএফআইইউতে
বাংলাদেশে ডলারের দর বৃদ্ধির বিভিন্ন কারনের মধ্যে ডিজিটাল হুন্ডি, অৈবধ গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোট্রেডিং এবং অনলাইন ফরেক্স টেডিংকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে ডিজিটাল হুন্ডির লেনদেন চিহ্নিত করার জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ,রকেট এবং উপায়ের প্রায় ৪ লক্ষ এজেন্টের তথ্য বিএফআইইউর কাছে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে ডলার নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে আতঙ্কিত হয়ে দেশের অর্থনীতি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কখনো কখনো শ্রীলঙ্কার মত করুন পরিনতির দিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ধাবিত হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। ডলার নিয়ে কারসাজির রোধে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ডলারের কারসাজি চক্র চিহ্নিত করতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ডলার মার্কেটে অস্থিরতার জন্য ডিজিটাল হুন্ডি দায়ি বলে মনে করে বিএফআইইউ। সম্প্রতি এবিষয়ে চিঠির মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে অবহিত করেছে  বিএফআইইউ। একই সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

চিঠি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় রিজার্ভ কমছে। ফলে ডলারের ধারাবাহিক চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে টাকার মান কমছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর নিকট ডলার বিক্রি করেছে। এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপ নিলেও ডলারের দর ধারাবাহিক বৃদ্ধি পায়।

সূত্র মতে, ডিজিটাল হুন্ডি, অৈবধ গেমিং, বেটিং ক্রিপ্টোট্রেডিং এবং অনলাইন ফরেক্স টেডিং রোধে ইতিমধ্যে বিএফআইইউ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য দেশের আউটলেটের ছবি সম্বলিত নমুনা তৈরি করে এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বিএফআইইউ। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

সূত্র জানায়, রেমিট্যান্সের অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে না এনে ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে আনলে তা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে জমা হচ্ছে না। ফলে দেশ ফরেক্স রিজার্ভ হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে কার্ব মার্কেট থেকে বিনিয়োগ, হুন্ডি, অৈবধ গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোট্রেডিং এবং অনলাইন ফরেক্স টেডিংয়ে অন্যান্য অপরাধমূলক তৎপরতার মাধ্যমে ডলার ক্রয় করে মজুদ রাখার জন্য ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের পরিমাণ পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছে। অথচ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বিগত বছরে সর্বমোট ৬ লাখ ৩০ হাজার প্রবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শুধুমাত্র বিগত ৬ মাসেই ৬ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি না হয়ে কমে যাওয়া আশঙ্কাজনক।

অপরদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিশ্বজুড়ে পণ্যের চাহিদা বাড়ায় মূল্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যয় বৃদ্ধি পায়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী হয়।

বিএফআইইউ জানায়, বাংলাদেশে ডিজিটাল হুন্ডি মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর অপব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়। ফলে দেশ প্রাপ্য রেমিট্যান্স হতে বঞ্চিত হয়। ডিজিটাল হুন্ডির সাধারণ নির্দেশকগুলোর মধ্যে রয়েছে ৯০ শতাংশ বা তার অধিক ক্যাশ ইন (এজেন্ট হতে গ্রাহক) লেনদেন, এক মিনিটে ৪টি বা তার অধিক ক্যাশ ইন সংঘটিত হওয়া এবং গভীর রাতে ক্যাশ ইন ইত্যাদি। এসব লেনদেনের অর্থ এজেন্ট ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে উত্তোলন করে উক্ত অর্থ দ্বারা কার্ব মার্কেট হতে ডলার ক্রয় করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে পরিচালিত অধিকাংশ অৈবধ গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোট্রেডিং এবং অনলাইন ফরেক্স টেডিং সাইটগুলো ভারত ও চীন থেকে পরিচালিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায় এবং কার্ব মার্কেট থেকে ক্রয় করা ডলার এসব সাইটগুলোর পরিচালনাকারীদের কাছে বিভিন্ন উপায়ে পাচার হয়ে যায়।

ফলে অতিমাত্রায় সন্দেহজনক এবং ডিজিটাল হুন্ডি, অৈবধ গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোট্রেডিং এবং অনলাইন ফরেক্স টেডিং ব্যবহৃত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এমন ৩৩০ টি হিসাব এবং এফএফএসের বন্ধ করা ৫ হাজার ৮৯ টি হিসাব অনুসন্ধান করে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সিআইডি এবং বাংলাদেশ পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো