মত দ্বিমত
শেয়ার বিক্রি করে অনেকে ডলারের বাজারে জুয়া খেলায় নেমেছে

দেশে কি আসলে ডলার ক্রাইসিস চলছে? বা যতটা সমস্যা পত্র-পত্রিকায় দেখছি আদৌ কি তা বাস্তব? এই ক্রাইসিসটা কি সত্যিকারের সংকট? নাকি মানব সৃষ্ট সংকট?
গতকালের বিভিন্ন পত্রিকা নিউজ করেছে খোলা বাজারে ডলার ১১৯/১২০/১২১ টাকা। এটা একটা সাধারণ সংবাদ; যা আমি-আপনি খালি চোখে দেখছি তাই পত্রিকা সমূহ লিখছে? এসব সংবাদে ঘটনা আছে কিন্তু অনুসন্ধানী তত্ত্ব বা তথ্য নেই। এই সব সাধারণ সংবাদ কিন্তু বাজারকে আরও উস্কে দেয়। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি কিছু ব্যাংক, কিছু মানি এক্সচেন্জ এবং কিছু ব্যক্তি বিশেষ ডলার কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দাম বাড়াচ্ছে।
অনেকে শেয়ার বিক্রি করে ডলার বাজারের জুয়ায় নেমে গেছে। এভাবে সংবাদ পরিবেশন করলে লাভের আশায় আরও মানুষ এ বাজারে আসবে, তারপর কর্পোরেটরা বেশী দামে ডলার বিক্রি করে দিয়ে সরে পড়বে আর ধরা খাবে সাধারণ লোভী বিনিয়োগকারীরা।
এইরকম সংবাদগুলির হেডলাইনসহ প্রতিবেদনের তথ্য গুলি আরও সমৃদ্ধ হওয়া উচিত, হওয়া উচিত অনুসন্ধানী। শুধু মাত্র – ‘ডলারের দাম খোলা বাজারে ১২০ টাকা’ লিখলেই সংবাদ হয় না। লেখা উচিত কেন এই দাম, কি কারনে এ দাম বাড়ছে, কেউ এতে জড়িত থাকলে তারা কিভাবে জড়িত ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম হেড লাইন দেওয়া উচিত যাতে মানুষ তথ্যও পাবে আবার সতর্কও হবে। যেমন – ‘কৃত্রিম সংকটে খোলা ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়’। সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের রাষ্ট্র ও জনগনের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। একই বিষয় লেখার ধাঁচে পজিটিভ বা নেগেটিভ করা যায়। বিষয়টা হলো তারা কিভাবে সমস্যাটি সমাজকে দেখাতে চায়।
আমি মনে করি, ডলারের সংকট কিছুটা হয়েছিলো। সেটাকে পুঁজি করে একটি চক্র নেমে গেছে ডলার জুয়ায়। এর নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে যুদ্ধ, শ্রীলংকার অর্থনীতি এবং সমসাময়িক ভূরাজনীতি। এর মধ্যে আমাদের পত্রিকা গুলি মূল সমস্যা সামনে না এনে প্রতিদিন শেয়ার দরের তথ্যের মতো ডলারের দাম বাড়ছে- এরকম সংবাদ চলমান রাখায় চক্রটি সাধারণ পাবলিকদের প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হয়েছে ডলারের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একে একে ঢুকে পড়ছে এই বাজারে। একমসময় মূল চক্র ও প্রতিষ্ঠান গুলি বেশী দামে তাদের হাতে রাখা ডলার বিক্রি করে সড়ে পড়বে আর শেয়ার বাজার ধসের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত পড়বে। এখন দেখার বিষয়, ডলারের দামে হঠাৎ পতন হলে নব্য ডলার জুয়াড়িরা রাস্তায় মিছিল করতে নামে কিনা?
