যেসব কারণে টানা দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে

যেসব কারণে টানা দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে
শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। ঈদের পর থেকে ১৪ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক চার শতাধিক পয়েন্ট হারিয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে লেনদেনের অসন্তোষ। বাজারের অব্যাহত পতনের পেছনে বেশকিছু কারণের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার পতনের পেছনে সরকারবিরোধী চক্রের কারসাজি থাকতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারবিরোধী চক্রটি বিভিন্ন ইস্যুকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময় শেয়ারবাজার নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এটিকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চক্রটি। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়ে কম দামে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের মধ্যে গত রোববার (২২ মে) অর্থমন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে যে কোন মূল্যে শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করার নির্দেশ দেন তিনি। মন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় পরের দিন শেয়ারবাজারে উত্থান হলেও কারসাজি চক্রের দৌরাত্মে তা টেকেনি। পরের দুই কার্যদিবস (২৪ ও ২৫ মে) আবারও মূল্য সূচকের পতন হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দেওয়া তথ্য বলছে, ঈদের পরের ১৪ কার্যদিবসে এক্সচেঞ্জটির প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ৪৫৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। এই ১৪ দিনের মধ্যে মাত্র ৩ দিন সূচক বেড়েছে, বিপরীতে প্রধান সূচক কমেছে ১১ দিন। এর মধ্যে মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে বেশ কয়েকদিন। গত ৫ মে থেকে এখন পর্যন্ত বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৮০২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

শেয়ারবাজারের চলমান অস্থিরতা কাটাতে সম্প্রতি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারপরও বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না কোনভাবেই।

এদিকে পতন ঠেকাতে আজ (বুধবার) আবারও শেয়ারদর কমার সর্বনিম্ন সীমা (সার্কিট ব্রেকার) ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বিএসইসি। এর আগে গত ৮ মার্চও দরপতন ঠেকাতে সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরে গত ৫ এপ্রিল এ সীমা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবারও বৃহস্পতিবার থেকে ২ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাজারের অব্যাহত দরপতনের পেছনে যে চক্রটি কাজ করছে তাদের খোদ ডিএসই’র কিছু অসাধু কর্মকর্তা সহযোগিতা করছেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ দিচ্ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন।

শেয়ারবাজার থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পাঁয়তারা নতুন কিছু নয়। ২০১০ সালে এসে শেয়ারবাজার রাজনীতিকরণের চিত্র অনেকটাই প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় সরকারকে বিপাকে ফেলতে একটি চক্র প্রথমে মোটা অংকের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। ২০১০ সালের মহাধসের সময় বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নিয়ে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে একযোগে শেয়ার বিক্রি শুরু করে চক্রটি।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও এই চক্রটি শেয়ারবাজারে সক্রিয় হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার উপক্রম হলে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চক্রটি শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করে। শেয়ার বিক্রির চাপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ওই সময়ও বড় দরপতন হয় শেয়ারবাজারে।

সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি বেনিফিশিয়ারি হিসাবধারী (বিও) বিনিয়োগকারী তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব বিনিয়োগকারী আগে কখনো একসঙ্গে তাদের পোর্টফোলিও খালি করেননি। ঈদের পরই তারা তাদের সব শেয়ার একসঙ্গে বিক্রি করে দিয়েছেন।

অব্যাহত পতনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় অর্থসংবাদের। এই বিশ্লেষক মনে করেন বাজারের অব্যাহত পতনের পেছনে সরকারবিরোধী চক্র হয়তো পরোক্ষভাবে কাজ করছে।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিয়ে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বিনিয়োগ বান্ধব। এরপরও বাজারের পতনের বিষয়টি সন্দেহজনক। হয়তো কোন বিশেষ একটা গোষ্ঠী এর পেছনে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করছে, যারা সরকারবিরোধী।

তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে যে তারল্য সংকট ছিল তা হয়তো সরকারের সাম্প্রতিক নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে শীঘ্রই বৃদ্ধি পাবে। তবে বর্তমানে শেয়ারবাজারে পতনের পেছনে সরকারবিরোধী চক্রের কারসাজি আছে কিনা তা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিৎ।

তবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রোজার্ড ডি রোজারিও বাজারের পতনের পেছনে ‘কারসাজি’কে দায়ী করছেন না। তিনি বলেন, বাজারে ভলিউম (শেয়ার) সেল কম হচ্ছে। বাজারে এখন ক্রেতার সংকট। যে পরিমাণ ভলিউম ট্রেড হচ্ছে তাতে কারসাজির সুযোগ নেই। বর্তমান শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি কিন্তু মার্কেট রিলেটেড না, টোটাল ইকোনমি রিলেটেড।

তিনি বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের যে অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের মনে ভীতি তৈরী করছে। ফলে মার্কেটে পতন হচ্ছে। এসব ভীতি দূর হয়ে গেলে মার্কেটও পরিবর্তন হবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে দরপতন হচ্ছে তা পরিকল্পিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির যে টানাপোড়েন ছিল তাও অনেকটা সমাধানের পথে। বাজারে পতন ঘটিয়ে সরকারকে বিব্রত করার জন্য একটি কুচক্রী মহল শেয়ারবাজারে সক্রিয় রয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত আছে। এছাড়া বাজারের পতনের পেছনে আর কোন কারণ বর্তমানে নেই।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত