করোনাকালের চিকিৎসক আব্দুর রব মাসুম

করোনাকালের চিকিৎসক আব্দুর রব মাসুম
বাসা পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্কের পাশে। মা, দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন তিনি। কিন্তু করোনার সংকট শুরু হলে তিনি পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দেন নগরীর হালিশহরে; নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে। এরপর করোনা রোগীর পাশে দাঁড়ান। সারাদেশের কোনো কোনো চিকিৎসক যখন প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভয়ে চেম্বার করা বন্ধ করে দিলেন; তখনই আক্রান্তদের সেবায় নিজেকে সমর্পণ করলেন তিনি। চোখের সামনেই মারা গেছেন ১৫ রোগী। তবুও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে তিনি একে একে সুস্থ করেছেন ১০০ জনকে। বুধবার রোগী সুস্থ করার অন্যরকম এই সেঞ্চুরি যিনি করেছেন; তিনি হলেন ডা. আবদুর রব মাসুম। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট তিনি। চট্টগ্রামে করোনার জন্য নির্ধারিত দুই সরকারি হাসপাতালের একটি এই হাসপাতাল।
চিকিৎসক রবের স্ত্রী ফিরোজা মেহেরও চিকিৎসক। ২৫তম বিসিএস পাস করে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেছিলেন তিনিও। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে পেশা ছেড়ে দেন। তবে পেশার প্রতি এখনও টান আছে তার। তাই করোনা রোগীর সেবা দিতে গিয়ে স্বামী দূরে থাকলেও তিনি সামলে নিচ্ছেন সংসার। ফিরোজা মেহের বলেন, একই শহরে থাকলেও যেন আমরা আছি অনেক দূরে। ছেলেরা চাইলেও জড়িয়ে ধরতে পারছে না বাবাকে। মাঝখানে দু'দিন এখানে এসেছিলেন। কিন্তু দূর থেকে দেখেই আবার ফিরে গেছেন হাসপাতালে।
স্ত্রী-সন্তানদের স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে ডা. রব এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন তিনি। তার অধীনে আছেন ১২৪ চিকিৎসক। তারা সাতটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছেন বহির্বিভাগ, আইসিইউ ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে। প্রতিটি গ্রুপ হাসপাতালে কাজ করেন ১০ দিন। এরপর প্রতিটি গ্রুপ থাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে। এটি শেষে ৬ দিন বাড়িতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন সব চিকিৎসক। এমন সুযোগ চাইলে নিতে পারতেন ডা. রবও। গত দুই মাসে একদিনের জন্যও হাসপাতাল ছাড়েননি তিনি। নেননি কোনো ছুটিও। প্রত্যেক করোনা রোগীর সঙ্গেই নিবিড়ভাবে সময় কাটিয়েছেন তিনি। তাই সরাসরি তার সংস্পর্শে আসা রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতকের ঘর। তার তত্ত্বাবধানে থেকে বুধবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০০ রোগী। এখন পর্যন্ত মোট ২১৪ রোগীকে সেবা দিয়েছে এই হাসপাতাল। এখনও আছেন ১১৪ জন।
ডা. আবদুর রব বলেন, করোনাকে ভয় না করে এটি জয় করার চেষ্টা করেছি। মানুষের সেবা করার সুযোগ সব সময় আসে না। এটা ভেবে কাজ করে গেছি। পরিবার দূরে থাকায় অনেক সময় মন খুব খারাপ হয়। কিন্তু ১০০ রোগীর মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ মনে এলে ভুলে যাই সব দুঃখ-কষ্ট।
এত রোগীর সংস্পর্শে এসেও নিজেকে সুস্থ রেখেছেন কীভাবে? তিনি বলেন, নিয়ম-কানুন মেনে রোগীর সেবা করা যায় নিরবচ্ছিন্নভাবে। এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে ছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি নিবিড়ভাবে। ওষুধ দিয়েছি। পরীক্ষা করিয়েছি। ছাড়পত্রও দিয়েছি। কিন্তু আমার কোনো কোয়ারেন্টাইন লাগেনি। নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকি। আসলে ইচ্ছাশক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোনো কিছু অন্তর দিয়ে অনুধাবন করলে বাধা হবে না অন্য কিছু। ডা. আবদুর রবের জন্মস্থান চট্টগ্রামের সন্দীপের মগধরা ইউনিয়ন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়