লেখক:
সাখাওয়াত হোসেন মামুন
ভাইস চেয়ারম্যান, ভাইয়া গ্রুপ
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক: আন্তরিক সেবার ৪০ বছর

আজ ৩০ মার্চ। ১৯৮৩ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত শরীআহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ৪০ বছর অতিক্রম করছে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যাংক । সুদের অভিশাপ থেকে মুক্তি, আর্থিক বন্টনমূলক সুবিচার ও সামাজিক কল্যাণমূখী অর্থনীতি গড়া ছিল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য। দেশীয় উদ্যোক্তা ও বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংক ইসলামী শরীআহর ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক একের পর এক নতুন সাফল্য নিয়ে আমানত, বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, শিল্পায়ন, এসএমই বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য সাফল্যের মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার ইসলামী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অন্যতম বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান।
দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও বিনিয়োগের প্রায় ১০ শতাংশ, বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় অংশ এককভাবে এ ব্যাংক পরিচালনা করছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রায় ২২ শতাংশ এ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসে। এ ব্যাংকের হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, গড়ে উঠেছে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। দেশের ৬ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে, কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষের। বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম দুই স্তম্ভ তৈরি পোশাক শিল্প ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ইসলামী ব্যাংকের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে।
বিগত ৪০ বছরে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণের জন্য ইসলামী ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও সিঙ্গাপুরে ৩১ জন প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করছে। বিশ্বের ৫৯৪ টি ব্যাংকের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ১৫৫ প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে।
প্রবাসীদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আগে টাকা পাঠানোর সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত উপায় না পেয়ে প্রবাসীগণ অবৈধ উপায় গ্রহণ করতো। ইসলামী ব্যাংক নিয়মিত বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করে। যার সুফল ভোগ করছে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে আসছে নিরাপদে। বিনিয়োগ হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতে।
ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনী-পেশা নির্বিশেষে সব মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অনন্য প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষে। গ্রাহকদের অবিচল আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার ফলেই ইসলামী ব্যাংক আজকের এই অবস্থানে।
ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে অধিক সংখ্যক মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োয় কার্যক্রমকে এ ব্যাংক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। মানুষের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন পণ্যে ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ প্রদান করে না। বিলাসদ্রব্যের চেয়ে এ ব্যাংক মৌলিক প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনিয়োগ পরিচালনা করে। সর্বসাধারণের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করেই ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সালে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় গঠন, বিভিন্ন আয়-উৎসারী কর্মকান্ডে বিনিয়োগ কার্যক্রম রয়েছে। শহর এলাকার বস্তিবাসীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০১২ সাল থেকে “নগর দরিদ্র উন্নয়ন প্রকল্প” কাজ করছে। ৩১ হাজার গ্রামে বিস্তৃত এ প্রকল্পের সদস্য ১৬ লক্ষ। যার ৯৪ শতাংশই নারী।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেশের মোট স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের ২১% এখন ইসলামী ব্যাংকের। হজ সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, ক্যাশ ওয়াক্ফ অ্যাকাউন্ট, কারখানা শ্রমিক হিসাবসহ নানা সঞ্চয় হিসাবের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনেছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে ৩৯৪টি শাখা, ২২৯টি উপশাখা, ২৭০০টি এজেন্ট আউটলেট, ২৫০০টি এটিএম/সিআরএম বুথের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে।
ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম নিজস্ব সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত। ব্যাংকের কোর ই-আইবিএস সফটওয়্যার এই ব্যাংকের তরুণ প্রকৌশলীদের দ্বারা নির্মিত। ইসলামী ব্যাংক তার গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বিকল্প ব্যাংকিং চ্যানেল, ই-কমার্স ইত্যাদি প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বাড়াচ্ছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকগণ সকল লেনদেন করতে পারেন সহজেই।
ইসলামী ব্যাংকিং মূলত একটি সামাজিক দায়বদ্ধ উদ্যোগ। গরিব, দুস্থ, অসহায় মানুষের কল্যাণে ১৯৮৪ সালে ‘‘সাদাকাহ ফান্ড’’ গঠিত হয়। পরে ব্যাপকভিত্তিক কাজের জন্য ‘‘ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন’’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার অধীনে ১৯ টি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং ইনস্টিটিউট সহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন অগনিত মানুষ। সকল মানুষের কাছেই পৌছে যাচ্ছে ইসলাম ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা।
