ট্রেনের টিকিট যেন ‘সোনার হরিণ’, রাতদিন অপেক্ষা

ট্রেনের টিকিট যেন ‘সোনার হরিণ’, রাতদিন অপেক্ষা
শনিবার রাত ৩টা। মানুষে ঠাসা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টার চত্বর। সেখান থেকে সড়কে ঠেকেছে টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন। গোটা এলাকা লোকে লোকারণ্য। অধিকাংশ লোক সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সঙ্গে আনা খাবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছিলেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, মধ্যরাত থেকে শুরু করে সারা দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অধিকাংশের কপালে জুটছে না ট্রেনের টিকিট। এ যেন ‘সোনার হরিণে’ পরিণত হয়েছে। কারণ, শুধু সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলের জন্য আন্তঃনগর (আটটি ট্রেন) ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে কমলাপুর থেকে। একেকটি ট্রেনে গড়ে ৭০০ টিকিট হলে, সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬০০টিতে। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ২৮০০ টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে (রোববারের)। লাইনে দাঁড়ানো ৯৫ শতাংশ লোকই গড়ে চারটি করে টিকিট কাটেন। সেই হিসাবে মাত্র ৭০০ লোক টিকিট পাওয়ার কথা। কিন্তু, রাত ৩টায় স্টেশনে লোকের সংখ্যা ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার। তা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ থেকে ৩০ হাজারে।

শনিবার রাতে ও রোববার সকালে সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এদিনে (রোববার) ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়। আজ ২৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। আরও জানা গেল, এবার ঈদযাত্রায় ট্রেনের ওপর চাপ পড়বে ভয়াবহ। গত দু’বছর ঈদযাত্রায় যারা ট্রেনে চড়েনি, এবার তারা পণ করে বসেছে। হাতে টিকিট আসুক, না আসুক-প্রয়োজনে ট্রেনে ঝুলে বাড়ি ফিরবেন। আসন সংখ্যার প্রায় শতগুণ বেশি যাত্রী স্টেশনে আসছেন টিকিটের আসায়। অধিকাংশই টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য-কোনো ঈদেই বিনা টিকিটি রোধ করা সম্ভব হয় না। ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনের দু’পাশ, দু’বগির সংযোগস্থলসহ দরজা-জানালায় ঝুলে বাড়ি ফেরে যাত্রীরা। এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে বিনা টিকিটে ওঠা যাত্রীদের জোর করে ট্রেন থেকে নামানোও সম্ভব হয় না। বিভিন্ন কৌশলে যাত্রীরা ট্রেনে উঠে পড়ে।

শনিবার ৩টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত লোক স্টেশন কাউন্টার, চত্বর ঘিরে লাইন করে বসে আছেন, কেউ আবার ঘুমিয়ে আছেন। কথা হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল আন্তঃনগর (আটটি ট্রেন) ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ২৭ ও ২৮ এপ্রিল রাজধানীর কমলাপুরসহ বাকি চারটি স্টেশনে মোট টিকিটের অর্ধেক ১৩ হাজার ৩৫৬টি কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত দুটি স্পেশাল ট্রেনের টিকিট যুক্ত (৭০০ টিকিট) হয়ে ১৪ হাজার ৫৬টি হবে।

গোপীবাগ রেলগেট এলাকা থেকে আসা নূরুন্নাহার জানান, তার পরিবারের পাঁচজন রংপুর যাবেন। এক ননদ গর্ভবতী, শাশুড়িও অসুস্থ। দেখুন এজন্যই এ শিশু (দুই বছর) নিয়ে রাত ১টার সময় স্টেশনে এসেছি। সঙ্গে স্বামীও এসেছেন। আপনি কেন এলেন? ছেলেদের লাইন সড়ক পর্যন্ত, শনিবার দুপুর থেকেই ২৮ এপ্রিলের টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে পুরুষরা। মধ্য রাতে এসে যদি স্বামী লাইনে দাঁড়ায় তাহলে আগামী তিন দিনেও টিকিট পাবে না। তাই বাধ্য হয়ে নারীদের লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। চিন্তায় আছেন, টিকিট পাবেন কিনা। কারণ তিনি প্রায় তিন শতাধিক নারীর পেছনে আছেন। অনেক নারীর সঙ্গেই পুরুষ স্বজন এসেছেন। প্রিয় মানুষটিকে (নারী) লাইনে দাঁড় করিয়ে সহজে টিকিট পান, সেই আশায়।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী জমিরউদ্দিন জানান, শনিবার দুপুরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইফতার কিনতে লাইন ছেড়ে যাওয়ায় স্থানটি হারান তিনি। পরে রাস্তায় এসে দাঁড়ান। টিকিট কাটা যে কত কষ্ট তা হারে হারে টের পাচ্ছেন। জীবনে কখনো এমন কষ্ট করেননি তিনি। তবু টিকিট কাটতে হবে, বাবার পায়ে অপারেশন হয়েছে, মাও ঢাকায়। বড় ভাই ঢাকায় থাকেন। ভাইয়ের বাসায় উঠেছেন মা-বাবা। তাদের নিয়ে রংপুর যাবেন, ট্রেনই একমাত্র ভরসা। সড়ক পথের কথা শুনলেই বাবা কাঁদতে থাকেন। তাই ট্রেনের টিকিটের জন্য যুদ্ধ করছি। শুধু জমিরউদ্দিন নন, এমন অসংখ্য ভুক্তভোগী আছেন, যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে আছেন। দুটি কয়েল জ্বালিয়ে শুইয়ে ছিলেন দুই যুবক। স্টেশনে এসে পরিচয়। সেহরি খেয়েছেন তারা একই প্যাকেটে করে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলেন লায়না আক্তার নামে এক গৃহবধূ। বললেন, কাউন্টারের সামনে, উপরে ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। প্রচণ্ড গরম সহ্য করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পাড় করছেন। অনেকে জানিয়েছেন, অনলাইনে টিকিট না পেয়ে সোমবারের টিকিট কাটতে স্টেশনে এসেছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট ছাড়া হয়। স্টেশনে বসেও শত শত লোক অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলেন।

টিকিট প্রত্যাশীদের মন্তব্য-হাজার কষ্টের পরও মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। নাড়ীর টান, প্রিয় মানুষের টান, বুঝি এমনই হয়। কোনো কষ্টই কষ্ট মনে হয় না। সাধারণ মানুষ জানতে পারছেন, আসন সংখ্যা কম। সব কিছু দেখছেনও, তার পরও শত শত লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মানুষ বুঝতে পারছেন যে রাতে যারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তাদেরই অনেকে টিকিট পাবেন না। তবু ভোর রাত থেকে স্টেশনে শত শত লোক এসে যুক্ত হন।

রোববার কমলাপুরসহ ফুলবাড়িয়া, বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি হয়েছে। আজ থেকে দুটি স্পেশাল ট্রেনের টিকিটও বিক্রি হবে। তবে স্পেশাল ট্রেনের টিকিট শুধু কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। রেলওয়ে কর্মকর্তা জানান, ঈদ যাত্রায় ২৭ এপ্রিল থেকে শুধু যাত্রার দিন যাত্রীদের অনুরোধে ২০ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি হবে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়