এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, এক্সপোজার লিমিট ও বন্ডের বিষয়ে আমরা বেশ কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। অর্থমন্ত্রণালয়ের সাড়া পেলে এবিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো।
সূত্র মতে, এই এক্সপোজারের হিসাব গণনার নীতি পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকগুলোর বন্ডে বিনিয়োগের ১৮ হাজার কোটি টাকা সরাসরি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আসবে। দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য । একই সঙ্গে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা গণনা করা হয় ক্রয়মূল্য অথবা বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ধরে। এই পদ্ধতিতে গণনা করা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা হয়। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণের ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া কোনো ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলে সেটির দর বেড়ে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে গেলেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। এতে বাজারে বিক্রয়ের চাপ তৈরি হয়। আর ব্যাংক যেহেতু বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে, তাই বিক্রির চাপও বেশি থাকে।
আরও জানা যায়, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর বাইরে সরকারের বিল ও বন্ডে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলো, যা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এরপরই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রাইমারি ডিলার নয় এমন বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ট্রেজারি বন্ডে এসব ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ২৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
অপরদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা, আমানত বিমা ট্রাস্টের রয়েছে ১০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর ৩০২ কোটি টাকা, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর ১৮ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।
এছাড়া প্রভিডেন্ট, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ৮ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ফান্ডের ২৫১ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের ২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমার হিসাব গণনার পদ্ধতি পাল্টানোর দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছিলো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এলক্ষ্যে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে বেশ কিছুদিন আগে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন আগামী সপ্তাহ থেকেই এক্সপোজার লিমিটের সুবিধা পেতে পারে পুঁজিবাজার। দীর্ঘদিনের চাহিদা বিনিয়োগ সীমার সমস্যাটি সমাধানের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।