ইসলামী ব্যাংকের সফলতার অন্যতম নিয়ামক হলো এ ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা। ইসলামী ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনা পরিষদ ও নিবেদিত জনশক্তির পাশাপাশি গ্রাহকদের অকুন্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন, সকল রেগুলেটরি অথরিটির পরামর্শ ও সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছে।
এ ব্যাংকের যাত্রার শুরুতে অনেক অনিশ্চয়তা, অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালে একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ইসলামী ব্যাংক তাত্ত্বিক যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে, এখন পরিচালনগত যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।’ বিগত ৪০ বছরের পথচলায় নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ ব্যাংক সামনে এগিয়ে চলেছে। ইসলামী ব্যাংকিং এখন সফল বাস্তবতা। ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা এ ব্যাংককে নিজেদের সন্তানের মতই ভালবাসেন। তারা ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। অনেক গ্রাহকের কাছে ইসলামী ব্যাংকিং অক্সিজেনের প্রবাহের মতই অনুভূত হয়।
ইসলামী ব্যাংকের অনুসরণে মোট ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরীআহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৪ টি ব্যাংক ২ হাজারের অধিক ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি ইসলামী ব্যাংকের সফলতারই অংশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে এখনো কিছু ভুল ধারণা ও বিরূপ প্রচার প্রচারণা রয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক নিয়ে যেসব বিরূপ প্রচারণা চোখে পড়েছে তার উত্তরে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় বলা হয়েছে ব্যাংকের সকল কার্যক্রম সঠিক নিয়মে চলছে।
ইসলামী ব্যাংকের আমানত-বিনিয়োগ-বৈদেশিক বাণিজ্য-রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স কার্যক্রম সহ সকল কার্যক্রমে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। সূর্যেরআলো, চাদের কিরণ, বাতাস ও পানি যেমন সকল মানুষের জন্য ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমূখী সেবাও ঠিক তেমনি সকল মানুষের জন্য। তাই ইসলামী ব্যাংক তার অনবদ্য সেবার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। সকল মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণধর্মী কার্যক্রমের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরো মজবুত করতে ইসলামী ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রাকে বেগবান করার দায়িত্ব এখন সরকারসহ দেশের প্রতিটি নাগরিকের। ২ কোটি গ্রাহকের আস্থার এই ব্যাংক তার গতিতে এগিয়ে যাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
সুইডেনের ইনফ্লেশন ১২ শতাংশ, গোল ২ শতাংশ

সুইডেনের বাজারে গেলে বোঝার উপায় নেই জিনিসপত্রের অভাব। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, সবকিছু সেখানে পাওয়ার কথা। শীতে যদি আম, কাঁঠাল, জাম খেতে ইচ্ছে হয় সারা দেশ খুঁজলেও নিশ্চয়ই পাবেন না। তবে সুইডেনে এমন কিছু নেই যে পাওয়া যায় না।
যদি প্রশ্ন করি বলুন তো হিন্দু ধর্মে কথিত আছে বারো মাসে তেরো পুজা কোন মাসে নেই পুজা? সুইডেনের ক্ষেত্রে বারো মাসেই সব কিছু পাওয়া যায়। ছোট্ট একটি দেশ যার লোক সংখ্যা মাত্র এক কোটি এবং তার মধ্যে ২০ শতাংশের বেশির ভাগই বিদেশী এবং বিশ্বের সব দেশের মানুষের বাস এখানে। বুজতেই পারছেন কেন সারা জাহানে যা আছে তার সব কিছুই এখানে পাওয়া যায়।
আজ একটি বেগুন কিনলাম, বেগুনটি এসেছে জাপান থেকে। বেগুনটির ওজন ২০০ গ্রাম, দাম ৩০ সুইডিশ ক্রোনার ( ১ ক্রোনা=১০টাকা )। নরমালি বেগুনটির দাম এসময় বড়জোর ২০ ক্রোনার, ইনফ্লেশনের কারণে দাম এখন চড়া। আমি নিজেই সামারে বেগুন উৎপাদন করি, তখন এই ধরনের বেগুনের দাম হবে ১০ ক্রোনার। এখন দেশটি বরফে ঢাকা অতএব কিছুই উৎপাদন করা সম্ভব নয় তারপরও সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে তবে দাম চড়া।
ছোট বেলায় বাংলাদেশে থাকতে কখনও ভাবিনি শীতে কাঁঠাল খেতে হবে, কারণ শীতে যেসব খাবার উৎপাদন হয়েছে সেগুলো খেয়েছি কিন্তু সুইডেনে বিষয়টি অন্যরকম যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করে সেটা তখনই খেতে হবে, এভাবেই দেশটি গড়ে উঠেছে। বিশ্ব ইনফ্লেশনের কারণে সঠিক সময় সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে না পাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে দোকানে লেখা হচ্ছে ১টি পাপড়িকা, ৩টি টমেটো, ২টি শসার বেশি যেন আমরা না কিনি, তাহলে অন্যেরা হয়ত কিছুই পাবে না।
এদিকে জিনিসপত্রের দাম আগুন, ফলে দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও কেউ কিনছে না। কিছুদিন পরে ফ্রেস খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট খাবার যাছাই বাছাই করতে যে খরচ সেটা তোলা সম্ভব নয় বিধায় প্রচুর খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। খাবারের মেয়াদ গায়ে লেখা রয়েছে, মেয়াদ শেষ হলে সেটা বিক্রি করা নিষেধ। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সবাই প্রতিনিয়ত বলছে কেনাকাটা যেন সবাই কম করে, অপচয় যেন না হয়, বেশি অপচয় হলে ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। জনগণ যাতে বিলাসবহুল না হয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ইচ্ছে খুশি মত অর্থলোন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুদের হার প্রতি মাসে বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, বাড়ছে না ইনকাম, বাড়ছে না বেতন। বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থা।
আমার মনে হয় না বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভিন্ন! এত কিছুর পরও চলছে বিশ্বযুদ্ধ, চলছে ব্যাংক ডাকাতি, চলছে অরাজকতা, চলছে বর্বরতা। মনে হচ্ছে পৃথিবী বদলে গেছে কিন্তু না বদলেছি আমরা। করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকে যখন জীবন নাশ করতে শুরু করে তখন আমরা শরীরে এন্টি ভাইরাস ঢুকিয়ে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনি, করোনা ভাইরাস এবং ভ্যাকসিন মিলে আমাদের শরীরে যে সাইড ইফেক্ট দেখা দিয়েছি সেটা হলো মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, এটাকে এখন কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব সেটাই এখন ভাবনা!
