“ফাইনাল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা”

“ফাইনাল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা”


নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলা ঘটনার ২১ বছর পার হলেও শেষ হয়নি বিচারকার্য। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সেই নৃশংস বোমা হামলায় প্রধান টার্গেট ছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। যিনি নিজেও শরীরে এখনো ১৭টি স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন।

গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগ টানা সরকারে থাকলেও চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন সেদিনের হামলায় নিহত আহতদের স্বজনরা। হতাশা জানিয়েছেন এ বোমা হামলার প্রধান টার্গেট ও ভিকটিম সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নিজেও। তুলে ধরেছেন তার অভিব্যক্তি।

শামীম ওসমান জানান, আসলে ১৬ জুন নিয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা তৈরি করা আমার জন্য বেশ কঠিন। আমার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। শুধুমাত্র আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ওই দিন ২০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এর দায় থেকে আসলে কখনই মুক্তি পাব না। তবে যদি বিচারটা সম্পন্ন হতো তবে কিছুটা হলেও আমি ও নিহতের পরিবার তৃপ্তি পেত। তবে আমি বিশ্বাস করি জাতির পিতার কন্যা যেহেতু ক্ষমতায় রয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যেহেতু হয়েছে, একদিন ১৬ জুন মামলার বিচার হবেই।

আলোচিত এই এমপি বলেন, এটা বাংলাদেশের বোমা হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার একটি। এ ঘটনায় ফরিদপুরের মোরসালিন ও মুনতাকিম নামের দুই ভাই ভারতের তিহার জেলে বন্দি আছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘দি হিন্দুস’ এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর জেনেছি। তারা দুই ভাই ভরতের দিল্লির একটি রেলওয়ে স্টেশনে ও একটি বিমানবন্দরে হামলা চালাতে গিয়ে আরডিএক্সসহ (শক্তিশালী বিস্ফোরক) আটকের পর বলেছিলেন- ‘আমাদের প্রাথমিক টার্গেট ছিল শামীম ওসমান ও ফাইনাল টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা’।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ওপর বিস্ময় প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমি সিআইডির সেই তদন্ত কর্মকর্তাকে (পূর্ববর্তী) বলেছিলাম যার নির্দেশে এই বোমা হামলার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে তিনি কিন্তু সরে পড়বেন। জবাবে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন- আমরা তাকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রেখেছি। পরে যখন মামলার চার্জশিট প্রদান করেছে, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি (হুকুমদাতা) কোথায়? তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা জানালেন উনি পলাতক, তখনই বুঝলাম কোথাও না কোথাও গলদ আছে।

তিনি বলেন, আমি পুলিশের কাছে ১৬১-তে জবানবন্দি দিয়েছিলাম, পরে আদালতে গিয়ে দেখলাম যেই কথাগুলো পুলিশকে বলেছি তা সেখানে উল্লেখ নেই। অর্থাৎ মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। আমরা এটিকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে চাই না। যারা এতগুলো মানুষকে হত্যা করে পরিবারগুলোকে এতিম করল, বিধবা করল ও সন্তানহারা করল তাদের বিচার যেন হয়, এইটাই আমরা দেখতে চাই।

বিস্ফোরণ ঘটানো সেই বোমা সম্পর্কে শামীম ওসমান বলেন, আরডিএক্স চারটিখানি কথা না এবং এইটা জোগাড় করাও মুখের কথা না। সুতরাং নিশ্চয়ই এর পেছনে বড় কোনো শক্তি লুকায়িত আছে এবং এটা প্রকাশ পাওয়া উচিত। আমি এখনো শঙ্কায় আছি, ২০০১ সালে তারা যদি আরডিএক্স ব্যবহার করতে পারে, তবে এখন কি ব্যবহার করতে পারে তারা, সেটিই আমার প্রশ্ন। যাতে আর কেউ আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।

