পাকিস্তানি দুই ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক

পাকিস্তানি দুই ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক
বেশিরভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও পাকিস্তানি দুই ব্যাংকের জন্য বদনামের কাদা লেগেছে পুরো বিদেশি ব্যাংকিং খাতে। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ৯টি ব্যাংকের বেশির ভাগেরই খেলাপি ঋণ ১-২ শতাংশের মধ্যে সিমিত। কিন্তু ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান’র (এনবিপি) আর্থিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক।

ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের প্রায় শত ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাকিস্তানি ‘হাবিব ব্যাংক’র খেলাপি ঋণও ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। পাকিস্তানি দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের উচ্চ হার ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশি খাতকে অস্থির করে তুলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পাকিস্তানি ব্যাংক। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, প্রায় শতভাগ খেলাপি ঋণ নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান কীভাবে এখানে ব্যাংক-ব্যবসা করছে। নাকি এর পেছনে অন্য কিছু আছে? এ রোগ দ্রুত না সারলে ব্যাংক খাতের ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৩৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৯১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬.০১ শতাংশ। কিন্তু মোট খেলাপির বেশিরভাগই ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান’র।

ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ৯৮ দশমিক ১২ শতাংশ। প্রায় শতভাগ খেলাপি ঋণ নিয়েও বাংলাদেশে টিকে আছে ব্যাংকটি। পাকিস্তানের অপর ব্যাংকের নাম ‘হাবিব ব্যাংক লিমিটেড’। সেপ্টেম্বর শেষে হাবিব ব্যাংকের মোট বিতরণ ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ‘কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন’র খেলাপি ঋণ মাত্র ১.১৭ শতাংশ, এইচএসবিসির ১.৬০ শতাংশ ও সিটি ব্যাংক এনএ’র ১.৮৫ শতাংশ। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ২.১৭ শতাংশ, উরি ব্যাংকের ৩.১৫ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৩.১৮ শতাংশ এবং ব্যাংক আল ফালাহর খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪.০২ শতাংশ।

ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এনবিপি) যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের করাচিতে। বাংলাদেশে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৪ সালের আগস্টে। প্রথমে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে প্রধান শাখা খোলা হয়। এরপর ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে খোলা হয় দ্বিতীয় শাখা। সর্বশেষ ২০০৮ সালের প্রথমার্ধে সিলেট ও ঢাকার গুলশানে তৃতীয় ও চতুর্থ শাখা খোলা হয়।

বাংলাদেশে যাত্রার শুরুতে কয়েক বছর মুনাফার মুখ দেখলেও এরপর থেকে লোকসানে পড়ে এনবিপি। বছরের পর বছর সেই লোকসান বেড়েই চলেছে, আর অজ্ঞাত কারণে তা বয়ে চলেছে পাকিস্তান সরকার। ২০১০ সালে ব্যাংকটির লোকসান ১৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ৩২ লাখ টাকা মুনাফা করলেও পরের বছরে ১৩৭ কোটি টাকা লোকসান হয়।

২০১৩ ও ২০১৪ সালে যথাক্রমে ১১৬ ও ৩১২ কোটি টাকা লোকসান করে ব্যাংকটি। ২০১৫ সালে লোকসান হয় ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে লোকসান আড়াই কোটি টাকা। ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও বড় অঙ্কের লোকসান দিয়েছে এনবিপি। পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও বড় ধরনের ঋণ ঝুঁকিতে পড়েছে এ ব্যাংকটি।
এ মুহূর্তে বিদেশি ৯টি ব্যাংকের মধ্যে এনবিপির অবস্থান তলানিতে। খেলাপি ঋণের হারে দেশের ব্যাংক খাতের শীর্ষে অবস্থান করছে এ ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, মূলত ২০০৭ সাল থেকে এনবিপি’র বাংলাদেশ শাখায় সমস্যা শুরু হয়। এরপর থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে ব্যাংকটির। তখন এ সংক্রান্ত ১৯টি অভিযোগ ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্যাংকটির শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির কাছে আটকে আছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

যেসব খাতে ব্যাংকটির ঋণ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে সুতা, খাদ্য, ওষুধ, চামড়া, কেমিকেল, কসমেটিকস, সিমেন্ট, সিরামিকস, সেবা ও যোগাযোগ। ঋণের অধিকাংশই দেয়া হয় ব্যাংকটির গুলশান শাখা থেকে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
বিকাশের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহফুজ মারা গেছেন
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদের ৩ কমিটি গঠন
ব্যাংকে চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শিথিল
মাসিক সঞ্চয় হিসাব খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে
ফের এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন
অফিসার পদে ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে সরকারি ৫ ব্যাংক
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালক হলেন যারা