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
ব্যাংকের নাম: লিমিটেড থেকে পিএলসি

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম থাকে। গ্রাহকরা নির্দিষ্ট নামেই প্রতিষ্ঠানকে চিনতে পারেন। সুন্দর নাম, সুন্দর ব্র্যান্ডিং এবং উত্তম সেবা গ্রাহকের আস্থা ও ভালবাসা ধরে রাখার অন্যতম উপকরণ। প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে নাম ও ব্র্যান্ডিং সংশোধন এবং পরিবর্তন পরিমার্জন করতে পারে। আইনগত এবং অন্যান্য কারণে ব্যাংকসহ যেকোন প্রতিষ্ঠানেরই এসব পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।
উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীকে সংক্ষেপে পিএলসি এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীকে এলটিডি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এই দুই ধরণের প্রতিষ্ঠানের মৌলিক পার্থক্য হলো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার সহজে হস্তান্তরযোগ্য নয়, ব্যক্তিগতভাবে তা ক্রয় বিক্রয় হতে পারে সাধারণ মানুষ এর শেয়ার ধারণ করতে পারেনা। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার সহজে ক্রয় বিক্রয় করা যায় এবং সাধারণ মানুষ এর শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে পারে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের নামের শেষে লিমিটেড শব্দটি ব্যবহার করে। লিমিটেডকে অনেক সময় এলটিডি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ এটি প্রাইভেট কোম্পানী। বিশেষজ্ঞগণ তাই মনে করেন আমাদের দেশের ব্যাংকের নামের সাথে লিমিটেড শব্দ ব্যবহার বহুল প্রচলিত একটি ভুল।
এ ধরণের ভ্রান্তি দূর করতে ২০২০ সালে কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শনাক্ত করতে একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে যে ‘পাবলিক সীমিত দায় কোম্পানি’ শনাক্ত করতে তাদের নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ বা পিএলসি লিখতে হবে।
বাংলাদেশে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ার স্টক একচেঞ্জে কেনাবেচা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে এসব ব্যাংক কোম্পানিকে তাদের নাম পরিবর্তন করে নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বলা হয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোর নামের শেষে লিমিটেডের পরিবর্তে এখন থেকে পিএলসি লিখতে হবে।
পরিপত্রে জানানো হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংক-কোম্পানির নাম ও সংঘস্মারক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে আলাদা করে কোনো আবেদন করতে হবে না। তবে নাম পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে এবং পরিবর্তিত নামের গেজেট প্রকাশের জন্য ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে আবেদন দাখিল করতে হবে।
নামের সাথে পিএলসি যোগ করলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে হবে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ইত্যাদি। ইতোমধ্যেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নামের সাথে পিএলসি যোগ করেছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোরও এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
ব্যাংক কোম্পানী আইন অনুসারে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। এ আইনের ধারা অনুসারে কোন ব্যাংক তার নামের পরিবর্তন আনতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সেটা করতে পারে। অতীতে আমাদের দেশের অনেকগুলো ব্যাংক তাদের নাম পরিবর্তন করেছে যেমন: আল-বারাকা থেকে ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে ওরিয়েন্টাল এবং পরে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয়েছে এবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে হয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের নাম হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। আরো অনেক ব্যাংক নাম পরিবর্তন করেছে। এসব ব্যাংক বিভিন্ন কারণে নাম পরিবর্তন করেছে। এবারে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে ‘লিমিটেড’ শব্দের পরিবর্তে ‘পিএলসি’ লিখতে হবে।
