এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের ৮০ লাখ পরিবার জ্বালানি দারিদ্র্যের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাকশন। এই বাস্তবতায় জ্বালানি ব্যয় দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর মূল উদ্বেগ হওয়া উচিত বলে মনে করে দেশটির বিদ্যুৎ কোম্পানি অক্টোপাস এনার্জি। এই বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যরা গত মাসে সামাজিক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
সামাজিক শুল্কের অর্থ হলো নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে জ্বালানি বাবদ বিশেষ ছাড় দেওয়া। কর সংগ্রহ বা ভর্তুকির ব্যয়ভার সচ্ছল করদাতাদের ওপর চাপিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে গত সপ্তাহে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে ইউরোপে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে যায় এই আশঙ্কায় যে বার্ষিক জ্বালানির ব্যয় আরও বছর দুয়েক গড়ে ৩ হাজার ৫০০ পাউন্ডের ওপরে থাকবে।
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ এমপিরা সামাজিক শুল্কের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এতে অরক্ষিত ক্রেতারা কিছুটা সুরক্ষা পাবেন। এই প্রস্তাবে ব্রিটিশ সরকারের অর্থ সাশ্রয়বিষয়ক পরামর্শক মার্টিন লুইসের সমর্থন আছে। ফলে এমপিরা হালে পানি পেয়েছেন।
ইংল্যান্ডের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জরুরি পরিষেবার মূল্য নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার জন্য আন্দোলন করে ফেযার বাই ডিজাইন। তারা এই সামাজিক শুল্কের রূপরেখা দিয়েছে। যেসব পরিবার ১০ শতাংশের বেশি জ্বালানি বাবদ ব্যয় করছে, তাদের এই তালিকার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তাদের ভাষ্য, এই মুহূর্তে নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য জ্বালানি বাবদ বছরে এক হাজার পাউন্ড ভর্তুকি দেওয়া উচিত।
ব্রিটেনের সরকার জ্বালানির দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। দর নির্ধারণের আগে কিছু কিছু জ্বালানি কোম্পানি সামাজিক শুল্ক দিত। তবে বিষয়টি সর্বজনীন ছিল না, আর কীভাবে তা দেওয়া হবে, সেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির হাতে ছিল। সে জন্য তাদের প্রস্তাব, এবার তা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারণ করা হোক, যাতে সব সরবরাহকারী একই হারে তা দিতে পারে।
এ ধরনের শুল্ক ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামে কয়েক বছর ধরেই বিদ্যমান। বছরের শুরুর দিকে জ্বালানির ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাসেলস বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়, যেমন নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার ও এককালীন অর্থ পরিশোধ। ব্রাসেলস এই সামাজিক শুল্কের আওতা বৃদ্ধি করতে চায়। এতে সেই পরিবারগুলোর সাশ্রয় হবে ১ হাজার ৪৮০ পাউন্ড।
তবে ব্রিটেনের জ্বালানি কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে একমতে আসতে পারেনি। বড় চারটি কোম্পানি ব্রিটিশ গ্যাস, ইডিএফ এনার্জি, স্কটিশ পাওয়ার এবং ইওএন মোটাদাগে এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। তবে অনেকের আশঙ্কা, এতে জ্বালানির নির্ধারিত মূল্যের সীমা উঠে যেতে পারে। অর্থাৎ জ্বালানি কোম্পানিগুলো কিছু মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে এই প্রচারণায় গদগদ হতে পারে যে তারা গরিবদের সাহায্য করছে। আবার সরকারের কাছ থেকে তারা এই ভর্তুকির ক্ষতিপূরণ নিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও আছে।
দ্য গার্ডিয়ান–এর তথ্যানুসারে, এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো, এটা কে পরিচালনা করবে, তা স্পষ্ট নয়। সরবরাহকারীদেরই যদি এটা চালাতে হয়, তাহলে সরকারের পেনশন ও বিভাগের সঙ্গে তাদের তথ্য ভাগাভাগির জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। তা না হলে দেখা যাবে, যাঁদের প্রয়োজন নেই, তাঁরাও অনেকে এই ভর্তুকি পাচ্ছেন আর যাঁদের প্রয়োজন আছে, তাঁদের অনেকে পাচ্ছেন না। তাই সব ধরনের জটিলতা এড়ানোর লক্ষ্যে বিশ্লেষকদের প্রস্তাব, ব্রিটিশ সরকারের জ্বালানি বিভাগই এটা পরিচালনা করুক। তবে এই প্রস্তাব কনজারভেটিভ পার্টির অনেকের মনঃপূত নয়। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান