রিজার্ভ ব্যবহারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রিজার্ভ ব্যবহারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে আপাতত নতুন করে সরাসরি কোনো ঋণ দেওয়া হবে না। কারেন্সি সোয়াপের (সাময়িক ঋণ) আওতায় শ্রীলংকাকে দেওয়া হবে না কোনো নতুন ঋণও। তবে বাড়ানো হবে আগের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানিও নিরুৎসাহিত করা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স কমায় দেশের রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় গত আগস্ট থেকে লাগামহীনভাবে বাড়ছে। প্রায় ৫ মাস ধরে রেমিট্যান্স কমছে। এর প্রভাবে রিজার্ভও কমে গেছে। এদিকে করোনার সময়ে স্থগিত এলসি ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। এজন্য রিজার্ভ ব্যবহারে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লিখিত পদক্ষেপ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রিজার্ভ আছে ৪ হাজার ৪২৪ কোটি ডলার। আগে যা ছিল সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এছাড়া ইতঃপূর্বে রিজার্ভ যেখানে প্রতিমাসে বেড়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করত, এখন সেখানে আর বাড়ছে না, বরং কমছে।

এদিকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক নিরাপদ মান অনুযায়ী ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকলেই তা নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ায় এবং বর্ধিত খাদ্যসামগ্রী আমদানির প্রশ্নে এই রিজার্ভকে স্বস্তির মাত্রায় ধরে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে পড়ে শ্রীলংকা ও লেবাননের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত এসেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানায়, রিজার্ভ থেকে গত বছরের মে মাসে শ্রীলংকাকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছিল। ওই ঋণ শ্রীলংকা শোধ করতে পারেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই ঋণের মেয়াদ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রীলংকা আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশের কাছে। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আপাতত নতুন ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। কেননা ইতোমধ্যেই শ্রীলংকা বৈদেশিক ঋণের দায়ে ডুবতে বসেছে। তবে পায়রা বন্দরকে রিজার্ভ থেকে ৫২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো ঋণের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন করেছে। এর আওতায় যন্ত্রপাতি আমদানি করতে এলসি খোলা হয়েছে। সরকারি একটি ব্যাংক এতে গ্যারান্টি দিয়েছে। রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩ কোটি ইউরো ছাড় করা হয়েছে। এ প্রকল্পের বাইরে রিজার্ভ থেকে আর কোনো নতুন ঋণ নেওয়া হবে না।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে নিত্যপণ্য, শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ছাড়া অন্য সব খাতে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করেছে। ওইসব পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেননা গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি বেড়েছে ৫২ শতাংশের বেশি। এলসি খোলা বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আমদানির অপেক্ষায় থাকা অনিষ্পন্ন এলসি বেড়েছে ১ হাজার ২২৩ ভাগ।

এছাড়া রেমিট্যান্স কমায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সংকট অব্যাহত রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থে এখন আর আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না। গত অর্থবছর পর্যন্ত কেদ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলারের জোগান দিয়ে টাকার মান ধরে রাখতে সহায়তা করছে। গত অর্থবছরে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বেশি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭৯৪ কোটি ডলার কিনেছিল। তবে বিক্রি করে মাত্র ২৩ কোটি ডলার। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের গত মার্চ পর্যন্ত বাজার থেকে কোনো ডলার কেনেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উলটো ৭৯৪ কোটি ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার একটি সীমা দেওয়া আছে, যা ওপেন পজিশন লিমিট হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি ব্যাংককে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর সময় ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে জানাতে হয়। পরদিন ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর আগে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার সীমা অতিক্রম করা যাবে না। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ব্যাংক তার মোট পরিশোধিত মূলধনের ৫ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা রাখতে পারে। সুতরাং বেশি থাকলে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করতে হবে। অন্যান্য ব্যাংক না কিনলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনে। আবার টাকার মান ধরে রাখতে বা আমদানি দেনা মেটাতে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে তারা ডলার বিক্রি করে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমেছে। এতে বাড়ছে ডলারের দাম। এখন প্রতি ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করছে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা দরে। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করছে ৮৭ থেকে ৮৮ টাকা করে। নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯০ থেকে ৯৩ টাকা করে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