অনেক সময় কোম্পানী তার ব্র্যান্ড প্রোমোট করার জন্য নাম, লোগো এবং কোম্পানীর টোটাল ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে গ্রাহকদের রুচিরও পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে কোম্পানীর আধুনিকায়নে নেতিবাচক কিছু নেই। তবে গ্রাহকদের রুচি এবং তাদের চাহিদার বিষয় খেয়াল রেখে এসব পরিবর্তন পরিমার্জন করা কোম্পানীর জন্য কল্যাণকর। নামের পরিমার্জন বা ব্র্যান্ডিংয়ের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোম্পানীর সকল ক্ষেত্রে অভিন্নতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় হ য ব র ল অবস্থা হবে। সকল সাইনেজ ও প্রকাশনায় একই ধরনের ব্র্যান্ডিং থাকতে হবে। প্রতিটি পরিবর্তনের সাথে অর্থ ব্যয়ের বিষয় জড়িত রয়েছে। বারবার পরিবর্তন বড় কোম্পানীর জন্য ব্যয়বহুল। প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা বৃদ্ধির জন্য ব্যয় সংকোচনের বিষয়টিও খেয়াল রেখে টেকসই পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা জরুরি। ব্যাংকের নাম পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুরুতে ব্যাংকগুলোকে ইজিএম বা এজিএমের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের অবগত করা প্রয়োজন। নাম পরিবর্তনের সাথে সাথে বিলবোর্ড, চেক বই, জমা বই ও ওয়েবসাইটসহ সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করতে হবে, প্রতিস্থাপন করতে হবে পুরোনোকে। সবমিলিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ রয়েছে ছোট্ট এই পরিবর্তনের জন্য।
গ্রাহকদের মধ্যে যেন প্রতিষ্ঠানের কোন পরিবর্তনের প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রেখে আগে থেকেই বিষয়গুলো তাদের অবহিত করা যেতে পারে। গণমাধ্যমে সংবাদের পাশাপাশি সহজে চোখে পড়ার মতো বিজ্ঞাপন প্রচার ও মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করে গ্রাহকদের অবহিত করা যায়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব প্রচারণা চালালে তা বেশি সংখ্যক মানুষের দৃষ্টিগোচর হবে। ব্যাংকের নাম, লোগো ও ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন বা লিমিটেড থেকে পিএলসিতে রূপান্তরে গ্রাহকের কিছুই যায় আসে না। গ্রাহকের চাহিদা উত্তম ব্যাংকিং সেবা। তারা চান জমানো অর্থের নিরাপত্তা। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
রিয়াজ উদ্দিন: লেখক ও ব্যাংকার
ইমেইল : riyazenglish@gmail.com
অর্থসংবাদ/এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
এটিএম বুথ ব্যবস্থাপনাঃ ভাবতে হবে নতুন করে

আধুনিক আর্থিক সেবার অন্যতম একটি মাধ্যম এটিএম বুথ। ১৯৩৯ সালে সিটি ব্যাংক নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম মেকানিক্যাল ক্যাশ ডিসপেন্সার চালু করে। ১৯৩৭ সালে বারক্লেস ব্যাংক নর্থ লন্ডনের এনফিল্ড শহরে প্রথম ইলেক্ট্রনিক এটিএম চালু করে। বাংলাদেশের রাজধানীর বনানীতে ১৯৯৩ সালে প্রথম এটিএম বুথ চালু করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
শুরুর দিকে এটিএম বুথে শুধুমাত্র টাকা উত্তোলনের সুযোগ ছিল। বর্তমানে টাকা জমা করা, একাউন্ট ব্যালান্স দেখা, ফান্ড ট্রান্সফার, অ্যাপ ব্যবহার করে কার্ডবিহীন টাকা উত্তোলনসহ আধুনিক ও অবাক করা সব সেবা যুক্ত হয়েছে। এটিএম বুথ সেবা রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকেরই। গ্রাহকরা ২৪ ঘন্টা টাকা উত্তোলন করতে পারেন বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১২ হাজার এটিএম বুথ থেকে।
এনপিএসবির কল্যাণে এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে টাকা তুলতে পারছেন। কোন কোন ব্যাংকের বার্ষিক আয়ের বড় অংশই আসে এটিএম সেবা থেকে। আবার এটিএম কার্ডসেবাই কোনা কোন ব্যাংকের গ্রাহক আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এটিএম সেবা বিহীন ব্যাংকিং এখন কল্পনা করা যায় না।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই মহাসড়কে উঠেও অনেক ব্যাংকের এটিএম সেবায় রয়ে গেছে বেশ কিছু দুর্বলতা যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রহাকদের। আর সুনাম হারাচ্ছে ব্যাংকগুলো। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া দুএকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এটিএম বুথ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।টিউশনি করে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকা জমা করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া অর্ক (ছদ্ম নাম)। ঈদে মা-কে একটি ফ্রিজ উপহার দিয়ে চমকে দিতে চেয়েছিল। ঈদের আগে টাকা তুলতে যায় অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে। কার্ড প্রবেশ করিয়ে টাকার অংক কমান্ড দেয়ার পর এটিএম বুথে টাকা গণনা হয় এবং তার হিসাব ডেবিট হয়। কিন্তু এটিএম থেকে কোন টাকা বের হয় না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর টাকা না পেয়ে কল সেন্টারে ফোন করে অভিযোগ করলে এক মাসের মধ্যে সেটেল করার আশ্বাস দেয়া হয়। একমাস পওে ব্যাংক থেকে জানানো হয় সে এটিএম থেকে টাকা গ্রহণ করেছে। নিজের অবস্থানে অটল থেকে সে ভিডিও ফুটেজের জন্য আবেদন করে।