১৬ জুন বোমা হামলার বিচার দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসী বন্দি হস্তান্তরের চুক্তি আছে। তদের দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত রয়েছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত করলেই এর নেপথ্যে কারা জড়িত সব কিছুই জানা যাবে। সেই দেশে আমাদের তদন্ত দল গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হোক এবং যেই লোকটি এই প্রেক্ষাপটটা তৈরি করেছিলেন, আমি মনে করি সে অনেক উঁচুমানের একজন জঙ্গিনেতা। এখন পর্যন্ত জানি না সে কোথায় আছে। তার বাড়িঘর তার পরিবার সবাই এখানে আছে। আমার বিশ্বাস তাকে যদি খোঁজ করা হয় তবে এ ঘটনার মূল রহস্য প্রকাশ পাবে। আমি আরেকটা কথা বলতে চাই, এ বিচারে যেন এমন না হয়- ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’।

তিনি বলেন, নিহত অনেককেই অমি নিজে বিয়ে দিয়েছিলাম, তারা অল্প বয়সেই বিধবা হয়েছেন, স্বজন হারিয়েছেন, তাদের কাছে আমি করজোড়ে ক্ষমা চাই। কারণ আমি এতদিন পরেও বিচার করতে পারি নাই।

নারায়ণগঞ্জ জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বলে দাবি করে এই নেতা বলেন, ‘ঢাকার পার্শ্ববর্তী হওয়ায় এবং অনেক ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হওয়ায় জঙ্গি সংগঠনের নিরাপদ জায়গা হিসেবে নারায়ণগঞ্জকে বেছে নেয়। আমি যতটুকু জানি তাদের কাজ হলো ‘হিট অ্যান্ড রান’। বাংলাদেশে যদি দেহ হয় তবে ঢাকা হচ্ছে এর মস্তিষ্ক বা প্রাণ। তাদের টার্গেট তো শেখ হাসিনা। একুশ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে এরাই (জঙ্গিরা) সম্পৃক্ত ছিল এবং এদের পেছনে কারা আছে সেটা জাতি জানে। জাতীয় সংসদের কিছু ঘটনার পর খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আমাকে দেখে নেবেন। সেই দেখে নেওয়া কী এই দেখে নেওয়া কিনা এটাও একটা প্রশ্ন। আজকে যে বিষয়টি ভাববার তা হলো, ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা করে পুলিশ হত্যা করে নিয়ে গেল জেএমবির অন্যতম প্রধান জঙ্গি সালাউদ্দিন ওরফে সালেহিনকে, যার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। ভারতের বর্ধমান ব্লাস্টেও মাস্টারমাইন্ড সাজিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ,  নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নব্য জেএমবির মাস্টার মাইন্ড তামীম চৌধুরীও এখানেই এসেছিল। সম্প্রতি কোটালীপাড়া বোমা হামলার দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হলো ফতুল্লা থেকে। ফতুল্লায় জঙ্গিবাড়ি আবিষ্কার হলো। আশ্চর্যের বিষয় এদের কাউকেই কিন্তু নারায়ণগঞ্জের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা খুঁজে বের করেনি কিংবা গ্রেফতার করেনি; যা করার ঢাকার গোয়েন্দা আর এন্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডই করেছে।

তিনি বলেন, আমি ঢাকার গোয়েন্দা শাখাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন কখনই এ বিষয়ে আমাদের কাছে সাহায্য চাননি এবং র্যা ব ছাড়া তাদের মধ্যেও আমরা তেমন কোনো তৎপরতা দেখিনি। নারায়ণগঞ্জ যেহেতু ঢাকার খুব কাছে এবং এটি অত্যন্ত জনবহুল এলাকা, এখানে কে কোন বেশ নিয়ে বসে আছে, ঢাকার এন্টি টেরোরিজম ইউনিট এ কাজটি করবে এইটা তাদের জন্য খুব কঠিন। আমার মনে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনে এমন নির্ভীক ও যোগ্য লোকের প্রয়োজন যারা নিজ উদ্যোগে দেশকে ভালোবেসে এ ইস্যুতে কাজ করবে। যেহেতু এ ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, সেহেতু আমাদের সামনের দিনে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের শুধু সাবধান না, অতি সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

 












আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু