বিংশ শতাব্দীতে এসে সামাজিক যোগাযোগে একটি মোড়ল রাষ্ট্রকে এভাবে কাবু করে ফেলবে তা কি কখনও ভাবা যায়। এক লক্ষের অধিক মানুষ মারা যাওয়ার পর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান নাগরিক পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার পর জনগণ একযোগে যে প্রতিবাদ, ভাংচু ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাতে বেশী ক্ষতিসাধিত হয়েছে। করোনা ভাইরাসের মত ফেইসবুক সামান্য একটি এ্যাপস ভাইরাস প্রতাপশালী হোয়াইট হাউসকে জিম্মি করে ফেলেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে হোয়াইট হাউসের চতুর্দিকে কয়েক প্লাটুন ন্যাশনাল গার্ড (আর্মি) মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউব এখন এত শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের টনক নডিয়ে দিয়েছে। আসলে সামাজিক নেটওয়ার্ক হ'ল ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা বা এমনকি সমগ্র সমাজের মধ্যে সামাজিক অধ্যয়ন এর জন্য সামাজিক বিজ্ঞানে দরকারী একটি তাত্ত্বিক গঠন। এই শব্দটি এই জাতীয় মিথস্ক্রিয়া দ্বারা নির্ধারিত একটি সামাজিক কাঠামো বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। যা যুক্তরাষ্ট্র জর্জ ফ্লুইড নিহত হওয়ায় তা প্রমানিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের “ফেইসবুক” একটি সামান্য এ্যাপসের বন্ধনের মাধ্যমে কোনো প্রদত্ত সামাজিক ইউনিট এভাবে সংযুক্ত হয়ে পুরো মহাদেশের সব মানুষকে একত্রিত করে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাবে। তা বিংশ শতাব্দীতে করোনা ভাইরাসের মত একটি আশ্চর্য বিষয়।
যা বলতে চেয়েছি , গত ২৫ মে মৃত্যুর আগে জর্জ ফ্লয়েড বলেছিলেন, ‘আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না। আমার কষ্ট হচ্ছে। ' কিন্তু তাতে পুলিশ অফিসাররা কর্নপাত করেনি। তারা উল্টা তাকে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরে হাতকড়া পরায়। ফ্লয়েড তখন মিনতি করে বার বার বলে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে সত্যি তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জর্জ। এ ঘটনাটা একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা দশ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। ফলে মানুষ দ্রুত জেনে যায়। এ খবর সারা দেশে ছড়িয়ে যায় যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কতৃক হাতকড়া পরা অবস্থায় জর্জ ফ্লয়েড নামের কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। শুরু হয় বিক্ষোভ।
এখন বিশ্বের বড় বড় মিডিয়াগুলো দ্রুত সংবাদ সংগ্রহে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সোর্স হিসেবে কাজ লাগাচ্ছে। সিএনএন/ বিবিসি/ আল জাজিরা/ ফক্স নিউজসহ বেশ কিছু নিউজ ফেইসবুক ইনস্ট্রাগ্রাম ও টুইটারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ মর্মে তাদের কাছে স্পর্শকাতর নিউজ সামাজিক যোগাযোগও যে কেউ ছাড়লে তা দ্রুত ঐ সব এজেন্সিতে সরাসরি চলে যাবে। যে ভাষায় তা আপলোড করা হোক না কেন? তা ইংরেজীতে তা নিউজ এজ্ন্সিগুলোতে জানান দিবে। তাছাড়াও বেশী বেশী যে কোন সংবাদ সংস্কৃতি দূর্ঘটনা খুন নিহত যুদ্ধ বা যে কোন রাষ্ট্রের সেনসেটিভ সংবাদ যা সর্বোচ্চ ভাইরাল হওয়া নিউজ সেকেন্ডের মধ্যে ঐ সব এজেন্সীর মধ্যে অটো আপলোড হয়ে যাবে।
বলতে গেলে সারা বিশ্ব এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নূয়ে পড়েছে । অবস্হা দৃষ্টি দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে মিডিয়ার চেয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তড়িৎ অনেক সংবাদ প্রকাশ করছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ থেকে সংবাদ তৎক্ষনাত পাওয়ার পর পরে টিভি / মিডিয়া/ অনলাইন / প্রিন্ট মিডিয়ায় চোখ বুলাই । এ বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মিডিয়া কতটুক দীর্ঘজীবি হবে বা মিডিয়ার আদল কি ভাবে পরিবর্তন হয়ে নতুনত্ব আসবে , বা মিডিয়া কি ভাবে কি হবে তা এখন সময়ের ব্যাপার। দেখার বিষয় ও গবেষনার করা প্রয়োজন।
আমেরিকার এ ঘটনায় প্রমান করে সামাজিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্র যতই আইন কানুন বিধি নিষেধ করা হোক না কেন? এ মাধ্যমকে রাষ্ট্র কতটুকু দমিয়ে রাখতে পারবে? তা চিন্তার বিষয়।
[এ লেখা যখন লিখছি তখন লকডাউন এর সাথে কার্ফু চলছে বাফেলো শহরে]
সাইয়িদ মাহমুদ তসলিম
প্রবাসী সাংবাদিক, বাফেলো ওয়েস্ট নিউ ইয়র্ক