অপর ব্যাংক ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করতে অস্বীকার করায় অপারগতা প্রকাশ কওে ব্যাংক। হাল ছেড়ে না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করে সে। কিছুদিন পর তাকে ডাকা হয়। সেখানে উক্ত ব্যাংকের সরবরাহ করা তিনটি ছবি দেখানো হয়। তিনটি ছবির দুটিতে তার ছবি এবং অপরটিতে ট্রে থেকে টাকা বের হবার ছবি। কিন্ত কে টাকা গ্রহণ করছে এমন কোন ছবি ছিল না। তাই সে ভিডিও ফুটেজ দাবি করে। কিন্তু উক্ত ব্যাংক টেকনিক্যাল সমস্যার কথা বলে ভিডিও ফুটেজ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবুও গ্রাহকের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ছেলেটি আর্থিক সংকটের কারণে আর কোর্টে যাওয়ার সাহস করেনি। অগত্যা বিশ হাজার টাকার আশা ছেড়ে দেয় সে।
দ্বিতীয় ঘটনা এ বছরের মার্চে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের বিশেষ দল। তারা ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা লোড আনলোড করার দ্বায়িত্ব পালন করতো। উক্ত দলের সদস্যরা একটি ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর লোক। চক্রের সদস্যরা এটিএম বুথে টাকা লোড দেয়ার সময় টাকার গায়ে রাবার ব্যান্ড লাগিয়ে জ্যাম করে রাখত। গ্রাহক কমান্ড দেয়ার পর একাউন্ট ডেবিট হয়ে যেত ঠিকই। কিন্তু জ্যামার দেয়ার কারণে মেশিন থেকে টাকা বের হতে পারতো না। গ্রাহক অভিযোগ করলে ব্যাংক তাদের টাকা দিয়ে দিত।
চক্রের সদস্যরা তাদের আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতদের অ্যাকাউন্টে ঐ টাকাগুলো জমা করে দিত। এভাবে ছয় মাসে ব্যাংকের সাড়ে তিন কোটি টাকা লোপাট করে চক্রটি। পরে তারা সুযোগ বুঝে গা ঢাকা দেয়। ঐ কোম্পানীতে চাকরির আগেও উক্ত চক্রের সদস্যরা অন্য একটি কোম্পানীতে একই কাজ করত। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাদের চাকরি চলে যায়। অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে গ্রাহক হয়রানির খবর প্রায়ই শোনা যায়। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির শিখরে অবস্থান করেও ব্যাংকগুলোর ভিডিও ফুটেজ দিতে না পারা গ্রহণযোগ্য নয়। এটিএম বুথ চালু করার সাথে সাথে সকল লেনদেনের ফুটেজ সংরক্ষণ করা ব্যাংকের দ্বায়িত্ব। ব্যাংকের দুর্বলতায় গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে দায় কে নেবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার।
এটিএম বুথ ব্যবস্থাপনায় তৃতীয় পক্ষকে নিয়োজিত করলেও টাকা লোড আনলোডের সময় ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা এবং তাদের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা দরকার। তৃতীয় পক্ষের সাথে এ ধরণের চুক্তি করার আগে ব্যাংককে টাকার নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। কোম্পানীগুলোর সততা ও দক্ষতা যাচাই করা ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সম্প্রতি উত্তরায় একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে একজন গ্রাহককে ছুরিকাঘাত করে হত্যার দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ গ্রাহকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। এটিএম বুথে প্রহরী নিয়োজিত থাকলেও তারা গভীর রাতে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সক্ষম নয়। গ্রাহকদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে এটিএম বুথে টাকা উত্তোলন ও জমা দেয়ার সময়সীমা বেধে দেয়া এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের তদারকি আরো জোরদার করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। অনেক সময় এটিএম বুথে জাল টাকা ও ছেঁড়াফাটা অচল টাকা পাওয়ার খবর আসে। ছেঁড়া টাকা বের হলে গ্রাহকের করণীয় কি তা জানা না থাকায় অনেক গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
তাই এটিএম বুথে সমস্যা হলে করণীয় বিষয়ে স্পষ্ট করে পোষ্টারে লিখে ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথের দর্শনীয় স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখা যেতে পারে। ব্যাংকের পাশাপাশি গ্রাহকেরও নিজের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের স্থান ও সময় ব্যবস্থাপনায় সচেতন হওয়া জরুরী। এছাড়া ছেঁড়াফাটা ও জালনোট পেলে করনীয় কি তা জানাও গ্রাহকের কর্তব্য। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে দেয়।
প্রযুক্তিকে সঠিক ও সৎভাবে ব্যবহারের উপর নির্ভর করে তা গ্রাহকদের জন্য কতটা কল্যাণকর হবে। দক্ষ সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে বুথের পাহারা, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যাকআপ নিশ্চিত করা, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ, আন্তব্যাংক এটিএম ব্যবহারে দ্রুত গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তি, উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক ও উন্নত মানের এটিএম মেশিন ব্যবহার করা না হলে গ্রাহকদের হয়রানির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। গ্রাহক সেবার উন্নয়ন ও ব্যাংকগুলোর সুনাম ধরে রাখতে এটিএম বুথ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে এখনই।
রিয়াজ উদ্দিন: লেখক ও ব্যাংকার
ইমেইল : riyazenglish@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
সুইডেনের জাতীয় নির্বাচনে একজন বাংলাদেশি

আর মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকি তারপর সুইডেনের জাতীয় নির্বাচন। বিশাল একটা কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। মনে অতীতেও হয়নি, কারণ প্রতি চার বছর পর পর সুইডেনে জাতীয় নির্বাচন হয়, দিনটি ১১ ই সেপ্টেম্বর, জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যার যার ভোট যাকে খুশি তাকেই দেয়। মূলত ২৪ আগস্ট থেকে বিভিন্ন লাইব্রেরি কিংবা কাউন্সিলের নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বা যারা দেশের বাইরে থাকে তাদের জন্যও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সুইডেনের ভোট শুরু হবে ২৪ আগস্ট ও শেষ দিন হলো ১১ সেপ্টেম্বর।
‘সুইডেনে বাই ইলেকশন বলে কিছু নেই। কোনো এমপি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হলে তখন তাঁকে তাঁর এমপি আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। কারণ, সরকার কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করে না। ওই সময় মন্ত্রীর রাজনৈতিক দলের অন্য প্রার্থী, যাঁর নাম প্রার্থীর তালিকায় মন্ত্রীর নামের পরে ছিল, তিনি অটোমেটিক এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ঠিক একইভাবে কোনো এমপি ইন্তেকাল কিংবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হলে প্রার্থীর তালিকা অনুসারে যে প্রার্থীর নাম এ প্রার্থীর নিচে থাকবে, তিনি এমপি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অর্থাৎ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টি আসন লাভ করবে, সে আসনগুলো পুরো ম্যান্ডেট পর্যন্ত সেই দলেরই কাছে থাকে। অন্যদিকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কোনো এমপি যদি কোনো কারণে তাঁর দল ত্যাগ করেন কিংবা দল তাঁকে বহিষ্কার করে, তথাপি তিনি দলবিহীন এমপি হিসেবে পুরো সময় পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কারণ, তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি, দলের ভোটে নয়। এই সময় এই এমপি যখন পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন, তখন তাঁর নামের পাশে কোনো দলের নাম থাকবে না।’
সুইডেনে নর-নারীর সমান অধিকার সত্ত্বেও এই প্রথম এক নারী যিনি দেশ পরিচালনার দায়ীত্বে রয়েছেন এবং বেশ কিছু মহিলা বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন। আমি সুইডেনের নানা বিষয়ের উপর লিখি, কথা বলি। নির্বাচন সম্পর্কে অতীতে লিখেছি, এবারের লিখাটি কিছুটা ভিন্ন এই কারণে যে সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি বংশভুত মহিবুল ইজদানী খান ডাবলুকে ভেনস্টার পার্টির স্টকহোমের জাতীয় সংসদ প্রার্থীর তালিকায় নমিনেশন দিয়েছে। এটা তার জন্য একটি বিশাল ঘটনা যে তিনি প্রথম বাংলাদেশী যে সুইডিশ রাজনীতিতে জড়িত। যা অন্যান্য বাংলাদেশীদের মগজে কিছুটা নাড়া দিবে যেমন আমাকে দিয়েছে। আমি অতীতে বলেছি লেখাপড়া আর চাকরি করা ছাড়াও যে জীবনে আরো অনেক পথ রয়েছে ক্রিয়েট ভ্যালু ফর ম্যানকাইন্ড। আশাকরি, সেটা আমরা দেখতে পাব এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, তারপর একটি কথা মনে রাখতে হবে শুধু পাশ বা ফেলের দিকে নজর নয় বরং অংশ গ্রহন করা কিন্তু একটি বড় ব্যপার।
মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু সুইডেনের রাজনীতিতে ২০০২-২০০৬ মেন্ডেট পিরিয়ডে প্রথমবার ভেনস্টার পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে স্টকহোম সিটি কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে ২০০৬-২০১০ ও ২০১৪-২০১৮ দলের কাউন্টি কাউন্সিল (গ্রেটার স্টকহোম অ্যাসেম্বলি) নির্বাচনে জয়লাভ করে মোট আট বছর কাউন্টি কাউন্সিলরের (গ্রেটার স্টকহোম অ্যাসেম্বলি) দায়িত্বে ছিলেন। এই সময় কাউন্সিলের স্বাস্থ্য পরিচর্যা বোর্ড স্টকহোম কালচারাল অ্যান্ড এডুকেশন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দীর্ঘ সময় বিরোধী দলের হয়ে যে দায়ীত্বে কাজ করেছেন যদি সেটা মনপূত হয়ে থাকে তার এলাকার মানুষের জন্য, তথা বাংলাদেশীদের জন্য তবে জাতি তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে আমি মনে করি।
সুইডেনের নির্বাচন সাধারণত প্রপোর্শনাল (Proportional) ভোটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে কমপক্ষে মোট ভোটের ৪ শতাংশ ভোট পেতে হয়। সমানুপাতিক এ নির্বাচনে প্রতিটি এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে। যেসব প্রার্থীর নাম তালিকার একেবারে ওপরে থাকে, তাঁদের দলের মোট পাওয়া ভোটের পার্সেন্টেজ অনুযায়ী জয়লাভ করার সুযোগ থাকে। অর্থাৎ ভোটাররা ভোট দেয় দলকে কোনো প্রার্থীকে নয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে এ নিয়মের পরিবর্তন আনা হয়। আর তা হলো দল যেভাবেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করুক না কেন, ভোটাররা চাইলে নিজেদের পছন্দনীয় একমাত্র একজন প্রার্থীর নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে পারবেন। একে বলা হয় ব্যক্তিগত ভোট। অর্থাৎ একজন ভোটার প্রার্থী তালিকায় যার নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেবেন, তার নাম যেখানেই থাকুক না কেন, এ ভোটারের ভোটে তাকে এক নম্বর হিসেবে গণনা করা হবে। এভাবে একটি নির্বাচনী এলাকায় দলের কোনো প্রার্থী যদি মোট ভোটের ৪ শতাংশ ক্রস পান, তাহলে তিনি জয়লাভ করবেন।
এ নিয়মে ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ভেনস্টার পার্টি, গ্রিন পার্টি, ক্রিস্ট ডেমোক্রেট পার্টি, লিবারেল পার্টি ও সেন্টার পার্টি থেকে কিছুটা হলেও জয়লাভ করা সুযোগ রয়েছে। বাকি বড় তিনটি দল সোশ্যাল ডেমোক্রেট, মডারেট ও সুইডেন ডেমোক্র্যাটের ক্ষেত্রে মোট ভোটের ৪ শতাংশ ভোট একজন প্রার্থীর এককভাবে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এসব রাজনৈতিক দল থেকে ব্যক্তিগত ভোটে পার্লামেন্টে জয়লাভ করতে হলে কমপক্ষে সাত হাজারের কাছাকাছি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেই তুলনায় ছোট ছোট দল থেকে ব্যক্তিগত ক্রসের প্রয়োজন মাত্র চার হাজার। তা–ও নির্ভর করবে দলের মোট ভোটসংখ্যার ওপর। অনেক সময় চার হাজার কিংবা তারও কম ভোটে জয়লাভ করার সুযোগ রয়েছে। সুইডেনের বর্তমান পার্লামেন্টে কয়েকজন এমপি এই নিয়মে জয়লাভ করে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমান সুইডিশ পার্লামেন্টে সুইডেনের বাইরে থেকে আগত মোট ২৯ দেশ থেকে পার্লামেন্ট মেম্বার থাকলেও ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের কেউ এখন পর্যন্ত সুইডিশ পার্লামেন্ট মেম্বার হতে পারেননি।
আমি আশা বাজি মহিবুল ইজদানী খান সুইডিশ পার্লামেন্ট মেম্বার হয়ে সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভালো করতে সাহায্য করবেন। যেমন বাংলাদেশের অনেক দ্রব্য আছে, যা সুইডেনে চাহিদা আছে, ঠিক তেমনি সুইডেনে নির্মিত উচ্চমানের অনেক যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম আছে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব।
আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা অপপ্রচার ও বাংলাদেশি রাজনীতিকে সামনে এনে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করে যদি দলমত–নির্বিশেষে সবাই সমর্থন দেই, তাহলে ইনশাআল্লাহ মহিবুল ইজদানী খান জয়ী হবেন। স্টকহোম বসবাসরত বাংলাদেশি সুইডিশ নাগরিক তার জন্য একটি বড় শক্তি। একমাত্র বাংলাদেশি ভোটাররাই তাকে, তার এই অগ্রযাত্রাকে সফল করতে পারেন। আসুন আমরা সুইডেনে লিটিল বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com